রমজান মাসে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছিল প্রায় সুনসান নীরবতা। ঈদের দিন থেকে সেই নীরবতা ভাঙছে। গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, চা বাগান ও ঝরনার মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। দীর্ঘ ছুটি থাকায় পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে পর্যটকদের আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে। কেউ গোসল করছেন। কেউ ছবি তুলছেন। কেউ ছাতার নিচে বসে ঢেউ উপভোগ করছেন। আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৈকত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার কক্সবাজার সৈকতে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক গেছেন। ছিল স্থানীয় আরও ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে সাগরে ঝাঁপাঝাঁপি করেন প্রায় দুই লাখ মানুষ।
সৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছোটেন মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটোয়ারটেক, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও আদিনাথ মন্দিরে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১০ লাখ পর্যটক সমাগম হয়েছিল। এবার ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটক এত বেশি গেছেন যে আবাসিক হোটেলে কক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। আগাম কক্ষ বুকিং না দিয়ে যারা গিয়েছেন, তাদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। পছন্দমতো কক্ষ না পাওয়া, পেলেও ভাড়া বেশি চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঈদের দিন থেকে হাসি ফুটেছে সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পর্যটকে মুখর পুরো জেলা। ফাঁকা নেই আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টগুলো। টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সাদাপাথর, জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানির ঝরনা, রাতারগুল, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, লোভাছড়া ও ঝরনায় গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.
দু’দিন ধরে মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি ৭১, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, বাইক্কাবিল, জলের গ্রাম অন্তেহরিতে পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ভাসমান দোকানিদের বেচা-কেনা বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত শৌচাগার, ক্যান্টিন ও বিশ্রাম নেওয়ার বেঞ্চ না থাকায় আগন্তুকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা যায়, ঈদ ও পরের দিনে দুই হাজারের বেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কর্মচারী সাজু আহমদ বলেন, ঈদের দিন ২ হাজার ৫০০, পরদিন ১ হাজার ৫০০, আর গতকাল দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গতকাল রাঙামাটি আসা ভ্রমণপিপাসুর ঢল নেমেছে বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে। ঝুলন্ত সেতু, জেলা প্রশাসনের বাংলো পার্ক, পুলিশের পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই হ্রদের ধারে অবস্থিত আসামবস্তি-কাপ্তাই ১৮ কিলোমিটার সড়কের দৃশ্য তারা উপভোগ করেন। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি বড়গাঙ, রাইন্যা টুগুন, বেরান্নে লেক এবং বার্গী লেক ভ্যালি, আরণ্যক, রাঙাদ্বীপ, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। অনেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ করেন।
সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মণ জানান, ৯০ শতাংশ কটেজ-রিসোর্টের কক্ষ বুক হয়ে আছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকারণ্য। পতেঙ্গা, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, জাতিসংঘ পার্ক, প্রজাপতি পার্ক, জাম্বুরি মাঠ, অভয়মিত্র ঘাট, বায়েজিদ লিংক রোড, হালিশহর, গুলিয়াখালী, মহামায়া, পারকি ও ফটিকছড়ি চা বাগানে ছিল ভিড়।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, অফিস ও ব্যুরো)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন দ রগ ল ন ব যবস গতক ল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।
গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।
গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।
বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।
পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান