Samakal:
2025-09-18@03:33:31 GMT

এক টাকায় ঈদের সদাই

Published: 15th, March 2025 GMT

এক টাকায় ঈদের সদাই

লাইনে দাঁড়ানো নিম্ন আয়ের বেশ কয়েকজন মানুষ। সবার হাতে একটি করে এক টাকার কয়েন। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ঈদের মালপত্র কিনতে এসেছেন। এমন মানুষগুলোর মুখে মুখে এখন এক টাকার বাজারের নাম।

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এক টাকায় ঈদের সদাই করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শাশ্বত-৯২ বন্ধু ফোরাম নামে একটি সংগঠন। 

শনিবার সিলেটের গোলাপগঞ্জের একটি বাগানে এই এক টাকার বাজার বসানো হয়। এদিন বিশেষ এই বাজার থেকে শতাধিক পরিবার এক টাকায় ঈদের বাজার করেছেন। এই ফোরাম প্রতিবছর ঈদ ও পূজায় সাধারণ মানুষকে এক টাকায় সদাই করে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এক টাকায় ঈদের বাজারে পুরুষদের জন্য ছিল লুঙ্গি অথবা পাঞ্জাবি। এ ছাড়া ছিল এক প্যাকেট সেমাই। আর নারীদের জন্য ছিল শাড়ি ও এক প্যাকেট সেমাই। এক টাকার বিনিময়ে পছন্দসই লুঙ্গি বা পাঞ্জাবি কিনে নেন সুবিধাভোগীরা। এক টাকায় ঈদবাজার করতে পেরে খুশি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজন।

সুবিধাভোগী মায়া বেগম বলেন, ১ টাকা দিয়ে শাড়ি আর সেমাই পাবো ভাবতে পারিনি। গেল দুই বছর টাকার অভাবে নিজের জন্য কেনাকাটা হয়নি। এক টাকায় পেয়েছেন একটি শাড়ি ও সেমাই। গরিব মানুষ কিছুটা হলেও সবার সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন। পাশেই ছিলেন ছালেহা বেগম, রুবেনা বেগম, নানু মিয়া, কুটি মিয়া, আব্দুর রহমানসহ আরও অনেকেই। তারাও এক টাকায় ঈদের বাজার করতে পেরে আনন্দিত।

নানু মিয়া বলেন, এক সময় এক টাকায় অনেক কিছু মিলত। নিজেও এক টাকা দিয়ে অনেক জিনিস কিনেছি। ৬৫ বছরের জীবনে ১ টাকার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ১ টাকায় লুঙ্গি কিনলাম আমার পছন্দমতো। সঙ্গে দিল এক প্যাকেট সেমাই।

আয়োজক মলয় দত্ত মিঠু বলেন, সমাজের খেটে খাওয়া মানুষ অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। ঈদে তারা নতুন কাপড় কিনতে পারে না,  ভালো-মন্দ খাওয়ার অবস্থাও থাকে না। তাই তাদের এমন উদ্যোগ মানুষের মুখে খুশির হাসি ফোটাতে।

১ টাকার সদাই বিক্রি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্টের (ইমজা) সভাপতি আশরাফুল কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাশ্বত-৯২ বন্ধু ফোরামের সভাপতি ধনঞ্জয় কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক শংকর চক্রবর্তী শংকু, সদস্য মলয় দত্ত মিঠু, অশোক দাস, নিহার কান্তি রায়, সঞ্জিব দত্ত টিটু, ধীমান কান্তি দে, উত্তম পাল সনি, আলভিনা গার্ডেনের পরিচালক আব্দুর রব রুবেল, সাবেক মেম্বার মো.

বশির উদ্দিন প্রমুখ।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক ট ক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ