প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগেই আলোচনার টেবিলে ঝড় তুলে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ সিনেমা। সেন্সর বোর্ডের সার্টিফিকেট নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। পরিচালক কাজী হায়াতের সঙ্গে শাকিবভক্তদের বিরূপ আচরণ! সব মিলিয়ে আবহাওয়া বেশ গরম ছিল।

তবে সমস্ত জটিলতা পাশ কাটিয়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে ‘বরবাদ’ সিনেমা। মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত এ সিনেমা মুক্তির পর থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বিভিন্ন বয়সের দর্শকরা। কেবল তাই নয়, ভূয়সী প্রশংসা করছেন তারা।

বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘বরবাদ’। ঈদের দিন প্রথম শো হাউজফুল ছিল। আজও তাই! ‘বরবাদ’ দেখে সব দর্শকই সিনেমাটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। একজন দর্শক বলেন, “সিনেমাটিতে শাকিব খানের যে লুক, সংলাপ পেয়েছি, এগুলো ‘তুফান’, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় পাইনি। এজন্য ‘বরবাদ’ হিট সিনেমা। আর সিনেমার শেষে গল্পে যে টুইস্ট রাখা হয়েছে, এটি কল্পনাও করিনি।” 

আরো পড়ুন:

মুক্তির পর শাকিবের ‘বরবাদ’ সিনেমা ফাঁস

টিভি পর্দায় ‘তুফান’

আরেকজন তরুণ দর্শক বলেন, “বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সেরা সিনেমা ‘বরবাদ’। এরকম অ্যাকশন মুভি আগে কখনো বাংলাদেশে হয়নি।” ‘বরবাদ’ দেখে কেমন লেগেছে? এমন প্রশ্ন রাখা হয় একজন নারী দর্শকের কাছেও। তিনি বলেন, “অনেক ভালো লেগেছে। সিনেমাটি দেখে মন ভরে গেছে।”   

মেহেদী হাসান নামে একজন তরুণ দর্শক বলেন, “বরবাদ’ জাস্ট ওয়াও! আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই আমার মিতা মেহেদী হাসান হৃদয়কে (সিনেমাটির পরিচালক)। বাংলাদেশের সেরা মুভি এটি।”

মধুমিতা সিনেমা হলে আগত দর্শকরাও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তরুণ এক দর্শক বলেন, “বরবাদ’ সিনেমা অস্থির, বলিউডের থেকে কম না।” এক যুবক বলেন, “ভাই, তামিল, ইংলিশ সিনেমার বাপ-দাদা ‘বরবাদ’।” ‘বরবাদ’ সিনেমার সিক্যুয়েল নির্মাণের দাবি জানিয়ে এক তরুণ বলেন, “গত বছর ‘তুফান’ দেখে মনে হয়েছিল এটাই সেরা সিনেমা। কিন্তু ‘বরবাদ’ সেই ভাবনা বদলে দিয়েছে। আমরা ‘বরবাদ’ সিনেমার সিক্যুয়েল চাই।”

সিনেমার গল্পটি শিক্ষণীয় দাবি করে এক তরুণ বলেন, “সিনেমাটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বাপের ভুলের কারণে সন্তানের খেসারত দিতে হয়। পাপ বাপরেও ছাড়ে না। শাকিব ভাইয়ের অভিনয় অসাধারণ। এটা আমাদের শাকিব ভাই কিনা তা নিয়ে দ্বিধান্বিত।”

অনেক দর্শকই দাবি করেছেন, পুরো তামিল সিনেমার মতো হয়েছে ‘বরবাদ’। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে বলছেন, ‘অ্যানিমেল’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি নির্মাণ করেছেন।

মুক্তির আগে থেকেই ‘বরবাদ’ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন হলমালিকরা। ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছয়টি সিনেমার মধ্যে ১২০টি হল পেয়েছে শাকিবের এই সিনেমা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে শো বৃদ্ধি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও আরো বাড়তে পারে।

‘বরবাদ’ সিনেমায় শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল। এছাড়াও অভিনয় করেছেন যীশু সেনগুপ্ত, শহীদুজ্জামান সেলিম, মিশা সওদাগর, ইন্তেখাব দিনার, মামুনুর রশীদ প্রমুখ। একটি আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন কলকাতার নায়িকা নুসরাত জাহান।   

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর ছ ন বরব দ

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে