ইফতার মাহফিলের চাঁদা না দেওয়ায় দোকানে হামলার অভিযোগ
Published: 28th, March 2025 GMT
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যার পরে উপজেলার রাতৈল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারের একটি মুদি দোকানে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
দোকান মালিক বলছেন, ‘‘ইফতার মাহফিলে চাঁদা না দেওয়ার কারণে দোকানে হামলা চালানো হয়েছে।’’
এর আগে, বৃহস্পতিবার উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.
তবে, ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজাদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলী এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পরে মফিজ উদ্দিনের সমর্থক ও আজাদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আজাদ আলীর পক্ষের মো. রনি, তার ভাই মো. সজীব, গোলাম রাব্বানী, মো. শামীম, মো. জনি, রুহুল আমিন, নুরুল ইসলাম, মুদি দোকানি দুরুল হুদা ও তার ছেলে মো. মিনু আহত হন। এছাড়া, মফিজ উদ্দিনের পক্ষের জিয়াবুর রহমান, আজিজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, সাহাবুর ইসলাম, মো. সুমন ও নেকশাদ আলী আহত হন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. রনি বলেন, ‘‘এ বছর ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই ঘটনায় একজন নিহত হন। তাই আমরা ইফতার মাহফিল আয়োজনের পক্ষে ছিলাম না। ইউনিয়ন বিএনপি এটা বয়কট করেছে। কিন্তু, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন ইফতার মাহফিল করবেনই। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা তুলেছেন। এসবের অডিও রেকর্ড আমরা পেয়েছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ইফতার মাহফিলের জন্য মুদি দোকানি দুরুলের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ার কারণে শুক্রবার মফিজের লোকজন দুরুলের দোকানে হামলা চালায়। লুটপাট শুরু করলে আমরা গিয়ে বাধা দেই। তখন আমাদেরও মারধর করা হয়। এতে আমরা ৯ জন আহত হই। আমাদের মেরে দোকান থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘এসব গল্প কারা বানিয়ে বলে? এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ’’
এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ‘‘বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে কী নিয়ে ঘটনা তা জানি না। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব এনপ র জ দ আল স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।