দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ঘরে তুলেছে ভারত। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার (০৯ মার্চ, ২০২৫) অনুষ্ঠিত ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। এক যুগ পর ফের এই ট্রফির স্বাদ পেল তারা। এটি ছিল ভারতের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা।

শিরোপার সঙ্গে বিশাল অঙ্কের প্রাইজমানি যোগ হয়েছে ভারতের ঝুলিতে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিজয়ী দল হিসেবে তারা পেয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা (ডলারপ্রতি ১২২ টাকা হিসাবে)।

ফাইনালে হেরে রানার্স-আপ হওয়া নিউ জিল্যান্ডও পেয়েছে মোটা অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার। রানার্সআপ হওয়ায় তারা পেয়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার ডলার বা প্রায় ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

আরো পড়ুন:

অবসর ভেঙে ফিরেই ২৮ বলে ১৫ ছক্কায় ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরি

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে পাকিস্তানের প্রতিনিধি না থাকায় অসন্তোষ

আইসিসি আগেই ঘোষণা করেছিল যে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রাইজমানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। শেষবার এই টুর্নামেন্ট হয়েছিল ২০১৭ সালে। ৮ বছর পর হওয়া এবারের আসরে পুরস্কারের পরিমাণ ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাকি দলগুলোর প্রাপ্তি কত?
সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার করে।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান পাওয়া দল পেয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার করে।
সপ্তম ও অষ্টম স্থান অধিকারীরা পেয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার করে।
প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী দল পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার করে।  

বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেমন?
আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খুব একটা খারাপ যায়নি। তিন ম্যাচে দুই হারে ও এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। তবে অংশগ্রহণ ফি’র পাশাপাশি কোনো জয় ছাড়াই বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্ত প্রাইজমানি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ