বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ স
Published: 9th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশে নিযুক্ত বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান।
বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ব্যারোনেস উইন্টারটন বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে দীর্ঘ ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আপনাদের সংস্কার কার্যক্রমের দিকনির্দেশনায় সন্তুষ্ট।’’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘আমরা এক রূপান্তরকালীন সময় অতিক্রম করছি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাসে মনোযোগী।’’
তিনি বাংলাদেশের দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে নার্সের অভাব রয়েছে। তবে নার্সিং শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, এটি একটি বৈশ্বিক প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশ ও বিশ্বের জন্য আরও নার্স তৈরি করতে চাই।’’
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের প্রতি বাংলাদেশের স্বল্প সম্পদযুক্ত স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর। এইখানেই যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ফার্মাসিউটিক্যাল খাতও একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। আমরা চাই আপনারা ভ্যাকসিনের পেটেন্ট সুরক্ষা তুলে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, যাতে একটি সামাজিক ব্যবসার মডেলে প্রতিটি দেশ তা সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করতে পারে।’’
বৈঠকে উভয়পক্ষ কৌশলগত সহযোগিতার আরও বিস্তৃত ক্ষেত্র, যেমন শিক্ষা, টেক্সটাইল শিল্প, প্রতিরক্ষা এবং বিমান চলাচল নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, টেক্সটাইল খাত আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষা ও বিমান খাতে নতুন সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সহায়তা স্বাগত জানাই।’’
উভয়পক্ষ এ সময় এসব খাতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নারী সমতা নিয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি খাতে নারীর অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।’’
ব্যারোনেস উইন্টারটন বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার এজেন্ডার প্রতি যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কার্যক্রমের প্রধান আলী রিয়াজের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়ে একমত হয়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে যদি দীর্ঘ সংস্কার প্রক্রিয়ার পথ বেছে নেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।’’
বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।