প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন রোজাদারের জন্য দুটি (প্রধান) আনন্দ আছে। একটি ইফতারের সময় অথবা ঈদুল ফিতরের দিন। অপরটি বেহেশতে আপন পরওয়ারদেগারের সাক্ষাৎ লাভের সময়। (তারগীব-১৪৪৯)

এ কারণে ঈদের দিন মুমিনের কথা, কাজ, সাক্ষাৎ- সবক্ষেত্রেই আনন্দের প্রকাশ ঘটে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই করতেন।

হযরত আনাস রা.

বলেন, বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় আসলেন; দেখলেন মদিনাবাসী নির্দিষ্ট দুটি দিনে আনন্দ করে। নবি সা. বললেন, এ দুটি কোন দিবস? তারা বললো, আমরা জাহেলি যুগে এ দিবস দুটিতে খেলাধুলা ও আনন্দ ফূর্তি করতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের সেই দিবস দুটিকে আরো উত্তম দুটি দিবসের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তা হলো; ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ)

ঈদের দিনে বিশ্বনবি মুহাম্মাদ সা. নিজে আনন্দ উপভোগ করতেন, অন্যদেরকেও আনন্দ করার সুযোগ করে দিতেন। এর প্রমাণ মিলে হযরত আয়েশা রা. এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, বিদায় হজে মিনায় অবস্থানকালে হযরত আবু বকর রা. তার কাছে উপস্থিত হলেন। এমতাবস্থায় আনসারদের দুটি বালিকা সেখানে দফ বাজিয়ে গান গাচ্ছিল। নবি করিম সা. তখন চাদর আবৃত অবস্থায় শুয়েছিলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর রা. বালিকাদের ধমক দিলেন। এ সময় নবি করিম সা. চাদর থেকে চেহারা মুবারক বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে কিছু বলো না আবু বকর! আজতো ঈদের দিন। অপর বর্ণনায় আছে, নবি সা. বললেন, হে আবু বকর। প্রত্যেক জাতির একটি আনন্দ আছে, আর এটা হল আমাদের আনন্দের দিন। (মুয়াত্তা; ১৪৩২) আয়েশা রা. বলেন, আনসার মেয়ে দুটি বুআস যুদ্ধের দিন আনসারিরা পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা পেশাজীবি গায়িকা ছিল না।

মুমিনকে এ আনন্দের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এ আনন্দের ঘোষণা আল্লাহ ও তার রসূল সা. এর পক্ষ থেকে। এদিন থেকেই সিয়াম পালনকারীকে প্রতিদান দেওয়া হতে থাকে।

হযরত সাঈদ বিন আউস আল-আনসারি রা. তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যখন ঈদুল ফিতরের দিনটি আসে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে ফেরেশতারা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যান। আহবান করতে থাকে আর বলতে থাকে হে মুসলিম জাতি, তোমরা সকাল সকাল তোমাদের রবের দিকে বের হও (ঈদের জামাতের জন্য)। তিনি তোমাদেরকে তার উত্তম প্রতিদান দিবেন। অতঃপর তাদেরকে ঢের পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারা বলতে থাকে তোমাদেরকে তারাবি ও কিয়ামুল লাইল পড়ার কথা বলা হয়েছে। তোমরা তা পড়েছ। রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, তোমরা তা আদায় করেছ। আজ তোমাদের রব তোমাদেরকে আপ্যায়ন করিয়েছেন (রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন)। তোমরা তোমাদের প্রতিদান গ্রহণ কর। ঈদের নামাজ যখন আদায় করা হয়ে যায়, তখন ফেরেশতারা ঘোষণা করতে থাকে: নিশ্চয়ই তোমাদের রব তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাও। এটা তোমাদের (প্রাথমিক) প্রতিদান দিবস। আজকের দিনকে সপ্ত আকাশেও প্রতিদান দিবস বলে’। (মু’জামুল কুবরা, তাবরানী) প্রকৃত পক্ষে ঈদ হলো এ সব নেককার, আল্লাহর প্রিয় মানুষদের জন্য।

তবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখার বিষয় হলো: ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে নাজায়েজ বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। যেমন-গান, বাজনা, বেপর্দা, অশ্লীলতা, উচ্চ আওয়াজে গান-বাজনার মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি। সারা রোজায় অনেক কষ্টে অর্জিত নেকগুলো যেন ইবলিস একদিনের আনন্দে নিঃশেষ করে দিতে না পারে। রোজার মাসে গড়ে ওঠা ভালো অভ্যাসগুলো যেন হারিয়ে না যায়। রোজার ফরজ হুকুম আগামী রোজার আগে নেই। কিন্তু একটি বছরে রমজান শেষ হওয়ার পরেও নামাজের ফরজ হুকুম থেকে যায়, পর্দার বিধান, হালাল হারামের বিধান, গান-বাজনা নিষিদ্ধের বিধান, অশ্লীলতা পরিত্যাগের বিধান থেকে যাযয়। এগুলো ভুললে চলবে না। ইসলামের সব নির্দেশনা মেনে চলার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে পারলেই মাহে রমজানের প্রাপ্তি আমাদের জন্য স্বার্থক হবে।

ঈদুল ফিতরে করণীয়:

১.ঈদের দিন ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।

২.উত্তমরূপে গোসল করে উত্তম কাপড় পরিধান করা।

৩.সুগন্ধি ব্যবহার করা।

৪.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করতেন।

৫.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।

৬.ঈদের নামাযে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ঘরে ফেরা।

৭.ঈদুল ফিতরের জামাতে যাওয়ার সময় তাকবির মনে মনে বলা।

৮.ঈদের নামাজের আগে-পরে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা।

৯.অসহায় গরীবদের খোঁজখবর নেওয়া। সাধ্য মোতাবেক তাদের পাশে দাঁড়ানো।

১০.মৃ আত্মীয়-স্বজনদের কবর সুন্নত তরিকায় জিয়ারত করা। তাদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা।

১১.দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলামনদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব।

ঈদ আমাদের জীবনে হয়ে উঠুক আনন্দময় ও সুখকর, আমিন।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র ন ম জ দ র জন য ঈদ র দ ন র আনন দ আনন দ র দ য় কর আম দ র বলল ন আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে ৫ মাস ১০ দিন পর ক্লাস শুরু

৫ মাস ১০ দিন পর মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ক্লাস শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার সকালে কুয়েটের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস পরিদর্শন করেছেন। 

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে উপাচার্য ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেন। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তাদের আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে।

দুই দিন ধরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেছেন, উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভিসি-প্রোভিসি এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ‎আন্দোলনের মুখে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১ মে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মে খুলনা ত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ২২ মে তিনি উপাচার্যের পদ ত্যাগ করেন। এর দুই মাস দুই দিনের মাথায় ভিসি নিয়োগ হলেও কুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল ৫ মাস ১০ দিন। 

গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালীকে কুয়েটের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় কুয়েটে যোগ দেন ড. মো. মাকসুদ হেলালী।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েটে ৫ মাস ১০ দিন পর ক্লাস শুরু