বর্তমান প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন ধরে যে পরিস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি, দেশে আরেকটি এক–এগারো ঘটানোর কোনো চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র চলছে কি না।

কারণ, দীর্ঘ ১৬ বছর যে ফ্যাসিবাদ আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল, আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, তারা কোনো দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল না। তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল। বৈদেশিক সমর্থন ছিল। দেশের মধ্যে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে শুরু করে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যেও তাদের একটা শক্ত অবস্থান ছিল।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবসা–বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে তাঁর সুবিধাভোগীরা এখনো দেশে অবস্থান করছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি মহল, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি করার জন্য বর্তমান ছাত্র নেতাদের বিভ্রান্ত করছে। ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী বা সরকারের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি করছে।

এখানে আমাদের পরিচিত ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছিলেন, সেই ঘটনাটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাদের সঙ্গে সেনানিবাসে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমন আলাপ–‍আলোচনা করেছিল, বিষয়টি নিয়ে আরও আগে একটি শক্ত প্রতিবাদ দেখানোর দরকার ছিল। সেটি না করে তার বেশ কয়েক দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি, সেটি আসলে অনাকাঙ্ক্ষিত। এরপর ফেসবুকে দেওয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভিডিও বক্তব্য দেখলাম। সেখানে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা নিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁদের যে আলোচনা হয়েছিল, তা নিয়ে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁদের আরও সচেতন, দায়িত্বশীল ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

ছাত্রনেতারা, যাঁরা এ আন্দোলনের পরিচিত মুখ, তাঁদের মনে রাখতে হবে, এখন আর তাঁরা ছাত্র নন। তাঁরা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জায়গায় আছেন। সুতরাং তাঁদের কোন কথায় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, সেটা ভাবা দরকার। এই মুহূর্তে কোনো দল বা রাজনৈতিক নেতাদের এমন কোনো ভূমিকা নেওয়া বা এমন কথা বলা উচিত হবে না, যেটা জাতির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করবে। যেটা জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলবে। এমনটা হলে দেশে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক যাত্রা। যেই যাত্রা বিঘ্নিত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার, তার দোসর এবং বিদেশি প্রভুরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করবে। নানাভাবে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করবে। সেই বিষয়ে যেন আমরা সচেতন থাকি।

নুরুল হক: সভাপতি, গণ অধিকার পরিষদ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।

লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা