উম্মে মাহজান নামের আবিসিনিয়ার এক নারী প্রায়ই একটি কবিতা আবৃত্তি করতেন। কবিতার দুটি চরণ ছিল এমন, ‘সেই স্কার্ফের দিনটি আমার প্রতিপালকের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ। জেনে রাখুন, সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর হতে মুক্তি দিয়েছে।’
নবীজি (সা.) ও আয়িশা (রা.) দুজনেরই বেশ কৌতূহল জাগল, কোন তিনি এই দুটি চরণ আবৃত্তি করেন? একদিন আয়িশা (রা.
উম্মে মাহজান (রা.) ছিলেন আবিসিনিয়ার অধিবাসী একজন দাসী। একদিন তাঁর মনিবের মেয়ের মূল্যবান লাল স্কার্ফটি হারিয়ে যায়। একটি চিল সেটাকে মাংস মনে করে নিয়ে যায়। কিন্তু সবাই ভাবল উম্মে মাহজান চুরি করেছেন। তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তাঁর উত্তর শুনে তারা সন্তুষ্ট হলো না। তাঁকে তল্লাশি করা হলো। তাঁর কাপড় খুলে তন্নতন্ন করে স্কার্ফটি খুঁজতে থাকল মনিবের লোকেরা।
কোথাও খুঁজে পেল না। এমন অসহায় অবস্থায় উম্মে মাহজান (রা.) কাঁদতে থাকেন। ঠিক তখনই চিলটি তাদের সামনে স্কার্ফটি ফেলে যায়। উম্মে মাহজান (রা.) বললেন, ‘তোমরা তো এই স্কার্ফের জন্যই আমাকে সন্দেহ করেছিলে, তাই না? অথচ আমি ছিলাম নির্দোষ।’
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৫ মার্চ ২০২৫মনিব ও তার লোকেরা বুঝতে পারল, তারা ভুল করে দাসীটির মানহানি করেছে। তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। মাত্র দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়া উম্মে মাহজান কোথায় যাবেন? তিনি শুনতে পেলেন রাসুলের (সা.) কথা, যিনি মদিনায় ইসলামের প্রচার করছেন। উম্মে মাহজান (রা.) নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটলেন মদিনায়। রাসুলের (সা.) কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসুল (সা.) উম্মে মাহজানের অসহায়ত্ব বুঝতে পারলেন, তিনি খোদ মসজিদে নববীতে একটি তাঁবুর ব্যবস্থা করে উম্মে মাহজানকে থাকতে দেন। অনেকটা ইতিকাফের সময় যেভাবে তাঁবু বানিয়ে থাকা হয়, সেভাবে উম্মে মাহজান মসজিদে থাকেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩৯)
উম্মে মাহজানের মসজিদে থাকার গল্প অনেকটা ঈসা (আ.)-এর মা মারিয়াম (আ.)-এর গল্পের মতো। তার মতোই উম্মে মাহজান মসজিদ ঝাড়ু দিতেন, সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতেন। নামাজের সময় নামাজ পড়তেন।
একবার অনেকদিন ধরে রাসুল (সা.) উম্মে মাহজানকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তিনি আর আগের মতো মসজিদ ঝাড়ু দিচ্ছেন না, মসজিদের তাঁবুতেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেলেন? সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন তিনি। সাহাবিরা উত্তর দিলেন, ‘তিনি তো মারা গেছেন।’
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কখন পড়ব০৪ মার্চ ২০২৫রাসুলের (সা.) মন খারাপ হলো, পাশাপাশি কিছুটা রাগও হলো, তাঁকে খবর দেওয়া হলো না কেন? সাহাবিরা মূলত উম্মে মাহজান (রা.)-এর বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি। আবিসিনিয়ার এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী, যিনি কিনা একসময় দাসী ছিলেন, তিনি আর এমন কী যে, তাঁর মৃত্যুর সংবাদও রাসুল(সা.)কে জানাতে হবে। তদুপরি তার মৃত্যু হয়েছে রাতে, যখন রাসুলকে বিরক্ত করা যায় না।
রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাঁকে কোথায় দাফন করা হয়েছে? তাঁর কবর আমাকে দেখাও।’
সাহাবিরা কবর দেখিয়ে দিলে রাসুল (সা.) পুনরায় তাঁর জানাজার নামাজ পড়লেন, উম্মে মাহজানের(রা.) জন্য দোয়া করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৩৩৭)
আরও পড়ুনসুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।