গ্রামে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালগুলোতে শনিবারও দেখা গেছে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়। এদিকে টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস খুলছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ ব্যবস্থায় বাড়তি এক দিন যোগ করে টানা ৯ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করেছিল সরকার।
যানবাহনের চাপ নেই
এবার রাজধানীর প্রবেশমুখে ভিড় ও যানবাহনের চাপ নেই। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দূরপাল্লার বাসে করে মানুষ এসে নামছে। মহাখালী ও সায়েদাবাদ এলাকাতেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। যাত্রীরা জানান, এবার ঈদযাত্রা ছিল অনেকটাই স্বস্তির। বাড়ি যাওয়ার মতো ফেরার সময়ও তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। সাইফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে এসেছি। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট ছিল না, স্বস্তিতেই ফেরা গেছে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার ট্রেনে বাড়ি যাওয়া ও ফেরা স্বস্তির ছিল। ট্রেনে বাড়তি যাত্রী থাকলেও সময়মতো ছেড়েছে।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে ঢাকামুখী রাস্তায় গতকাল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ছুটি শেষে ঢাকাগামী মানুষ ও লাঙ্গলবন্দ পুণ্যস্নানে আসা পুণ্যার্থীরা।
ঢাকায় নেই চিরচেনা যানজট
রাজধানীর সড়কে এখনও ছুটির আমেজ রয়েছে। গতকাল দিনভর সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। মোড়ে মোড়ে সিগন্যালে পড়লেও খুব বেশি সময় আটকে থাকতে হচ্ছে না।
মিরপুর, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বিশ্বরোড, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। যানবাহনের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও সীমিত। ইসিবি চত্বর মোড়ে দায়িত্ব পালন করা এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় চাপ কম।
ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী
ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী (একক মানুষ)। ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল সাত দিনে ১ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার ১৫৫ সিমধারী ঢাকার বাইরে গেছেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুকে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
সমকাল প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে মানুষের ফেরার পথে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু ব্যক্তি যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন। গতকাল রাজশাহী, বগুড়া, বরগুনা ও পাবনা থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু পরিবহনে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মুখে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর পাবনায় সাতটি বাস ও সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশাকে ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বরগুনা থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামগামী বাসগুলোর টিকিটে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বরগুনা থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭৩৭ টাকা। ঈদের আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় বাস ভাড়া নেওয়া হতো
৬০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।