আজিজুল হাকিম তামিম এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন এ মাসে। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রিকেটাঙ্গনে। মিডিয়া তাঁকে দেশের ত্যাগী ক্রিকেটার তকমা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিসিবি কর্মকর্তারা এতে রীতিমতো বিব্রত।

গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ম্যানেজার আবু ইমাম মো. কাউসার জানান, পরীক্ষার জন্য শ্রীলঙ্কা সফরের দলে না রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তারা। জাতীয় দলের সিনিয়ার সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রীতিমতো হতবাক অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়কের কাণ্ড দেখে। 

সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলছেন, আজিজুলের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। আসলে আজিজুলের এই পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ মানুষই ভালো চোখে দেখছেন না। টানা দুই বছর এসএসসি পরীক্ষা না দেওয়া ক্রিকেটারের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে মনে করেন অনেকে।

খেলাধুলার সঙ্গে শিক্ষার একটা যোগসূত্র দেখেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তাই তো পরীক্ষা না দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফর করার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। গতকাল সমকালকে এক প্রতিক্রিয়ায় সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি ছেলে তামিমের এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে শ্রীলঙ্কায় খেলতে যাওয়াকে অনেকেই সমর্থন করছেন। কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা তো বিশ্বকাপ না যে এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বাদ দেবে। আমি মনে করি তার পরীক্ষা দেওয়া উচিত। একজন ক্রিকেটারের জন্য শিক্ষাটা খুবই প্রয়োজন। শিক্ষা না থাকলে সে কী শিখবে। যারা তাঁর পরীক্ষা না দেওয়াকে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার হিসেবে দেখছেন, তারা ভুল করছেন। একেবারে অশিক্ষিত চিন্তাভাবনা।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাকে যারা গাইড করছে, তারা ঠিক করেনি। তাকে বলা উচিত ছিল পরীক্ষা দিতে। ছেলেটা পরীক্ষা দিচ্ছে না, আবার সেটা বুক ফুলিয়ে বলছে।’

আজিজুলের নেতৃত্বে গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতেছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় হিসেবে এনসিএল টি২০, বিপিএল টি২০ লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন গুলশান ক্রিকেট ক্লাবে। কথা ছিল ঈদের পর পরীক্ষার পড়ায় ডুবে থাকবেন। কিন্তু নেতৃত্ব ছুটে যাওয়ার ভয় থেকে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বলে সন্দেহ করছেন বিসিবি কর্মকর্তারা।

গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ম্যানেজার কাউসার বলেন, ‘পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে বিসিবি থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া আছে। কয়েক মাস আগে সে বলেছিল, এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। শ্রীলঙ্কা সফরের দলে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অথচ এখন সে বলছে পরীক্ষা দেবে না, শ্রীলঙ্কা খেলতে যাবে। বাবা-মাকে রাজি করিয়ে পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কার সঙ্গে কী কথা বলে সে ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছে জানি না। কারণ আমি তো বলেছিলাম স্কোয়াডে না রাখতে। শ্রীলঙ্কার পর আরও চারটি সিরিজ আছে। শ্রীলঙ্কা না গেলে কোনো সমস্যা হতো না। কে তাকে প্রভাবিত করেছে জানি না।’ 

এ ব্যাপারে আজিজুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছন্দে আছি, তাই বিরতি দিতে চাইনি। আগামী বছর বিশ্বকাপ শেষে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাব। চেষ্টা করব তখন পরীক্ষা দেওয়ার।’ 

যুবা অধিনায়কের কথা শুনে বিস্মিত নান্নু, ‘খুবই দুঃখজনক খবর। ছেলেটির উচিত ছিল পরীক্ষা দেওয়া। একটি সিরিজ মিস করলে কিছু হতো না। ক্যারিয়ার গড়তে হলে লেখাপড়া প্রয়োজন। ক্রিকেট ক্যারিয়ার হতেও পারে না-ও পারে। পরীক্ষার জন্য ১৯৮৪ সালে জাতীয় দলে খেলতে যাইনি। সাকিব আল হাসান ২০০৮ সালে এশিয়া কাপ খেলেনি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য। পড়াশোনাকে গুরুত্ব না দেওয়া পরিবারের উদাসীনতা।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আজ জ ল হ ক ম আজ জ ল র পর ক ষ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন

পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল‍্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।

আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।

২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।

পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন

আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সম‍য়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স‍্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’

আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’

একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়

২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।

আবু সালেহ আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন