ঈদের আনন্দ রোজাদারের প্রথম পুরস্কার
Published: 31st, March 2025 GMT
প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন রোজাদারের জন্য দুটি (প্রধান) আনন্দ আছে। একটি ইফতারের সময় অথবা ঈদুল ফিতরের দিন। অপরটি বেহেশতে আপন পরওয়ারদেগারের সাক্ষাৎ লাভের সময়। (তারগীব-১৪৪৯)
এ কারণে ঈদের দিন মুমিনের কথা, কাজ, সাক্ষাৎ- সবক্ষেত্রেই আনন্দের প্রকাশ ঘটে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটাই করতেন।
হযরত আনাস রা.
ঈদের দিনে বিশ্বনবি মুহাম্মাদ সা. নিজে আনন্দ উপভোগ করতেন, অন্যদেরকেও আনন্দ করার সুযোগ করে দিতেন। এর প্রমাণ মিলে হযরত আয়েশা রা. এর বর্ণনায়। তিনি বলেন, বিদায় হজে মিনায় অবস্থানকালে হযরত আবু বকর রা. তার কাছে উপস্থিত হলেন। এমতাবস্থায় আনসারদের দুটি বালিকা সেখানে দফ বাজিয়ে গান গাচ্ছিল। নবি করিম সা. তখন চাদর আবৃত অবস্থায় শুয়েছিলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর রা. বালিকাদের ধমক দিলেন। এ সময় নবি করিম সা. চাদর থেকে চেহারা মুবারক বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে কিছু বলো না আবু বকর! আজতো ঈদের দিন। অপর বর্ণনায় আছে, নবি সা. বললেন, হে আবু বকর। প্রত্যেক জাতির একটি আনন্দ আছে, আর এটা হল আমাদের আনন্দের দিন। (মুয়াত্তা; ১৪৩২) আয়েশা রা. বলেন, আনসার মেয়ে দুটি বুআস যুদ্ধের দিন আনসারিরা পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা পেশাজীবি গায়িকা ছিল না।
মুমিনকে এ আনন্দের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এ আনন্দের ঘোষণা আল্লাহ ও তার রসূল সা. এর পক্ষ থেকে। এদিন থেকেই সিয়াম পালনকারীকে প্রতিদান দেওয়া হতে থাকে।
হযরত সাঈদ বিন আউস আল-আনসারি রা. তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যখন ঈদুল ফিতরের দিনটি আসে অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে ফেরেশতারা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যান। আহবান করতে থাকে আর বলতে থাকে হে মুসলিম জাতি, তোমরা সকাল সকাল তোমাদের রবের দিকে বের হও (ঈদের জামাতের জন্য)। তিনি তোমাদেরকে তার উত্তম প্রতিদান দিবেন। অতঃপর তাদেরকে ঢের পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারা বলতে থাকে তোমাদেরকে তারাবি ও কিয়ামুল লাইল পড়ার কথা বলা হয়েছে। তোমরা তা পড়েছ। রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, তোমরা তা আদায় করেছ। আজ তোমাদের রব তোমাদেরকে আপ্যায়ন করিয়েছেন (রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন)। তোমরা তোমাদের প্রতিদান গ্রহণ কর। ঈদের নামাজ যখন আদায় করা হয়ে যায়, তখন ফেরেশতারা ঘোষণা করতে থাকে: নিশ্চয়ই তোমাদের রব তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোমরা তোমাদের বাড়ি-ঘরে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাও। এটা তোমাদের (প্রাথমিক) প্রতিদান দিবস। আজকের দিনকে সপ্ত আকাশেও প্রতিদান দিবস বলে’। (মু’জামুল কুবরা, তাবরানী) প্রকৃত পক্ষে ঈদ হলো এ সব নেককার, আল্লাহর প্রিয় মানুষদের জন্য।
তবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখার বিষয় হলো: ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে নাজায়েজ বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। যেমন-গান, বাজনা, বেপর্দা, অশ্লীলতা, উচ্চ আওয়াজে গান-বাজনার মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি। সারা রোজায় অনেক কষ্টে অর্জিত নেকগুলো যেন ইবলিস একদিনের আনন্দে নিঃশেষ করে দিতে না পারে। রোজার মাসে গড়ে ওঠা ভালো অভ্যাসগুলো যেন হারিয়ে না যায়। রোজার ফরজ হুকুম আগামী রোজার আগে নেই। কিন্তু একটি বছরে রমজান শেষ হওয়ার পরেও নামাজের ফরজ হুকুম থেকে যায়, পর্দার বিধান, হালাল হারামের বিধান, গান-বাজনা নিষিদ্ধের বিধান, অশ্লীলতা পরিত্যাগের বিধান থেকে যাযয়। এগুলো ভুললে চলবে না। ইসলামের সব নির্দেশনা মেনে চলার অভ্যাস অব্যাহত রাখতে পারলেই মাহে রমজানের প্রাপ্তি আমাদের জন্য স্বার্থক হবে।
ঈদুল ফিতরে করণীয়:
১.ঈদের দিন ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
২.উত্তমরূপে গোসল করে উত্তম কাপড় পরিধান করা।
৩.সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৪.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা করতেন।
৫.ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।
৬.ঈদের নামাযে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ঘরে ফেরা।
৭.ঈদুল ফিতরের জামাতে যাওয়ার সময় তাকবির মনে মনে বলা।
৮.ঈদের নামাজের আগে-পরে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা।
৯.অসহায় গরীবদের খোঁজখবর নেওয়া। সাধ্য মোতাবেক তাদের পাশে দাঁড়ানো।
১০.মৃ আত্মীয়-স্বজনদের কবর সুন্নত তরিকায় জিয়ারত করা। তাদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা।
১১.দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলামনদের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব।
ঈদ আমাদের জীবনে হয়ে উঠুক আনন্দময় ও সুখকর, আমিন।
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র ন ম জ দ র জন য ঈদ র দ ন র আনন দ আনন দ র দ য় কর আম দ র বলল ন আনস র
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠক পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বৃটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে: মঈন খান
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বৃটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এরআগে সকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে আবদুল মঈন খান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, আজকের বাংলাদেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি; বিশেষ করে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে- তার প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের জিওপলিটিক্যাল অবস্থান ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃটিশ হচ্ছে গণতন্ত্রের সূতিকাগার। ওরা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাইবে না তো, কে চাইবে? এখানে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।
নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আপনারা তো জানেন, আমাদের কথা এখন একটাই। বাংলাদেশের মানুষের যে ইচ্ছার প্রতিফলন, দেশের নতুন প্রজন্ম, যারা দীর্ঘ ১৭ বছর তাদের ভোট দিতে পারেনি। দেশের কোটি কোটি মানুষ, ১২ কোটি ভোটার বলা হচ্ছে- তারা ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ। ভোটের ব্যাপারে যখন নিশ্চিত ইঙ্গিত সরকারের পক্ষ থেকে আসে, বলা হয় যে- নির্বাচন কমিশন দেশবাসীকে জানাবে ভোটের তারিখ। তখন তো দেশের মানুষ উচ্ছ্বাস হয়ে যায়।