যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে চিন্তায় ভারত
Published: 12th, April 2025 GMT
একদিকে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, অন্যদিকে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের তাগিদ—এই দুইয়ের মধ্যে কতটা ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন তোলপাড় করছে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের। এ পরিস্থিতিতে ভারতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। ২১ থেকে ২৪ এপ্রিল তাঁর ভারতে থাকার কথা।
ভ্যান্সের সঙ্গে ভারতে আসছেন তাঁর ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী ঊষা ভ্যান্সও। ওই একই সময়ে ভারত সফর করার কথা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎসেরও।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি কী করে দুই দেশের পক্ষেই ‘উইন উইন’ বা লাভজনক হতে পারে, আপাতত সেই চিন্তায় বিভোর ভারত। শুল্ক নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘যুদ্ধংদেহি’ মনোভাবের মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ঠিক রাখতে হবে ভারতকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, দুই লক্ষ্যই ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই ভারসাম্যের খেলাই ভারতকে খেলতে হবে। সে জন্য হাতে বেশি সময় নেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা মোটামুটিভাবে চূড়ান্ত করা, যাতে ৯০ দিনের মধ্যে তা অন্তত ঘোষণা করা যায়।
এ পরিস্থিতিতে ভারতের মনোভাব কিছুটা উন্মুক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা তিনিই চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সফরের মাত্র ১০ দিন আগে গত শুক্রবার পীযুষ জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে। কোনোভাবেই সেই চুক্তি একতরফা হবে না। চুক্তি সই হবে ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ ও ‘বিকশিত ভারত’–এর কথা মনে রেখে। বন্দুকের নলের মুখে ভারত আলোচনা করবে না।
চড়া শুল্ক হার বসিয়েও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন। ভারত চাইছে, এই সময়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সেরে ফেলতে, যাতে ওই চড়া শুল্কহার এড়ানো যায়। গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত খুবই জরুরি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ট্রাম্প লেনদেনের নীতিই বদলে দিতে চাইছেন। ফলে এর প্রভাব সর্বত্র পড়বে। বিশেষ প্রভাব পড়বে প্রযুক্তিক্ষেত্রে।
সেই ধাক্কা কোথায় কতটা পড়বে, অন্য সব দেশের মতো ভারতও তা খতিয়ে দেখতে চাইছে। সেই সঙ্গে চাইছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়েনের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলতে। উদ্দেশ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি ধাক্কা খেলে ইউরোপের বাজার মারফত যাতে সামাল দেওয়া যায়।
ভারত সফরে জে ডি ভ্যান্স ও ওয়ালৎস বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। দুই দেশের নেতাদের বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও আলোচিত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জৈব প্রযুক্তি, শক্তি ও মহাকাশ গবেষণার মতো বিষয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’