প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা রক্তের টানে মানুষ দূরদূরান্তে পাড়ি জমায়। বারবার ফিরে আসে আপন মানুষের কাছে। মানুষে মানুষে এমন পুনর্মিলন নতুন কিছু নয়; কিন্তু মানুষের টানে পশুপাখি বছরের পর বছর ধরে ফিরে আসে, এমন ঘটনা খুব কমই শোনা যায়।

তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমে বুরসা প্রদেশের কারাকাব এলাকা এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী। সেখানকার স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর কাছে ‘ইয়ারেন’ নামের তাঁর প্রিয় সারস পাখিটি এ বছরও ফিরে এসেছে। এ নিয়ে টানা প্রায় ১৪ বছর এই দুই বন্ধুর পুনর্মিলন ঘটল।

টানা ১৩ বছর ধরে প্রতি বসন্তে এস্কিকারাগাচ গ্রামে ফিরে আসে ইয়ারেন। সেখানে অস্থায়ীভাবে বাসা বানায়। এ সময় পাখিটিকে প্রায় প্রতিবছরই ৬৯ বছর বয়সী মৎস্যজীবী আদেম ইলমাজের নৌকায় দেখা যায়।

এ বছর ইয়ারেন ও তার সঙ্গী নাজলির দুই দিন পর ১৫ মার্চ ওই গ্রামে এসে পৌঁছায়। ইলমাজের মাছ ধরার নৌকায় পাখিটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় কাটায়, যা তাদের পুনর্মিলনকে আরও বেশি আবেগঘন করে তোলে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে পাখিটির বন্ধনকে শক্তিশালী করে তোলে।

ইয়ারেনের ফিরে আসায় ইলমাজ স্বস্তি ও আনন্দের মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ইয়ারেনের আগমনের আশায় ছিলাম আমি। আগের বছরের তুলনায় এবার একটু দেরি করে আসায় আমি অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অবশেষে তাকে দেখার পর আমি আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েছি। ইয়ারেন আমার কাছে শিশুর মতো। প্রতিদিন সকালে আমি তাকে মাছ খাওয়াই।’

তুরস্কের কৃষি ও বনমন্ত্রী ইব্রাহিম ইয়ুমাকলিও ইয়ারেনের প্রত্যাবর্তন উদ্‌যাপন করেছেন। তিনি এই জুটির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে বলেছেন, ‘বসন্ত এসে গেছে এবং অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। এই হৃদয়গ্রাহী পুনর্মিলনের ১৪তম বছর পূর্ণ হলো।’

এই মৎস্যজীবী ও সারস পাখির বন্ধুত্বের অসাধারণ গল্পটি বিশ্বজুড়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ