শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়? বেড়ে উঠতে উঠতে পদে পদে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। এবার বরগুনায় মিলল এমন এক শিশুর খবর। ১০ বছরের এই শিশুটি নিজ বাড়িতে ৩ স্বজন দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল কম্পাউন্ডে এসেও শিকার হয়েছে যৌন নির্যাতনের। এই ঘটনায় এক ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে আটক করেছে পুলিশ। 

শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন, বাবা ভিক্ষুক। দুই বছরের ছোট বোনকে নিয়ে ১০ বছরের এই শিশুটি থাকতো বরগুনার বৈকালীন বাজারের নিজ বাড়িতে। সুযোগ পেয়ে শিশুটিকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেছে তার ৩ স্বজন। যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে পথশিশুর খাতায় নাম লেখায় শিশুটি।

সবশেষ গত ৭ মার্চ রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শিশুটিকে ভয়ংকরভাবে যৌন নির্যাতন করে হাসপাতালের সামনের ঝালমুড়ি বিক্রেতা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ মোসলেম‌ হাওলাদার। ব্যথায় কাতর শিশুটি আশ্রয় নেয় হাসপাতালে। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না নিলেও এক নার্সের মমতায় ব্যথানাশক ওষুধ পায় শিশুটি। তার কাছেই ওই শিশু বর্ননা দিচ্ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই ভিডিওটি হাতে আসে। চার মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে‌ দেখা যায়, মেয়েটিকে একজন নার্স প্রশ্ন করেন কারা নির্যাতন করেছে। তখন ওই শিশু উত্তর দেয়, হাসপাতালের সামনে দাঁড়ি পাকা এক বৃদ্ধ লোক তিনি এই ব্যথা দিয়েছেন। 

শিশুটি বলে “এর আগে আমার বাড়িতে ইসমাইল ভাইয়া আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে। সে সহ তিনজন এমন করেছে।”

ভিডিওটি পাওয়ার পর থেকে সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না‌ মেয়েটির। পরবর্তীতে ৮তলা ভবনে একের পর এক কক্ষ খুঁজে অবশেষে রাত সোয়া তিনটায় পাওয়া যায় শিশুটিকে। পরে বিষয়টি বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিমকে জানালে তিনি হাসপাতালে বরগুনা থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা কামালকে পাঠান। মোস্তফা কামাল মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। 

এসময় নির্যাতনের শিকার শিশু বলে, “এই খারাপ কাজ থেকে বাঁচতে আমি বাড়ি থাকতে পারিনি। মা পাগল, বাবা ভিক্ষা করে খায়। আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে রাস্তায় থাকি। এখন এখানে এসেও আবার সে নির্যাতন।” 

এদিকে এই ঘটনায় রাতভর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করলে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মোসলেম হাওলাদারকে শনাক্ত করে নির্যাতনের শিকার শিশুটি, পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম রাইজিংবিডিকে বলেন, “আপনার মাধ্যমে তথ্য পেয়েছি। এমন মানবিক কাজে সবার সম্পৃক্ত হতে হবে। রাতভর অভিযান চালিয়েছি, সবটাই দেখেছেন।”

এই আপকর্মে জড়িত প্রত্যেকের শাস্তি নিশ্চিত করতে আলাদা টিম গঠন‌ করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝালমুড়ি বিক্রেতা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া স্বজনদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনায় পৃথক মামলার পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা/ইমরান/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরগ ন বছর র ঘটন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ