বর্ণিল আয়োজনে রাবিতে নতুন বছরকে বরণ করে নিলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 14th, April 2025 GMT
বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে রঙ-বেরঙের পোশাকে সেজেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি-গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সকলে একযোগে দিনটি উদযাপন করছেন। বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচছেন শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিল মুখোশ, লোকজ ও প্রতিবাদের বিভিন্ন মোটিফ। এমন বর্ণিল আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপিত হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট আলাদাভাবে শোভাযাত্রা বের করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা কিছু জটিলতার কারণে সম্ভব হয়নি। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শোভাযাত্রাটি বের করা হয়। এবারের শোভাযাত্রায় চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে গ্রামীণ ও লোকজ সংস্কৃতি এবং ফিলিস্তিন ইস্যুর বিভিন্ন মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শোভাযাত্রায় বাউল, বর-নববধু, কৃষকসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হন শত শত শিক্ষার্থী।
শোভাযাত্রাগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিজ নিজ আয়োজনে অংশ নেয়। এই আয়োজনে ছিল কবিতা আবৃত্তি, লোকসংগীত পরিবেশনা, গ্রামীণ মেলা ও পান্তা-ইলিশ।
শিক্ষার্থীরা জানান, পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র আনন্দ নয়, বরং সংস্কৃতি, প্রতিবাদ ও সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ। নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি ও শুভবুদ্ধি—এই কামনা করেছেন তারা।
উদ্ধোধনী বক্তব্যে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘উৎসব মানুষকে কাছাকাছি করে। মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সহমর্মিতার সৃষ্টি করে। একটি দিবস বা উৎসবকে সামনে রেখে আমরা একত্রিত হই। এতে সামাজিক পরিসরের ভাব আদান-প্রদান ও পরিচয় শক্তশালী হয়। এর প্রভাব জাতীয় জীবনে পড়ে। তেমনি বাংলা নববর্ষ আমাদের পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। প্রত্যেকটি উৎসবের যেমন ঐক্যবদ্ধ করার শক্তি আছে, তেমনি বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ আছে। আমরা অতীতে দেখেছি, উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রলুব্ধ ও নিজেদের তথাকথিত চিন্তাভাবনা গণমানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ন্যক্কারজনক প্রবণতা। চব্বিশ পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে চাই, এ ধরনের অনুশীলন জাতীয় জীবন থেকে দূরীভূত হয়েছে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু