শেষ হলো ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিতর্ক উৎসব
Published: 11th, March 2025 GMT
যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ও বক্তব্য খণ্ডনের দারুণ উপস্থাপনায় শেষ হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিতর্ক উৎসব ২০২৪-২০২৫। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীলফামারীর জলঢাকার ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রানার আপ হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এবং ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব সোমবার (১০ মার্চ) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।
চূড়ান্ত পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল নারীর ক্ষমতায়নে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চাইতে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিতার্কিকরা নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ, বাস্তব উদাহরণ এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে। এ সময় প্রতিযোগী দুটি দলের মধ্যে যুক্তি-পালটা যুক্তি আর বক্তব্য খণ্ডনের মনোজ্ঞ উপস্থাপনা উপভোগ করেন উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথি, বিচারকমণ্ডলী এবং দর্শকরা।
আরো পড়ুন:
ইনানীতে সেনাপ্রধান
প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়া আয়োজন সুস্থ জাতি গঠনে সহায়তা করবে
খুলনার রূপসা নদীতে নৌকা বাইচ দেখল হাজারো মানুষ
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান।
বিতর্ক প্রতিযোগিতা সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট বিতার্কিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা.
বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে মৌটুসী কবীর বলেন, “তোমাদের কণ্ঠ শুধু বিতর্কে আবদ্ধ না রেখে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন সকল কিছুর বিরুদ্ধে সোচ্চার রাখতে হবে।”
সাফি রহমান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিতর্কের মতো সৃজনশীল কাজে যুক্ত হওয়া জরুরি। এজন্য তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকমণ্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ডা. আব্দুন নূর তুষার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের চিন্তার পরিধি বিস্তারের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, “বিতর্কে শুধু তথ্য উপস্থাপনেই সীমাবদ্ধ না থেকে, নিজেদের চিন্তাভাবনাকে যুক্তি ও তর্কের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে।”
নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে ১৩টি ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬১৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যার মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছিল মেয়ে শিক্ষার্থী। পুরো প্রতিযোগিতাটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়—প্রথমে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক রাউন্ড, এরপর আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জেলাভিত্তিক সেমিফাইনাল এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর সেরা দুটি দল চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়।
ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনা ও আত্মপ্রকাশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্র্যাক ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যাতে দেশের আরও বেশি শিক্ষার্থী যুক্তিতর্কের মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি প্রকাশের সুযোগ পায়।
ঢাকা/হাসান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’