গাজার অভ্যন্তরে সীমান্তের কাছে বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘হত্যা জোন’ তৈরি করছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ওই স্থানে যে কেউ প্রবেশ করলে তাঁকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে গেছে আইডিএফ। পাশাপাশি উপত্যকার আরও ভেতরে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে ইসরায়েলের বাহিনী। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সেই সঙ্গে গাজাজুড়ে অব্যাহতভাবে চলছে হামলা ও বিমান হামলা। সোমবার এক দিনে আরও ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামলার শিকার হয়েছে সাংবাদিকদের একটি তাঁবু। সেখানে এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, গাজা সীমান্তের ভেতরে এক কিলোমিটার এলাকায় বাফার জোনের নামে ওই ‘হত্যা জোন’ গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য ওই এলাকার বাড়িঘর, কারখানা ও খামার গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। চার সেনা সদস্য জানান, এ অঞ্চলটি গঠন করা হচ্ছে, যাতে তারা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সীমান্তে কথিত ওই বাফার জোনে কেউ প্রবেশ করলেই তাঁকে হত্যা করা হবে, সে ধরনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।

এ জোন করতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও ক্ষান্ত নয় আইডিএফ। গত মাসে হামাসের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নাটকীয়ভাবে অবস্থান প্রসারিত করেছে। এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাজার ৫০ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড। এতে ফিলিস্তিনিরা ক্রমেই সংকুচিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের দখলে নেওয়া জমি তারা দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ জমির মধ্যে একটি করিডোর আছে, যা এ অঞ্চলের উত্তর থেকে দক্ষিণকে বিভক্ত করে। সম্প্রতি ওই করিডোরটি আবার নিয়ন্ত্রণে নেয় ইসরায়েল।   

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগে বাধ্য করবে। তিনি জানান, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজাজুড়ে আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়, যা রাফা শহরকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। 
এপি জানায়, অতীতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি যে জমিতে বাস করত, তা এখন ইসরায়েলের বাফার জোন। অথচ এ এলাকাটিই একসময় গাজার কৃষি উৎপাদনের মূল চাবিকাঠি ছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একসময়ের ঘনবসতিপূর্ণ বসতি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। সেসঙ্গে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে সেখানে প্রায় এক ডজন নতুন ইসরায়েলি সেনা ফাঁড়ি তৈরি হয়েছে। 
এ অবস্থায় গাজায় মানবিক সংকট ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। উপত্যকায় এক মাস ধরে ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। জাতিসংঘ ও কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিএনএনকে জানায়, উপত্যকায় অনাহার বেড়ে চলেছে। সেখানে পানির সরবরাহ অতি সামান্য। অধিকাংশ মানুষ তাঁবুতে আছেন। ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির পর গত ১৮ মার্চ আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সেসঙ্গে বেশ কয়েকটি বাস্তুচ্যুতির নির্দেশও দেয়। এতে গত দুই সপ্তাহে ২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন প্রবেশনিষিদ্ধ এলাকা। 

এ অবস্থার মধ্যেই গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। রোববার গভীর রাতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসও পাল্টা হামলা চালায়। তারা তেল আবিবের উদ্দেশে অন্তত ১০টি রকেট ছুড়েছে। এতে এক ইসরায়েলি আহত হয়েছেন। এদিন ইসরায়েল খান ইউনিসে সাংবাদিকদের একটি তাঁবুতেও হামলা চালিয়েছে। এতে ফিলিস্তিনের এক সাংবাদিক নিহত ও আরও ৯ জন আহত হয়েছেন। রয়টার্সের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় বিমান হামলায় সৃষ্ট আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। 

গত ২০ দিনে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১ হাজার ৩৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিশু ৪৯০। এ হত্যা-ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোমবার বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে গেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
চিকিৎসাকর্মীদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে হত্যার ভিডিও প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। ২৩ মার্চ ১৫ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে হত্যা করা হয়। তারা ছিলেন ফিলিস্তিন রেড ক্রস সোসাইটির (পিআরসিএসের) একটি অ্যাম্বুলেন্সে। ইসরায়েলের দাবি, ওই চিকিৎসাকর্মীরা বাতি বন্ধ করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। জানা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

পশ্চিমতীরেও চলছে দমনপীড়ন। সেখানে রোববার রাতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি-মার্কিন এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরও দু’জন আহত হয়েছেন। আইডিএফ বলছে, তাদের ওপর পাথর ছুড়ে মারা হচ্ছিল। রামাল্লার গভর্নর লায়লা গান্নাম বলেন, তুরমুসায়া এলাকায় ১৪ বছরের ওই ছেলেকে হত্যা করা হয়।
এদিকে মিসরের কায়রো সফরে এসেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ সময় তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণ সরবরাহে অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। মাখোঁ মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ সিসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প ন ইসর ইসর য অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ