মায়ের কাছে এ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী উপহার তার নাড়ী ছেড়া ধন, সন্তান। সেই সন্তানের জন্ম যদি হয় বিশেষ কোনো দিনে, সেটি যোগ করে বাড়তি আনন্দ। পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে বিথী-মেহেদী দম্পত্তির কোল আলো করে ফুটফুটে পুত্র সন্তানের আগমন বাঁধ ভাঙা আনন্দে ভাসিয়েছে তাদের।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাড়িপাড়া ইউনিয়নের দোবারিয়া এলাকার ফারহানা আক্তার বিথি ও মেহেদী সরদার দম্পত্তির জীবনে সোমবার সকালটা স্মরণীয় হয়ে রইল।

এর আগে রোববার সন্ধ্যার দিকে ব্যথা উঠলে বিথিকে প্রায় ১৫ কিলমিটার পথ ইজিবাইকে করে এনে বাগেরহাট শহরের সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকার বিথি ও দোবারিয়া গ্রামের মেহেদী। বিথি গৃহিণী, মেহেদী করেন মাছের ব্যবসা।

নবজাতকের খালা ফারজানা আক্তার সাথী বলেন, ‘আমরা দুই বোন, কোনো ভাই নেই। আমাদের বাবা সবসময় নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন আমাদের ঘরে আল্লাহ প্রথম ছেলে সন্তান দেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবুল করেছেন। আমারও প্রথম ছেলে সন্তান, আমার বোনেরও ছেলে সন্তান হয়েছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে বের হওয়ার পর নার্সের কোল থেকে বাচ্চাকে প্রথম আমার কোলেই দিয়েছিল। আমি ওর জন্য আগে থেকে কয়েক সেট ড্রেস কিনে রেখেছিলাম। সেখান থেকে একটি পরিয়েছি।’

শিশুটির নানি হালিমা বেগম বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের দিনে আমার ছোট মেয়ের ছেলে সন্তান হয়েছে, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। আমি খুশিতে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। হাসপাতালে সকলে খুবই আন্তরিক। বেলা ১১টায় হাসপাতালের ম্যানেজার এসে শিশুর মা ও আমাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সবাই সুস্থ আছে। ডাক্তার বলেছে কোন ধরনের ঝুঁকি নেই মা ও শিশুর। আর আমাদের বেশি চিন্তাও নেই, কারণ জামাই বাবাজি মেয়ের সুস্থতা নিয়ে বেশ সচেতন। আশা করি অনাগত দিনগুলো নতুন অতিথির সাথে সবার হাসি-আনন্দে কাটবে।’

নবজাতকের গর্ভধারিনী বিথি বলেন, ‘মা হওয়া যে কত আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সন্তানকে যে কোনো পরিস্থিতিতে মা কেন বুকে আগলে রাখেন তা এখন বুঝতে পারছি।’

অপারেশন টেবিলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব বেশি লেবার পেইন ছিল না বলে জানান বিথি। তিনি আরো বলেন, এতদিন স্থানীয়ভাবে রাড়িপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলেছেন। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১৫ এপ্রিল, অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার। কিন্তু শরীরে কিছুটা পানিশূন্যতা থাকায় একদিন আগে সিজার করা হয়।

বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম নিবে বলে আশা করেছিলেন কিনা–এমন প্রশ্নে বিথি বলেন, ‘আল্ট্রাসোনাগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ ছিল বৈশাখের দ্বিতীয় দিনের কথা, তবে একদম নববর্ষের দিনে হবে তা আশা করিনি। নববর্ষের দিনে প্রথম সন্তান হওয়ায় দিনটি আরো স্মরণীয় হয়ে রইল’– যোগ করেন তিনি।

নববর্ষে এমন এক উপহার পেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিথি। তাঁর স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে একজন আদর্শবান ডাক্তার হবে সন্তান। যাতে সমাজ ও দেশের সেবা করতে পারে সে। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অসহায় মানুষদের পাশে তাঁর সন্তান দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা এই মায়ের।

সূর্যের হাসি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার রিফাত আরা শীলা বলেন, রোববার রাত ১১টার দিকে বিথিকে তাদের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। তিনি বলেন, ‘নববর্ষের এই শুভদিনে নতুন প্রাণের আগমন আমাদেরও আপ্লুত করেছে। মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছেন। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের যত্ন নিচ্ছি। বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। এখনও পর্যন্ত মায়ের দুধ যথেষ্ট। যেহেতু স্বাস্থ্য ভালো আছে এবং উভয়েই সুস্থ আছে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা জরুরি।’ পরিবারটিও সে বিষয়ে সচেতন রয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।

শিশুর বাবা মেহেদী সরদার বলেন, ‘প্রথম বার বাবা হওয়ায় অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। তাও আবার ঐতিহ্যবাহী দিনে। তবে রোববার রাতে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম সন্তান তো, স্ত্রীর কিছুটা ব্যথা হচ্ছিল। বিশেষ করে ক্লিনিকে নিয়ে আসার পথটুকু ১৫ কিলোমিটার হলেও মনে হচ্ছিল হাজার মাইল। রাতে ঘুমাতে পারিনি। বাবা হওয়া একটি স্বপ্নের মত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এখন মনে হচ্ছে মা-বাবার সঙ্গে অনেক ভুল করেছি। বিভিন্ন সময় বুঝে-না বুঝে তাদের কষ্ট দিয়েছি। যখন নিজের সন্তানের মুখ দেখলাম, তখন মনে হলো বাবা-মায়ের প্রতি আরো যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।’ মেহেদী জানান, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই রক্ত দিতে আসা তাহিদুল ইসলাম নবজাতককে আজান শুনিয়েছেন। শিশুটির কোনো নাম এখনো ঠিক করা হয়নি বা আত্মীয়-স্বজন কেউ প্রস্তাব করেনি বলে জানান তিনি। বাড়ি ফিরে আকিকা করে নাম রাখা হবে। আপাতত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে। আর সকলের কাছে শিশু ও শিশুর মা যেন সবসময় সুস্থ থাকে সেই দোয়া কামনা করেছেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট নববর ষ র আম দ র প রথম আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • সবাই আমাকে ভার্সেটাইল অভিনেতা বলেন, কিন্তু কাজ দেয় না: রুদ্রনীল