মানুষের হাড় ভেঙে গেলে তা পুনরায় বৃদ্ধি পায়, ঠিক হয়ে যায়। দাঁত সে ক্ষেত্রে মানবশরীরের ভিন্ন একটি অঙ্গ, যা একবার পড়ে গেলে আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। এর ফলে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ একধরনের ইডেন্টুলিজম বা দাঁতহীনতায় ভুগছেন। জাপানি গবেষকেরা একটি পুনরায় দাঁত-উত্পাদনকারী ওষুধ মানবশরীরে পরীক্ষা করবেন বলে জানা গেছে। যদি পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে ওষুধটি ২০৩০ সালের কাছাকাছি সময়ে সব ধরনের দাঁতহীনতার সমস্যা দূর করতে পারে।
সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ২০৬টি হাড় থাকে। ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ও কোলাজেনের শক্ত মিশ্রণে তৈরি হয় দাঁত। দাঁত অবিশ্বাস্য রকমের স্থিতিস্থাপক একটি অঙ্গ। যদি একবার দাঁত ভেঙে যায়, তাহলে দাঁত নিজে থেকে বিকাশের সুযোগ নেই মানবশরীরে।
দাঁত মানবদেহের সবচেয়ে কঠিন উপাদান এনামেল দিয়ে তৈরি হয়। দাঁতের নিরাময় ও পুনরায় বৃদ্ধি করার ক্ষমতা নেই। জাপানি গবেষকেরা একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ নিয়ে কাজ করছেন, যা মানুষের দাঁত পুনরায় বৃদ্ধি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মানুষের ওপরে এই ওষুধের পরীক্ষা করা হয়। জাপানের ওসাকার কিতানো হাসপাতালের মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কাতসু তাকাহাশি বলেন, ‘যাঁরা দাঁতের ক্ষতি বা অনুপস্থিতিতে ভুগছেন, তাঁদের সাহায্য করার জন্য কিছু করতে চাই।’
নিরাময়ের চেয়ে দাঁতের বৃদ্ধির দিকে আগ্রহ বেশি মানুষের। ইউটারিন সেনসিটাইজেশন-সম্পর্কিত জিন-১ (ইউএসএজি-১) নামের একটি বিশেষ অ্যান্টিবডি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এই অ্যান্টিবডি ইঁদুরের দাঁতের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। ২০২১ সাল থেকে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মানুষের জন্য পরীক্ষা করতে কাজ শুরু করেন। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি নামের একটি কৌশল আবিষ্কার করা হয় তখন। এটি জিন ও হাড়ের বোন মরফোজেনেটিক প্রোটিন বা বিএমটি নামে পরিচিত অণুর মধ্যে মিথস্ক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিবডি দমন করে দাঁতের বৃদ্ধি নিয়ে পরীক্ষা করছেন এখন। ১১ মাস ধরে দাঁতের এই গবেষণায় ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৩০ জন পুরুষের ওপর নজর রাখা হয়। সব অংশগ্রহণকারীর অন্তত একটি দাঁত অনুপস্থিত ছিল। নতুন ওষুধটি শিরার মধ্য দিয়ে মানবশরীরে প্রেরণ করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কিটানো হাসপাতালে দুই থেকে সাত বছর বয়সী রোগীদের দাঁতের চিকিত্সায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ সবার জন্য এই ওষুধ উপলব্ধ করতে চান বিজ্ঞানীরা। জন্মগত দাঁতহীন অবস্থা থেকে দাঁতের সমস্যায় এই ওষুধ ব্যাপক আকারে ব্যবহার করতে চান বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: পপুলার মেকানিকস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠাবে চীন
চীন জানিয়েছে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর লক্ষ্য পূরণের পথে ঠিকঠাক রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি মহাকাশ অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য দ্রুত কাজ করছে। এরই মধ্যে চলমান অভিযানের জন্য পরবর্তী নভোচারী দলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
চীন মানববাহী মহাকাশ কর্মসূচির মুখপাত্র ঝাং জিংবো বলেন, বর্তমানে চাঁদে মানুষ পাঠানোর গবেষণা ও উন্নয়ন কাজের প্রতিটি কর্মসূচি ঠিকঠাক এগিয়ে চলেছে। লং মার্চ ১০ রকেট আর চাঁদে অবতরণের বিশেষ স্যুট ও অনুসন্ধানকারী যান এরই মধ্যে প্রায় প্রস্তুত। ২০৩০ সালের মধ্যে চীন চাঁদে মানুষ পাঠানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সুদৃঢ় অবস্থানে কাজ করছে।
চীন মহাকাশ অনুসন্ধান পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনের কাজ শেষ করতে দ্রুত কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন নভোচারী পাঠানো হচ্ছে। একেকটি দল ছয় মাসের জন্য স্টেশনের ভেতরে থেকে গবেষণা পরিচালনা করে। স্টেশনে অন্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়া নতুন ক্রু সদস্যরা হলেন ঝাং লু, উ ফেই ও ঝাং হংঝাং।
গত ৩১ অক্টোবর রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে জিউকুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে তিন নভোচারী যাত্রা করেন। নভোচারী ঝাং লু এর আগে শেনঝু ১৫ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। নভোচারী উ ফেই ও ঝাং হংঝাংয়ের জন্য এটি মহাকাশে প্রথম যাত্রা হবে। এ যাত্রায় নভোচারীরা তাঁদের সঙ্গে দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রীসহ চারটি ইঁদুরও নিয়ে যাবেন। তাঁরা প্রাণীর ওপর ওজনহীনতা ও সীমাবদ্ধ পরিবেশে থাকার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করবেন।
চীনের মহাকাশ কর্মসূচির সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির সরাসরি যোগসূত্রের কারণে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বাদ দেওয়ার পর চীন তিয়ানগং স্টেশন তৈরির জন্য কাজ করছে। এই স্টেশন ভবিষ্যতে চাঁদে চীনা নভোচারী ও মানুষের ক্যাম্প তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চীন অনেকটা একাই নিজের মতো করে মহাকাশ অনুসন্ধানে কাজ করছে। অন্যদিকে নাসার সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে একসঙ্গে নিয়ে চন্দ্র বিজয়ের কাজ করছে। ২০৩০–এর দশকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতামূলক ঘটনা দেখা যাবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
সূত্র: এনডিটিভি