ফতুল্লায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা, নালিশা ভূমি দখলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি
Published: 15th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে নালিশা ভূমি দখলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মনির হোসেন (৪২) বাদী হয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগপত্র দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, ফতুল্লার কুতুবআইল এলাকার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইউনুস আলী (৬৪), ইউনুস আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম হৃদয় (২৫) এবং ফতুল্লার পশ্চিম লামাপাড়া এলাকার আফতাব উদ্দিন মাদবরের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৫)।
এরআগে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় পশ্চিম লামাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ীর টিনের দেওয়াল ভেঙ্গে ৩টি সাইনবোর্ড তুলে নেয় এবং ১নং বিবাদীর নামে দুটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি প্রদান করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম লামাপাড়া এলাকার মৃত শাহাবুদ্দিন ও ছমিরুন নেসার নিকট থেকে তিনি ও তার ভাই মৃত কফিল উদ্দিন মোল্লার একত্রে ৩ শতাংশ, মৃত রাজ্জাক শিকদারের মেয়ে মোসা.
উল্লেখিত বিবাদীগণ বিগত ২ বছর পূর্ব থেকে তাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করার পায়তারাসহ বিভিন্নসময় তাদের নানা ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি প্রদান করে আসছে। অত:পর তারা এ বিষয়ে মৃত শাহাবুদ্দিন ছেলে মো. গোলাম রব্বানী লাবুকে (৫৫) জানালে তিনি বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ আদালতে দেওয়ানী মামলা নং-২২৩/২৪ দায়ের করেন।
ওই মামলা বর্তমানে চলমান আছে। উল্লেখিত বিবাদীগণ আদালতের আইন অমান্য করে গত ১২ মার্চ রাতে অভিযুক্তরাসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জন বিবাদীদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছুড়ি, চাকু ও চাপাতি নিয়ে তাদের বর্ণিত ঠিকানার বসতবাড়ীতে এসে বাসার বসবাসরত মহিলাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
বিবাদীগণ তাদের বাড়ীর সকল সদস্যদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ীর টিনের দেওয়াল ভেঙ্গে ৩টি সাইনবোর্ড তুলে নেয় এবং ১নং বিবাদীর নামে দুটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি প্রদান করে।
ভুক্তভোগী মনির হোসেন বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর থেকে অভিযুক্ত ইউনুস আলী এলাকায় বিএনপি নেতা পরিচয় দেন। আর তার ছেলে হৃদয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। আর তাদের বাবা ছেলেকে প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম। তাদের কারণে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম হৃদয়কে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বাদীর সঙ্গে কথা হয়েছে তবে এখনো বিবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় নি। এ ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ইনব র ড ল ইসল ম এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।