জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে অনৈক্যের সুর দেখতে পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই বিভেদ এবং অনৈক্য উসকে দিয়েছে বাংলাদেশের একটি বড় পার্টি, সেটা হলো বিএনপি। অভ্যুত্থানের পরে যদি ইতিহাসে লেখা থাকে, প্রথম কোন দল বাংলাদেশে অনৈক্য জন্ম দিয়েছে? সেটা হলো বিএনপি।’ একে ‘অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা’ উল্লেখ করে এখান থেকে সরে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, লোয়ার হাউসে (নিম্নকক্ষে) পিআর; বিএনপি প্রশ্ন নিয়ে এসেছে, নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত); এগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে বার্গেইন (দর–কষাকষি) করতে চায়—কোথায় ডিসি নিয়োগ দিবে, কোথায় এসপি নিয়োগ দিবে? জাতি যখন সংকটে, এই দুই দল বাংলাদেশকে অন্য একটা সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

গণভোটের প্রসঙ্গ তুলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলে এটি বাংলাদেশের জনগণের বিজয় হবে। তিনি বলেন, ‘এটা তো জামায়াতে ইসলামীর জয় হবে না। এ জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীর কাছে আহ্বান রাখব, ভণ্ডামি বাদ দেন আপনারা। ভণ্ডামি বাদ দিয়ে অন্তরে কী আছে, একটু খুলে বলেন।’

অসুস্থ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান

নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টের বিষয়ে সালাহউদ্দিন সাহেব (সালাহউদ্দিন আহমদ) বলেছেন, কমিশনে যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছে, আমি সেগুলোকে বলব, “নোট অব ডিসেন্ট” নয় “নোট অব চিটিং”। ঠিক এই “নোট অব চিটিং”য়ের মাধ্যমে তারা পুরো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতারণাটা বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র–জনতার কাছে ধরা পড়েছে।’

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ‘ভেটো’ দিয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘অথচ তারা (বিএনপি) একটা সময় এটা চেয়েছিল।’

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিরপেক্ষ হওয়ার প্রস্তাবে বিএনপির ভিন্নমতের সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন। নিরপেক্ষ পিএসসি ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) গঠনের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপিকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এই কুসুম কুসুম প্রেম আপনারা আওয়ামী লীগের সাথে দিয়েছিলেন। এখন জাতীয় পার্টির সাথে দিচ্ছেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “‘নোট অব চিটিং” বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নিবে না। এবং এই “নোট অব চিটিং”য়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিএনপি যে ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাব যে আপনারা এই সব কার্যক্রম থেকে সরে আসুন। নতুনভাবে বাংলাদেশের মধ্যে রাজনীতি করুন।’

‘নিম্নকক্ষে পিআর জামায়াতের ভণ্ডামি’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াত একটা “বাইট” দেওয়ার চেষ্টা করছে যে তারা খুব সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু বিএনপি খারাপ হলেও একদিকে ভালো যে তারা যে সংস্কারের বিপক্ষে, এটা জনগণের সামনে সরাসরি বলে। আর জামায়াত হলো এমন যে মনে বলে সংস্কারের বিপক্ষে; মুখে তারা বলে সংস্কারের পক্ষে। আমরা এখনো সুপারিশমালার কোনো সমাধান করতে পারি.

..তারা নতুন করে মার্কেটে নিয়ে এসেছে গণভোট হবে।’

জামায়াতে ইসলামীকে সঠিক জায়গায় কথা বলার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সঠিক জায়গায় কথা বলুন, বেজাগায় কথা বলিয়েন না। ’৭১–এ আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) উল্টাপাল্টা কাজ করেছিলেন, ’২৪–এ এসে এখন উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য জামায়াতে ইসলামীকে আমরা বলব, গণভোট নিয়ে জনগণের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে, সংস্কারের জন্য নোট অব ডিসেন্টের প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে সমাধানে পৌঁছতে পারি, আদেশটা কীভাবে জারি করা যায়?... সে বিষয়ে আপনার দাবি তোলা উচিত। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে মনে করি, জামায়াত যে দাবিগুলো তুলছে, লোয়ার হাউসের পিআর...এগুলো হলো জামায়াতের ভণ্ডামি, এগুলো হলো কিছু সিটের (আসন) বার্গেনের (দর–কষাকষি) জন্য।’

এনসিপির রাজনীতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা সেই সম্ভাবনার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা দেখছেন, আপনারা বিচার করবেন। পুরো বাংলাদেশ বিচার করবে।’ এনসিপির নেতাদের গাড়ি–বাড়ি অর্জনের অভিযোগও নাকচ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রতীক হিসেবে এনসিপিকে শাপলা বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন।

‘জনতা বঙ্গভবনে যাবে’

দেশবাসী উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তির জন্য গণ–অভ্যুত্থানের সরকারপ্রধান উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত আদেশ জারি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাঁদের আবেদন থাকবে।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার উল্লেখ করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘ডক্টর ইউনূসকে বাংলাদেশের সামনে অতিসত্বর শহীদ মিনারে গিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির আদেশ জারি করতে হবে। যদি সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হয়, তাহলে সেটা আমরা কীভাবে করব, সেটা আমরা বাংলাদেশের জনগণকে আবার রাজপথে দেখিয়ে দিব ইনশা আল্লাহ। আমরা যথেষ্ট উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যে আপনাদের কাছে নীতিমালা এসেছে। আপনারা দ্রুত আদেশ জারি করুন। আমাদের এই উৎকণ্ঠা, বিএনপি অনৈক্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, এটা থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিন। আমরা দ্রুত ইলেকশনের ফেজে (নিবার্চনী পর্বে) ঢুকতে চাই।’

অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কোনো বৈধতা নেই, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘যদি চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) দিয়ে আদেশ দেওয়ার বাংলাদেশে কোনো চেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা বঙ্গভবনে চলে যাবে। আগে গণভবনে গিয়েছিল, নতুন করে যদি এ ধরনের কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়, তাহলে জনতা আবার বঙ্গভবনে যাবে ইনশা আল্লাহ।’

জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র ন ট অব ড স ন ট ন ট অব চ ট ব এনপ র এনস প র জনগণ র অন ক য আহ ব ন র জন ত আপন র সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

উন্নয়নের বয়ান ও মেগা প্রকল্পের রাজনীতি

বিগত দশকজুড়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে বয়ান তৈরি করা হয়েছে, মেগা প্রকল্প ছিল সেই বয়ান তৈরির প্রধান হাতিয়ার। মেগা প্রকল্পের আড়ালে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের বয়ান তৈরি করা হয়েছে, সেটি না মেটাতে পেরেছে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা, না অর্জন করতে পেরেছে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশা।

বিগত সরকারের আমলে উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের বয়ানের প্রতি পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল দুর্নীতি এবং শোষণমূলক প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কত যে দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাধর ব্যক্তি দেশের মুনাফা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশের উন্নত শহরগুলোতে, তার ইয়ত্তা নেই।

এর সঙ্গে ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর চটুল বুলি; কিন্তু আফসোসের বিষয়, কেউ বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি সমৃদ্ধিশালী এবং উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের দেখাতে পারেননি।

একটি উন্নত বাংলাদেশের চেহারা কেমন হতে পারে, সেই আকাঙ্ক্ষা আমাদের সাধারণ মানুষের চিন্তায় তাঁরা নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে উন্নয়নের অভিজ্ঞতা সারা বাংলাদেশের আপামর জনগণ অনুভব করতে পারবেন এবং তার ইতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই তাঁরা উন্নয়নকে বুঝতে পারবেন, সেই উন্নয়নের ধারণা ও আকাঙ্ক্ষা বিগত সময়ে আমরা তৈরি করতে পারিনি।

বিগত সময়ে তথাকথিত উন্নয়নের বয়ান কী করে বাংলাদেশের মানুষকে একটি মেকি ও ফাঁপা উন্নয়নের বাবলের মধ্যে রেখে গেছে, সেটি আমরা এখন বুঝতে পারি। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে আরও বেশি অনুন্নয়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কেননা, এর সঙ্গে যুক্ত ছিল দুর্নীতির এক বিশাল বাণিজ্য, যে কারণে মেগা প্রকল্প, রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তি ও তাঁদের সুবিধাভোগী শ্রেণির কাছে একটি লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিষয়ও।

এ প্রসঙ্গে আমরা বিখ্যাত নয়া মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক আন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাংকের ‘অনুন্নয়নের উন্নয়নের’ (ডেভেলপমেন্ট অব আন্ডারডেভেলপমেন্ট) ধারণা নিয়ে আসতে পারি। নয়া ঔপনিবেশিক পরিসরে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নয়নের প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহৃত হলেও বিগত সময়ে তথাকথিত উন্নয়নের বয়ান কী করে বাংলাদেশের মানুষকে একটি মেকি ও ফাঁপা উন্নয়নের বাবলের মধ্যে রেখেছে, সেটিও এই ধারণা দিয়ে বুঝতে পারি।

এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে আরও বেশি অনুন্নয়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কেননা, এর সঙ্গে যুক্ত ছিল দুর্নীতির এক বিশাল বাণিজ্য, যে কারণে মেগা প্রকল্প, রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তি ও তাঁদের সুবিধাভোগী শ্রেণির কাছে একটি লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিষয়ও।

এভাবে যে উন্নয়নের বয়ান তৈরি করা হয়েছে, তা কেবল একটি সুবিধাভোগী শ্রেণিরই ইচ্ছা পূরণ করত, আর তারাই ছিল সেই উন্নয়নের ভোগী। সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সেই উন্নয়ন। তেমন উন্নয়নের চাপে পড়ে কী করে আমাদের দেশের মানুষকে আরও বেশি অনুন্নত একটি ব্যবস্থার মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে, যা আদতে আমাদের একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে দিয়েছে, সেটিকে বিশ্লেষণ করার জন্য ফ্রাংকের ‘অনুন্নয়নের উন্নয়নের’ ধারণা একটি চমৎকার সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব।

আরও পড়ুনউন্নয়নের শহরে সস্তা মৃত্যু ও আমাদের ‘লোকদেখানো’ শোক২৬ অক্টোবর ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উন্নয়ন হলো একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা। আর মেগা প্রকল্পগুলো সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেওয়ার বয়ান তৈরির যন্ত্র। তাই শহরজুড়ে বড় বড় মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, যা একটি রাজনৈতিক দলের উন্নয়নের নিজস্ব বয়ান তৈরির মাধ্যম হয়ে পড়ে।

বিগত আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমরা যা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছি। একজন সাধারণ নাগরিকের দ্বারপ্রান্তে তথাকথিত সেই উন্নয়নের স্বাদ পৌঁছায় না; বরং দুর্নীতি ও যথাযথ মান নিশ্চিত না করার জন্য অনেক প্রকল্প হয়ে পড়ছে মৃত্যুফাঁদ। সাম্প্রতিক মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে পথচারীর মৃত্যু কিংবা কয়েক বছর আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুর্ঘটনাসহ অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মেগা প্রকল্প নানা ঝুঁকি তৈরি করছে।

আমরা আর সেই মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের বয়ান শুনতে চাই না, যা কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য হাতে নেওয়া হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিবেদন থাকবে তারা যেন তাদের ইশতেহারে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প যা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেই ধরনের উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে আমাদের সীমাহীন দুর্নীতির যে চর্চা এবং উদাহরণ আমরা গড়ে তুলেছি, তা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে।

আরও পড়ুনরংধনু মার্কা এসব উন্নয়ন দিয়ে করবটা কী১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক ব্যক্তিবিশেষের স্বপ্ন বাস্তবায়নই যেন আমাদের উন্নয়নের মডেল না হয়। উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা যেন দলমত–নির্বিশেষে একই থাকে, সেদিকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে নজর দিতে হবে।

আমরা জানি যে একেকটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহার একেক রকম হবে, যা দিয়ে তারা জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার দৌড়ে নিজেদের এগিয়ে নিতে চাইবে, যা সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক। কিন্তু দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের কিছু বিষয়ে একমত থাকতে হবে। যার মধ্য দিয়ে আমাদের সর্বজনীন উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হবে। যে আকাঙ্ক্ষা কখনোই হারিয়ে যাবে না; বরং রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার পালাবদল হলেও সেই মহাপরিকল্পনা রয়ে যাবে।

একটু সুখী, সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাকে আমরা ‘বাংলাদেশি ড্রিম’ বা ‘বাংলাদেশি স্বপ্ন’ বলতে পারি। বাংলাদেশকে আমাদের বাংলাদেশই বানাতে হবে, সিঙ্গাপুর কিংবা হংকং নয়।

সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আমরা আশা রাখব, এই উদ্দীপনা যেন তাদের মধ্যে গবেষণাভিত্তিক ইশতেহার তৈরির একটি প্রচেষ্টায়ও থাকে।

আরও পড়ুন১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে ডুবিয়ে হাসিনা যেভাবে উন্নয়নের গল্প বানাতেন১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

একটি জ্ঞানভিত্তিক মহাপরিকল্পনার রূপরেখা যদি কোনো দল আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারে, তাহলে জনগণও কিছুটা হলে আশ্বস্ত হবে। কেননা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের একটি দীর্ঘ আস্থাহীনতা গড়ে উঠেছে শোষণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই জনগণকে আশ্বস্ত করার একমাত্র উপায় হলো বাস্তব ও গণমুখী উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি।

এর সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে স্থানীয় জনগণের চাহিদাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন। সেদিক দিয়ে কম বিনিয়োগে অধিক সুফল নিয়ে আসে তেমন খাত খুঁজে বের করে অধিক সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করাই হতে হবে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি। রাজনীতি হতে হবে উন্নয়নকেন্দ্রিক, উন্নয়নকে ঘিরে রাজনীতি নয়, তবেই দেশের ইতিবাচক বদল আসবে।

এ বিষয়ে অন্য দলগুলো কতটা এগিয়েছে, সেটি বোঝা না গেলেও বিএনপি যে গবেষণাভিত্তিক পলিসি নির্মাণের দিকে যাচ্ছে, সেটি বেশ প্রশংসার দাবি রাখে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন সময় ভবিষ্যতের উন্নয়নের যে ব্যাখ্যা তুলে ধরছেন, সেখানে মেগা প্রকল্পের চেয়ে গণমুখী উন্নয়নের রূপরেখা অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। এর সঙ্গে উন্নয়নকে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে আমাদের দেখতে হবে এবং ধীরে ধীরে উন্নয়নের সেই মেগা ধাপে যেতে হবে।

আরও পড়ুনউন্নয়নের বয়ান আর চিপসের প্যাকেটের গল্পে মোড়া শিশুর লাশ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের মডেলের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, তারা উন্নয়ন ও সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া বিবেচনা করে দেশকে সাফল্যজনক জায়গায় নিয়ে গেছে। এসব শিক্ষা নিয়ে উন্নয়নের একটি নিজস্ব ধারা তৈরি করতে হবে। আমরা দেখেছি, কীভাবে পশ্চিমা উন্নয়ন মডেল আমাদের জন্য ব্যর্থ হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশপ্রেমের উদ্যম নিয়ে উন্নয়নের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। 

রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে যে উন্নয়ন যেন কেবল মেগা প্রকল্পকেন্দ্রিক না হয়; বরং উন্নয়ন হোক জনগণকেন্দ্রিক, জনগণের স্বার্থ ও চাহিদাকেন্দ্রিক। আমাদের উন্নয়নের বয়ান যেন হয় একটি বাংলাদেশি স্বপ্নের বাস্তবায়নের বয়ান।    

বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল
  • গণমাধ্যমের সংস্কারের সুযোগ এখনো আছে: রেজওয়ান উল আলম
  • ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত
  • যত দিন যাচ্ছে আমরা ততই বিভক্ত হয়ে পড়ছি: মির্জা ফখরুল 
  • আইন উপদেষ্টার ওপর জনগণের আস্থা নেই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • বিএনপি–জামায়াত বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছে, দাবি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
  • তাইওয়ানের রোল মডে ইসরায়েল: প্রেসিডেন্ট লাই চিং
  • ধর্মকে বিকৃত করে নির্বাচন বানচাল জনগণ মানবে না: ফারুক
  • উন্নয়নের বয়ান ও মেগা প্রকল্পের রাজনীতি