স্বর্গের ঝটিকা বাহিনী, নাকি ক্ষণিক বিদ্যুৎ চমক
Published: 5th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ৫ আগস্ট রাজপথে জেনারেশন জি-র নেতৃত্বে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়। আশ্চর্য হয়ে মানুষ দেখে যে হাজার হাজার তরুণ বুলেট উপেক্ষা করে গণভবনের দিকে এগোতে থাকে। এই সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের সন্তানদের ওপর গুলিবর্ষণে অপারগতা জানান। অবশ্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক জানাচ্ছেন, তিনি আগেই সেনাবাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
এ বিস্ময়কর ঘটনার সঙ্গে অনেকে ‘ফরাসি বিপ্লবের’ সাদৃশ্য দেখেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এবং ভেবেছেন যে তারা ফরাসি বিপ্লবের মতো ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ স্থাপন করবেন। ‘সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা’ না হলেও তারা এই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র কায়েম করবেন।
কিন্তু জনগণ কি এত কিছু ভেবে এতে অংশ নিয়েছিল?
যদি তা তখন কেউ ভেবেও থাকেন, তারা জানতেন না যে তরুণদের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ‘ফরাসি বিপ্লবের’ মতো কোনো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবে পরিণত হবে না। এটি ছিল শেখ হাসিনাবিরোধী এ-টু-জেড ঐক্যবদ্ধ একটি গণঅভ্যুত্থান। এতে পেছনে থেকে দক্ষিণপন্থি জামায়াত, হেফাজত, মধ্যপন্থী বিএনপির সঙ্গে বামপন্থি দলগুলোও কম-বেশি সমর্থন দিয়েছিল। তাদের মধ্যে মতাদর্শগত কোনো ঐক্য ছিল না। শুধু একটি প্রশ্নে তারা একমত হয়েছিলেন– ‘হাসিনা তুই কবে যাবি, এক দফা-এক দাবি’; ঐক্যসূত্রটি ছিল এটিই। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর এই ঐক্য তাই অনিবার্যভাবে ভেঙে গেছে। এমনকি তরুণরা একটি নতুন দল তৈরি করে নতুন এক ধরনের গোঁজামিল দিয়ে ঐক্য সৃষ্টির কথা বলে চলেছেন। যদিও সেটি নির্বাচনের ঢেউয়ে কতখানি টিকে থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যে জাতীয় চরিত্র সৃষ্টি হয়েছিল, তা আর বিরাজ করছে না। মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে বিতর্ক আনার কারণে এটি তীব্রতর হয়েছে। আন্দোলনের শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ঐক্য কায়েমের জন্য এদের মূল অভিভাবক ড.
ফরাসি বিপ্লবে শ্রমিক শ্রেণির যে সচেতন বাহিনী জনগণের প্রজাতন্ত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়ে প্যারিসে ৭২ দিন প্যারি কমিউন গঠন করে টিকে ছিলেন এবং পরে অসময়ে বিপ্লব করার খেসারত দিয়ে বুর্জোয়া কসাইদের হাতে করুণ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কার্ল মার্ক্স সেই হঠকারী শ্রমিকদের নাম দিয়েছিলেন ‘স্বর্গের ঝটিকা বাহিনী’।
তারা ৭২ দিন প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। তাদের সাম্যের স্লোগান, মৈত্রীর স্লোগান, স্বাধীনতার স্লোগান যে আসলে ছিল বুর্জোয়াদের সাম্য, বুর্জোয়াদের মৈত্রী, বুর্জোয়াদের স্বাধীনতা– সেটি অনেক মূল্য দিয়ে পরে তারা ও আমরা সবাই বুঝেছিলাম।
বাংলাদেশের তরুণরা বরং উল্টো পথ ধরেছেন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল তৈরি করে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছেন তারা। গণপরিষদ নির্বাচন করে শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ও বক্তব্য দিয়েছেন, তা বুর্জোয়া গণতন্ত্র থেকেও পশ্চাৎপদ-তথাকথিত সর্বজনীন এক অলীক ককটেল। নতুন নাগরিক পার্টি ডিসেম্বর ও জুনের মধ্যে নির্বাচনেরও বিরোধিতা করছে। এর ফলে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের দ্বৈত ভূমিকা আছে কিনা, এ প্রশ্নও মানুষের মধ্যে রয়েছে।
ক্ষণিক বিদ্যুৎ চমকই বটে!
তবে ২০২৪-এর আগস্টে তারা যে ‘বিদ্যুতের চমক’ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা নিশ্চয় সবাই স্বীকার করবেন। এটা মিশ্র চমক। এতে মেটিকুলাস ডিজাইনের লোক ছিল, ছিল গ্রাম থেকে আসা গণরুমে নির্যাতিত অসংখ্য তরুণ। এই দুই অংশের দ্বন্দ্বের ফলে সেই চমকের পর পরই দেশে কতগুলো নেতিবাচক ঘটনা ঘটে গেছে। শেখ হাসিনার শূন্যস্থান দখল করেছেন যারা, তাদের আপাতদৃষ্টিতে কোনো স্থির রাজনৈতিক পরিচয় নেই। আছে ইউটোপীয় সংস্কারের বিশাল বিশাল পেপার ওয়ার্কস! ফলে শূন্যস্থানকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই।
অনেকে মাঠে নেমে পড়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ‘সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা’ বা ‘বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ নয়, তারা চান ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বা খিলাফত। কেউ কেউ চান ১৯৪৭-এ ফিরে যেতে, মুক্তিযুদ্ধকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিতে। দেশে ‘মব’ ভায়োলেন্সের নামে লুটপাট ও নতুন মাস্তানি শুরু হতেও আমরা দেখেছি। চাঁদাবাজি ও দখলদারি প্রবণতা নতুন করে সর্বত্র দেখা দিতে শুরু করেছে।
আমরা দেখেছি নারী ও পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ওপর অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা। আরও দেখা যাচ্ছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের’ আবহমানকালের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে নিহিলিস্ট কায়দায় প্রত্যাখ্যান ও ধ্বংস করার প্রবণতা। মাজার ও মূর্তি ভাঙার নৈরাজ্য। এসব প্রবণতা প্রমাণ করে আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যে ‘আলোর ঝলক’ ছিল, তা ক্ষণকালের বিদ্যুৎ চমকের মতোই ক্ষণকালীন হয়েছে। এখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তৈরি করে এসব প্রবণতাকে কি আটকানো যাবে?
কী বলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয়েছে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল। তারা স্লোগান দিয়েছেন– ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। কিন্তু তাদের ভাষায় এই ‘বিপ্লব’ কোনো ‘শ্রেণিসংগ্রাম’ দ্বারা পরিচালিত হবে না। এটা হবে অভিনব বাম-ডান-মধ্য– সবার মিশ্রিত অন্তর্ভুক্তিমূলক তথাকথিত এক জাতীয় সংগ্রাম। তারা ভুলে গিয়েছেন যে শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর এ ধরনের মিশ্র ঐক্যের রাজনীতি বর্তমানে অচল। এই শ্রেণিবিভেদের কালে শ্রেণি সমন্বয়ের সাদা পতাকা তুলে ধরে তারা একটা অসম্ভবকে সম্ভব করার অলীক স্বপ্ন দেখেছেন।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
আমরা চাই তরুণরা সফল হোক, তারা তাদের উপযুক্ত মিত্র ও অভিভাবকদের চিনে নিক। এ মুহূর্তের দাবি হচ্ছে, ন্যূনতম সংস্কার করে থ্রি এমের (মানি, মাসল ও ম্যানিপুলেশন) প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেইভাবে জনগণের ক্ষমতা তৃণমূলে ও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ফিরিয়ে দিলে আসলে কায়েম হবে প্রকৃত ‘রিপাবলিক’। যদি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কিংস পার্টি তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে সেই পুরোনো খেলারই পুনরাবৃত্তি হবে।
তাই তরুণ দলকে জানাই আগাম সতর্কবাণী। সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানও ইতোমধ্যে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কম কিন্তু ভালো কিছু সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা গেলে এ যাত্রায় আমাদের তরুণদের উদ্যোগ সফল হবে বা হয়েছে বলে আমরা মনে করব। বাকি কাজ দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের ও জনগণের চেতনার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজস্ব শক্তিতে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। হাজার হোক জনগণ যতটুকু মাত্রায় আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে পারে ততটুকু মাত্রাতেই প্রজাতন্ত্রের স্রষ্টা ও মালিক হতে পারে।
এম এম আকাশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের
প্রাক্তন অধ্যাপক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণত ন ত র ক র জন ত ক স ব ধ নত ব যবস থ প রবণত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে এটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এই ঘোষণাপত্রকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি। সেটা আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এর চেয়ে বড় জাতীয় সম্মতি আর নেই। এটা আইনের ঊর্ধ্বে। এটা জনগণের অভিপ্রায়। এটা সার্বভৌম ব্যাপারের কাছাকাছি হয়ে গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো জানান সালাহউদ্দিন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ নামে যে খসড়া বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বাক্যগত কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। সনদে প্রস্তাব আছে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারা বলেছিল এই প্রতিশ্রুতিগুলো পালনের জন্য, সংবিধানে এবং বিভিন্ন আইনে, বিধিবিধানে। সেখানে যা পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়, এটি একধরনের “লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন অব দ্য পিপল”। জনগণের এই প্রত্যাশা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার জন্য আমরা অঙ্গীকার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে এই ঘোষণাপত্র এসেছে। সেটার বৈধতা আমরা সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেব। এটাকে যদি আমরা আইনে ভিত্তি না বলি তাহলে কোনটাকে বলব?’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাঁদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।’
উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের যৌথভাবে পাস হওয়া আইনের মধ্য দিয়ে একটি শেয়ারড লেজিসলেটিভ প্রসেস গড়ে ওঠার প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির এই নেতা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা করবে, সুপারিশ করতে পারবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। তবে আমরা উচ্চকক্ষের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিনতর করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।
এ ছাড়া মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত আলোচনাও এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আধুনিক সময়ের আলোকে কিছু অধিকার যেমন ইন্টারনেটের অধিকার যুক্ত করা যায় কি না। তবে মৌলিক অধিকার একবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ, সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে থাকা অধিকারগুলো সেলফ এনফোর্সেবল এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকেরা তা প্রয়োগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে নতুন কোনো অধিকার সংযোজন করতে হবে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।