চুরি হচ্ছে উড়ালসড়কের নাটবল্টু, বাড়ছে ঝুঁকি
Published: 21st, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর উড়ালসড়কের স্টিল গার্ডার থেকে নাটবল্টু চুরি হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক তদন্তে এই চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে নগরের যান চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম উড়ালসড়কের কাঠামোগত নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভাসমান মাদকসেবীরা এই চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
নগরের মুরাদপুর উড়ালসড়কের তিনটি র্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) ও একটি লুপ (উড়ালসড়ক থেকে বাঁক নিয়ে অন্য রাস্তায় সংযুক্ত করা) রয়েছে। মূল উড়ালসড়ক নগরের শুলকবহর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অবস্থিত।
এই উড়ালসড়কের একটি র্যাম্প ও লুপ নির্মিত হয়েছে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে জিইসি পর্যন্ত। এর মধ্যে জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী র্যাম্প থেকে নাটবল্টুসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরির অভিযোগ ওঠে। এর একটি অংশ স্টিল গার্ডার দিয়ে নির্মিত। এই অভিযোগ তদন্তে সিটি করপোরেশন আগস্টে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সিটি করপোরেশন এবং সিডিএর প্রকৌশলী কর্মকর্তা ছিলেন। কমিটি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত নির্মিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয় ২০১৮ ডিসেম্বরে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
চুরিতে মাদকসেবীরা, ঘটনা উদ্বেগজনক
কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখতে পান, উড়ালসড়কের জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী র্যাম্পের কিছু কিছু অংশে স্টিল গার্ডারের নাটবল্টু নেই। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী স্টিল গার্ডারে ১৪০টি নাটবল্টু এবং ৫৩টি ওয়াশার পাওয়া যায়নি। মাদকাসক্ত দ্বারা নাটবল্টু চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড়ালসড়কের উচ্চতা ও কাঠামোগত জটিলতার কারণে এগুলো পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ শ্রমিক এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি (যেমন ক্রেন ও ম্যান-লিফট) প্রয়োজন। কিন্তু এ ধরনের সরঞ্জাম কিংবা প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় রুটিন ইনস্পেকশন (নিয়মিত পরিদর্শন) কখনো হয়নি।
উড়ালসড়কের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু ক্রেন লিফট কেনা দরকার। হঠাৎ করে নাটবল্টু সংযোজনের প্রয়োজন হতে পারে, তাই মজুত রাখতে রাখা দরকার।উড়ালসড়কের সুরক্ষায় ১০ সুপারিশ
নগরের গাড়ি চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামো বা উড়ালসড়কের সুরক্ষায় ১০টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। উড়ালসড়কের নাটবল্টু চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চুরি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল যাতে নিয়মিত নজরদারি রাখে। দক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে উড়ালসড়কে নাটবল্টু লাগাতে হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে এই কাজ করতে হবে।
উড়ালসড়কের আরও কোথাও নাটবল্টু চুরি হয়েছে কি না, কোথাও নাটবল্টুর সংযোগ শিথিল হয়েছে কি না, তা দক্ষ ও পারদর্শী প্রতিষ্ঠান দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এই বিষয়ে সনদ নেওয়া প্রয়োজন।
উড়ালসড়কের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু ক্রেন লিফট কেনা দরকার।
হঠাৎ করে নাটবল্টু সংযোজনের প্রয়োজন হতে পারে, তাই মজুত রাখতে রাখা দরকার।
উড়ালসড়কের জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী র্যাম্পে এবং বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ২ নম্বর গেটমুখী লুপের মধ্যবর্তী খোলা স্থানে দিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে কাঁটাতার দিতে হবে। উড়ালসড়কের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
মুরাদপুর উড়ালসড়কের স্টিল গার্ডার থেকে কিছু নাটবল্টু চুরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন টবল ট দরক র নগর র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চিনি আমদানি বন্ধ, আগে দেশি কলের চিনি বিক্রি হবে: শিল্প উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করা আপাতত বন্ধ। দেশের চিনিকলের উৎপাদিত চিনি আগে বিক্রি হবে।
আজ শনিবার সকালে নাটোর উত্তরা গণভবনের উন্নয়নমূলক সংস্কারকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন এ উপদেষ্টা।
চিনি নিয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ‘বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করা আপাতত বন্ধ। কারণ, আমাদের দেশের চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত যে চিনি জমা রয়েছে, সে চিনি আগে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করছি। এটা চলমান রয়েছে। চিনিতে লাভ খুব দ্রুত আসে না। আমাদের দেশের চিনিকলগুলো ব্রিটিশ আমলের তৈরি। সারা দেশের যে চাহিদা, তার ছোট অংশ আমরা স্থানীয়ভাবে পূরণ করতে পারি। সক্ষমতা শুধু চিনির ওপর না থেকে চিনির সঙ্গে সঙ্গে অন্য কিছু উৎপাদনের চিন্তা করছে সরকার।’
শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ভর্তুকি দিয়ে চালানো চিনিকল চালানো সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি। তাই আমাদের সময়ে বা আগামী সরকারের সময় ভালো খবর আসবে। দেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে উত্তরা গণভবনকে তৈরি রাখা। সভা কখন হবে তার নির্ধারিত তারিখ নেই। প্রত্যেক সরকারের আমলে সাধারণত একটি সভা হয়। বা তার চেয়ে বেশি হয়। দীর্ঘদিন এ গণভবনটি অবহেলিত ছিল। তাকে আমরা তৈরি করলাম।’
এ সময় পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাবসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।