সারা বিশ্বে বজ্রপাত খুব সাধারণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। যদিও এই প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে প্রতিবছরই অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতকে বলা হয় প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তির মধ্যে একটি। প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও বিশাল মালবাহী জাহাজ থেকে নির্গত সালফার কণার দূষণ বজ্রপাতকে প্রভাবিত করছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

গবেষকদের তথ্যমতে, জাহাজে যখন জ্বালানি পোড়ানো হয়, তখন বাতাসে ক্ষুদ্র অ্যারোসল কণা ছড়িয়ে যায়। এসব কণা মেঘ গঠনের সময় জলীয় বাষ্পকে পানির ফোঁটায় ঘনীভূত করে বরফের স্ফটিক আকারে জমা হয়। ঝড়ের সময় এসব স্ফটিকের মধ্যে সংঘর্ষ বেশি হওয়ায় বৈদ্যুতিক চার্জ উৎপন্ন হয়ে বজ্রপাত তৈরি হয়। নতুন এই তথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। এর ফলে বিভিন্ন শিল্পের দূষণ বৈশ্বিক বজ্রপাতের ধরনকে আসলেই পরিবর্তন করছে কি না, তা–ও জানা সম্ভব হবে।

সিঙ্গাপুর পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত শিপিং এলাকা। আর তাই দেশটির জাহাজ চলার পথে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি দেখা যায়। তবে ২০২০ সালে নতুন একটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বিভিন্ন জাহাজকে সালফার নির্গমন কমাতে বাধ্য করার পর জাহাজ চলাচলের পথে বজ্রপাতের ঘটনা অর্ধেক কমে গেছে। সিঙ্গাপুর বন্দরের কাছেও বজ্রপাতের এ প্রবণতা শনাক্ত করা হয়েছে।

গবেষকদের তথ্যমতে, সালফার নির্গমন হ্রাস করার কারণে এখন জাহাজ থেকে কম পরিমাণে সালফার কণা বায়ুমণ্ডলে জমা হচ্ছে। এর ফলে ঝড়ের সময় মেঘে কম পরিমাণে বরফের স্ফটিক তৈরি হচ্ছে। এতে কম বৈদ্যুতিক চার্জ তৈরি হওয়ায় বজ্রপাত কম শক্তিতে পৃথিবীতে আঘাত হানছে।

সূত্র: বিজিআর

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ