আদিবাসীদের সামাজিক উৎসবগুলোতে ছুটির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
Published: 11th, March 2025 GMT
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব চাংক্রান, সাংগ্রাই, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংগ্রাইং, থাংগ্রেন, বিঝু উপলক্ষে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ছুটিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে ১২টি আদিবাসী ছাত্র সংগঠন।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএসসি ঢাকা মহানগরের নুমং প্রু মারমার সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি।
লিখিত বক্তব্যে অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আবহমান কাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাংখোয়া, চাক, খুমি, লুসাই, ম্রো, বম, খেয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা, অহমিয়া, গুর্খা ও সান্তাল—এই ১৪টি ভিন্ন ভাষার আদিবাসী জাতির বসবাস। তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও রীতি বাঙালি জাতি থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র। বাঙালির যেমন নববর্ষ উৎসব রয়েছে, তেমনি পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীও বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন নামে প্রধান সামাজিক উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি এবং নতুন বছরকে বরণ উদ্যাপন করে আসছে। উৎসবটিকে ম্রোরা চাংক্রান, চাকরা সাংগ্রাইং, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাই, চাকমারা বিজু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী রাখাইনরা থাংগ্রেন নামে স্বকীয় ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদ্যাপন করে থাকেন।
বাংলাদেশে আদিবাসীদের প্রধান এই সামাজিক উৎসবটি উপলক্ষে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি–বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা, সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী ও কলকারখানার শ্রমিকেরা পরিবারের সঙ্গে উৎসবটি উদ্যাপন করার সুযোগ থেকে বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে শহরে বসবাসরত আদিবাসী শিশু ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। অথচ বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের জন্য প্রতিবছর সরকারি–বেসরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়া।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বিঘ্নে উৎসব উদ্যাপনের তাগিদে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো এই উৎসবের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা ও কোনো ধরনের পাবলিক পরীক্ষা না রাখতে দাবি জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিলেও কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু ক্লাস–পরীক্ষার রুটিন দিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার চালু রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা; উৎসবের সময় এসএসসি ও এইচএসসিসহ কোনো পাবলিক পরীক্ষা না রাখা; উৎসবের সময় দেশের সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিতসহ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আদিবাসী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি প্রদান এবং উৎসবের সময় দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত আদিবাসী শ্রমজীবীদের ছুটি দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, ঢাকায় ম্রো শিক্ষার্থী পরিবারের পায়া ম্রো, বাংলাদেশ চাক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক উথান চাক, টিএসএফের কর্ণজ্যোতি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের সদস্য স্নেহলাল তঞ্চঙ্গ্যা, বম ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে লাললিং বম, বাংলাদেশ খুমি স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সদস্য সাংখেঅং খুমি ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম জ ক উৎসব ব সরক র উৎসব র
এছাড়াও পড়ুন:
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সমবায় খাতকে আধুনিক ও গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, সঞ্চয় ও ঋণদান এবং কুটিরশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
আরো পড়ুন:
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
শনিবার (১ নভেম্বর) ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো ১ নভেম্বর, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সকল সমবায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “দেশ ও জনগণের উন্নয়নে গৃহীত যেকোনো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত অপরিহার্য। সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ আমরা অনায়াসে করতে পারি। সমবায় সমিতিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয় বরং সমাজের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম।”
তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি নতুন বাংলাদেশ।”
প্রধান উপদেষ্টা ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/সাইফ