Samakal:
2025-06-15@23:03:28 GMT

পর্যটন কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য

Published: 3rd, April 2025 GMT

পর্যটন কেন্দ্র লোকে লোকারণ্য

রমজান মাসে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছিল প্রায় সুনসান নীরবতা। ঈদের দিন থেকে সেই নীরবতা ভাঙছে। গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, চা বাগান ও ঝরনার মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। দীর্ঘ ছুটি থাকায় পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে পর্যটকদের আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে। কেউ গোসল করছেন। কেউ ছবি তুলছেন। কেউ ছাতার নিচে বসে ঢেউ উপভোগ করছেন। আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৈকত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার কক্সবাজার সৈকতে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক গেছেন। ছিল স্থানীয় আরও ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে সাগরে ঝাঁপাঝাঁপি করেন প্রায় দুই লাখ মানুষ।

সৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছোটেন মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটোয়ারটেক, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও আদিনাথ মন্দিরে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১০ লাখ পর্যটক সমাগম হয়েছিল। এবার ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটক এত বেশি গেছেন যে আবাসিক হোটেলে কক্ষ সংকট দেখা দিয়েছে। আগাম কক্ষ বুকিং না দিয়ে যারা গিয়েছেন, তাদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। পছন্দমতো কক্ষ না পাওয়া, পেলেও ভাড়া বেশি চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ঈদের দিন থেকে হাসি ফুটেছে সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পর্যটকে মুখর পুরো জেলা। ফাঁকা নেই আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টগুলো। টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সাদাপাথর, জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানির ঝরনা, রাতারগুল, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, লোভাছড়া ও ঝরনায় গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া শাহজালাল (রহ.

) ও শাহপরানের (রহ.) মাজারে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এবার ১৫ লাখ পর্যটক সমাগমের আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

দু’দিন ধরে মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বধ্যভূমি ৭১, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, বাইক্কাবিল, জলের গ্রাম অন্তেহরিতে পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ভাসমান দোকানিদের বেচা-কেনা বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত শৌচাগার, ক্যান্টিন ও বিশ্রাম নেওয়ার বেঞ্চ না থাকায় আগন্তুকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা যায়, ঈদ ও পরের দিনে দুই হাজারের বেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কর্মচারী সাজু আহমদ বলেন, ঈদের দিন ২ হাজার ৫০০, পরদিন ১ হাজার ৫০০, আর গতকাল দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গতকাল রাঙামাটি আসা ভ্রমণপিপাসুর ঢল নেমেছে বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে। ঝুলন্ত সেতু, জেলা প্রশাসনের বাংলো পার্ক, পুলিশের পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই হ্রদের ধারে অবস্থিত আসামবস্তি-কাপ্তাই ১৮ কিলোমিটার সড়কের দৃশ্য তারা উপভোগ করেন। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি বড়গাঙ, রাইন্যা টুগুন, বেরান্নে লেক এবং বার্গী লেক ভ্যালি, আরণ্যক, রাঙাদ্বীপ, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। অনেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ করেন।

সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মণ জানান, ৯০ শতাংশ কটেজ-রিসোর্টের কক্ষ বুক হয়ে আছে।

চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকারণ্য। পতেঙ্গা, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, জাতিসংঘ পার্ক, প্রজাপতি পার্ক, জাম্বুরি মাঠ, অভয়মিত্র ঘাট, বায়েজিদ লিংক রোড, হালিশহর, গুলিয়াখালী, মহামায়া, পারকি ও ফটিকছড়ি চা বাগানে ছিল ভিড়।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, অফিস ও ব্যুরো)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন দ রগ ল ন ব যবস গতক ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 
  • কক্সবাজারে পর্যটকদের নতুন ঠিকানা সাম্পান রিসোর্ট