কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে তহবিলসংকটের মুখে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম–সংশ্লিষ্ট একাধিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আরও আড়াই হাজারের বেশি কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে শিক্ষাকেন্দ্র আছে চার হাজারের বেশি। সব কেন্দ্র বন্ধ হলে চার লাখের বেশি শিশুর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা জানান, গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অনুদান বন্ধের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান স্থগিত করায় ২০টির বেশি এনজিও ইতিমধ্যে তাদের কয়েক শ কর্মী ছাঁটাই করেছে। আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি প্রকল্পসহ উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গত এক মাসে ২৩টি আশ্রয়শিবিরে ১ হাজার ৪০০টির বেশি শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে চার লাখ রোহিঙ্গা শিশুর পড়ালেখার চার হাজার লার্নিং সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এ পর্যন্ত কতটি বন্ধ হয়েছে তার পরিসংখ্যান বলা যাচ্ছে না। অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্রও বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো চালু রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

মাদক–সন্ত্রাসে জড়ানোর শঙ্কা

এনজিও সংস্থার তহবিলসংকট এবং রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আরআরআরসির কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আশ্রয়শিবিরগুলোতে কয়েক লাখ শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে। লাখো শিশু অপুষ্টির শিকার হবে। আশ্রয়শিবিরে চুরি–ডাকাতি ও খুনোখুনি বেড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কিশোর ও তরুণ মাদক–সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়তে পারে।

আট বছরে জন্ম ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু

বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়শিবিরগুলোতে পরিবার–পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলেও শিশু জম্মের হার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহ কম। আশ্রয়শিবিরগুলোয় প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে গড়ে ৯৫ শিশু। বছরে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারের বেশি। এ হিসাবে গত আট বছরে জন্ম নিয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু। তহবিল কমে যাওয়ায় এই শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষা অনেকাংশেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা। তাতে শরণার্থীদের পরিবার পরিকল্পনাসহ সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম কক্সবাজারের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী আবদুস শুক্কুর প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যসহায়তা কাটছাঁট করা হলে প্রতি মাসে একজন রোহিঙ্গার জন্য বরাদ্দ থাকবে ২৬ টাকা। এই টাকা দিয়ে ক্ষুধা মেটানো রীতিমতো অসম্ভব।

এর বাইরে শিশুর পুষ্টি, পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের বিকল্প আয়ের পথ বা উপায় দরকার; কিন্তু আশ্রয়শিবিরে তেমন কাজকর্ম নেই। ফলে শিশু-কিশোরেরা পাচারের শিকার হবে, শিশুশ্রম বেড়ে যাবে। বাড়বে অপরাধও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র বন ধ তহব ল সরক র এনজ ও

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ