একদিকে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, অন্যদিকে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের তাগিদ—এই দুইয়ের মধ্যে কতটা ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন তোলপাড় করছে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের। এ পরিস্থিতিতে ভারতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। ২১ থেকে ২৪ এপ্রিল তাঁর ভারতে থাকার কথা।

ভ্যান্সের সঙ্গে ভারতে আসছেন তাঁর ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী ঊষা ভ্যান্সও। ওই একই সময়ে ভারত সফর করার কথা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎসেরও।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি কী করে দুই দেশের পক্ষেই ‘উইন উইন’ বা লাভজনক হতে পারে, আপাতত সেই চিন্তায় বিভোর ভারত। শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘যুদ্ধংদেহি’ মনোভাবের মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ঠিক রাখতে হবে ভারতকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, দুই লক্ষ্যই ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই ভারসাম্যের খেলাই ভারতকে খেলতে হবে। সে জন্য হাতে বেশি সময় নেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা মোটামুটিভাবে চূড়ান্ত করা, যাতে ৯০ দিনের মধ্যে তা অন্তত ঘোষণা করা যায়।

এ পরিস্থিতিতে ভারতের মনোভাব কিছুটা উন্মুক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা তিনিই চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সফরের মাত্র ১০ দিন আগে গত শুক্রবার পীযুষ জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে। কোনোভাবেই সেই চুক্তি একতরফা হবে না। চুক্তি সই হবে ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ ও ‘বিকশিত ভারত’–এর কথা মনে রেখে। বন্দুকের নলের মুখে ভারত আলোচনা করবে না।

চড়া শুল্ক হার বসিয়েও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন। ভারত চাইছে, এই সময়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে, যাতে ওই চড়া শুল্কহার এড়ানো যায়। গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত খুবই জরুরি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে।

জয়শঙ্কর বলেন, ট্রাম্প লেনদেনের নীতিই বদলে দিতে চাইছেন। ফলে এর প্রভাব সর্বত্র পড়বে। বিশেষ প্রভাব পড়বে প্রযুক্তিক্ষেত্রে।

সেই ধাক্কা কোথায় কতটা পড়বে, অন্য সব দেশের মতো ভারতও তা খতিয়ে দেখতে চাইছে। সেই সঙ্গে চাইছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়েনের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলতে। উদ্দেশ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি ধাক্কা খেলে ইউরোপের বাজার মারফত যাতে সামাল দেওয়া যায়।

ভারত সফরে জে ডি ভ্যান্স ও ওয়ালৎস বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও আলোচিত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জৈব প্রযুক্তি, শক্তি ও মহাকাশ গবেষণার মতো বিষয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ