রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ১ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ, ঝুঁকিতে ৪ লাখ রোহিঙ্গা শিশু
Published: 12th, March 2025 GMT
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে তহবিলসংকটের মুখে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম–সংশ্লিষ্ট একাধিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। আরও আড়াই হাজারের বেশি কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে শিক্ষাকেন্দ্র আছে চার হাজারের বেশি। সব কেন্দ্র বন্ধ হলে চার লাখের বেশি শিশুর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা জানান, গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) অনুদান বন্ধের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান স্থগিত করায় ২০টির বেশি এনজিও ইতিমধ্যে তাদের কয়েক শ কর্মী ছাঁটাই করেছে। আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি প্রকল্পসহ উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গত এক মাসে ২৩টি আশ্রয়শিবিরে ১ হাজার ৪০০টির বেশি শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে চার লাখ রোহিঙ্গা শিশুর পড়ালেখার চার হাজার লার্নিং সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এ পর্যন্ত কতটি বন্ধ হয়েছে তার পরিসংখ্যান বলা যাচ্ছে না। অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্রও বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো চালু রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
মাদক–সন্ত্রাসে জড়ানোর শঙ্কা
এনজিও সংস্থার তহবিলসংকট এবং রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন আরআরআরসির কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সিদ্ধান্তের ফলে আশ্রয়শিবিরগুলোতে কয়েক লাখ শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে। লাখো শিশু অপুষ্টির শিকার হবে। আশ্রয়শিবিরে চুরি–ডাকাতি ও খুনোখুনি বেড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কিশোর ও তরুণ মাদক–সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়তে পারে।
আট বছরে জন্ম ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু
বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে, সরকারি উদ্যোগে আশ্রয়শিবিরগুলোতে পরিবার–পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলেও শিশু জম্মের হার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহ কম। আশ্রয়শিবিরগুলোয় প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে গড়ে ৯৫ শিশু। বছরে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারের বেশি। এ হিসাবে গত আট বছরে জন্ম নিয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু। তহবিল কমে যাওয়ায় এই শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষা অনেকাংশেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা। তাতে শরণার্থীদের পরিবার পরিকল্পনাসহ সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম কক্সবাজারের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী আবদুস শুক্কুর প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যসহায়তা কাটছাঁট করা হলে প্রতি মাসে একজন রোহিঙ্গার জন্য বরাদ্দ থাকবে ২৬ টাকা। এই টাকা দিয়ে ক্ষুধা মেটানো রীতিমতো অসম্ভব।
এর বাইরে শিশুর পুষ্টি, পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গাদের বিকল্প আয়ের পথ বা উপায় দরকার; কিন্তু আশ্রয়শিবিরে তেমন কাজকর্ম নেই। ফলে শিশু-কিশোরেরা পাচারের শিকার হবে, শিশুশ্রম বেড়ে যাবে। বাড়বে অপরাধও।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র বন ধ তহব ল সরক র এনজ ও
এছাড়াও পড়ুন:
ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ
এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।
সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।
ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।
‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।
ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।
খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।
এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরীডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।
প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।
ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।
পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।
বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।
নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউবইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।
ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।
২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।