রোহিঙ্গা সংকট একটি আসিয়ান সংকট: মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Published: 10th, April 2025 GMT
মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওয়াইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ হামিদ আলবার বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে আর কেবল মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না। এটি এখন আসিয়ান অঞ্চলের একটি সম্মিলিত মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট।
বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি অভিজাত হোটেলে ‘জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর ২০২৫: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আঞ্চলিক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি স্টাডি গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল ড.
ড. সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, ফলে এখন সময় এসেছে বিকল্প কৌশল ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর কার্যকর সমাধান অনুসন্ধানের। মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ার হওয়ায়, এটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা এই সংকটের টেকসই সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমার কর্তৃক ১.৮ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু চুক্তি যথেষ্ট নয়—বাস্তবায়নই মূল চাবিকাঠি। কেবল অ্যাডভোকেসি নয়, এখন প্রয়োজন বহুস্তরীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে সিএনআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান আশফাক জামান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধানে পারস্পরিক আস্থা, প্রত্যাশা এবং বাস্তবায়নযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। চুক্তি কার্যকর করতে হবে—এই মানুষগুলোকে অবশ্যই আশার বার্তা দিতে হবে।
মালয়েশিয়ার ইসলামী এনজিও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল শামসুদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগণের পাশে রয়েছে—এখন সময় এসেছে আসিয়ান জোটের নেতৃত্বে এই সংকট সমাধানের জরুরী কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার।
মালোশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও এবিআইএম-এর সভাপতি মো. ফাহমি সামসুদ্দিন বলেন, মুসলিম বিশ্বের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রহীন ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি।
পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনৈতিক আহাদ আসাদ আব্বাস খান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে ওআইসি এবং ও আসিয়ানের যৌথ উদ্যোগে মুসলিম বিশ্বের একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তুলতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ন্যায়বিচার, সুরক্ষা এবং স্বেচ্ছাপ্রসূত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিভারসিটি অব মালায়ার শিক্ষক ড. সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মালয়েশিয়া বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. বোরহান আহমেদ, আইপিজিএডির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।