নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ই আমেরিকা ফার্স্ট নীতির কথা বলে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন তিনি। শুরুতে কয়েকটি দেশকে লক্ষ্যবস্তু করলেও এবার তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র করে তুললেন। সব বাণিজ্যিক অংশীদার দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ এবং অনেক দেশের ওপর ব্যাপক হারে পাল্টা শুল্কও বসিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। কেউ কেউ আবার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর সিএনএন ও বিবিসির।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। নতুন নীতিতে ৫ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে আরোপিত শুল্ককে সর্বজনীন ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। ইইউ, চীনসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ৯ এপ্রিল থেকে উচ্চমাত্রার এ শুল্কের কবলে পড়বে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেননি বিশ্বনেতারা। এটিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন শুল্ক আরোপের কারণে অনিশ্চয়তা বাড়বে, যা বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। আলোচনা ব্যর্থ হলে ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, সিদ্ধান্তটি ‘ভুল’ হয়েছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, স্পেন একটি উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিচেল মার্টিন বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক এবং কারও জন্যই লাভজনক নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এলিসি প্রাসাদে নতুন শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া চীনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘সবচেয়ে খারাপ অপরাধী’ হিসেবে দেখে। তাদের পণ্যের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের ওপর আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে চীনা পণ্যে মোট শুল্ক কমপক্ষে ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, চীন নিজস্ব অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হওয়া তাইওয়ান এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ একটি বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু। পূর্ব এশিয়ার দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
জাপান বলেছে, তাদের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্যদিকে থাইল্যান্ড বলেছে, তারা তাদের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করবে। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় দেশটির কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে হতবাক হয়ে পড়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেন, এই অন্যায় শুল্ক আরোপের জন্য আমেরিকানদের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে। তবে আমরা এমন একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেব না, যার কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ধীর করে দেবে।
ডাউনিং স্ট্রিটের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের ওপর কম শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য দেশটির সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন, তারা যেন প্রতিশোধ না নেয়। তারা যেন মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কারণ যদি আপনি প্রতিশোধ নেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ শ ল ক আর প শ ল ক আর প র পদক ষ প র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।
পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।
বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।
রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।
এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।
কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।
বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা