আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত সেবাকর্মীদের জন্য আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা-২০২৫ জারি হয়েছে। এ নীতিমালায় সরকার সেবাকর্মীদের কাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কয়েকটি সুবিধা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এ নীতিমালা জারি হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে নববর্ষের উপহার হিসেবে আজ এ নীতিমালা জারি হয়।

এতে আরো বলা হয়, পাঁচটি ক্যাটাগরির সেবা ও তিনটি বিশেষ সেবা জনপ্রতি মাসিক সেবামূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া এক মাসের সমপরিমাণ সেবামূল্যের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) হারে দুটি ও এক পঞ্চমাংশ (২০ শতাংশ) হারে বৈশাখী প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে নববর্ষের উপহার হিসেবে আজ এ নীতিমালা জারি হয়।

এতে আরো বলা হয়, পাঁচটি ক্যাটাগরির সেবা ও তিনটি বিশেষ সেবা জনপ্রতি মাসিক সেবামূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া এক মাসের সমপরিমাণ সেবামূল্যের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) হারে দুটি ও এক পঞ্চমাংশ (২০ শতাংশ) হারে বৈশাখী প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।

পাশাপাশি সেবাকর্মীদের বার্ষিক ১৫ দিনের ছুটি ও মৌলিক কাজ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি সেবাকর্মীকে প্রতি বছর দুটি নতুন ইউনিফর্ম প্রদান করা হবে।

নারী সেবাকর্মীরা ৪৫ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় ক্রয়কৃত সেবামূল্য সেবাকর্মীর নিজ নামেও ব্যাংক মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রদেয় হবে।

সর্বোপরি সেবাকর্মীরা তার মাসিক সেবামূল্য কর্মকালীন মাসের পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রদান নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আউটস র স কর ম দ র স ব কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পে নারী কর্মীদের চাকরি কেন অনিশ্চিত

গত ২২ মে থেকে প্রেসক্লাবের সামনে একদল নারী অবস্থান নিয়েছেন; ঈদের দিনেও তাঁরা সেখানে ছিলেন। সুদূর কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা এসেছেন। আগামী ৩০ জুন থেকে তাঁরা চাকরিহীন হবেন। এই নারীদের অনেকেই তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সন্তানের স্কুলের খরচ, মাসের বাজার খরচ, পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচ—এসব এক হাতে সামলান তাঁরা।

এই নারীরা ‘মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়’ (বর্তমানে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়) আওতাধীন একটি প্রকল্পের কর্মী। প্রকল্পটির নাম হলো ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’। ১৯৮৯ সালে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে নারীদের প্রশিক্ষণ, নারীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার খাত তৈরি করা এবং স্বাস্থ্য ও আইনি কাঠামোর অগ্রসরতা নিয়ে কাজ রয়েছে। কিন্তু গত দুই দশকে এগুলোর কলেবর বেড়েছে।

বিদেশি অর্থায়নের সহায়তায় সামাজিক সুরক্ষার আওতায় মন্ত্রণালয়টি নারীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু বড় বাজেটের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম, জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প (৬৪ জেলা), তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল, তথ্য আপা প্রভৃতি। এ প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম, প্রভাব ও ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মতো মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোও লুটপাটের অংশ হয়ে উঠেছিল। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় দায়িত্ব হচ্ছে এ প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে, সেগুলোর ভুলত্রুটি ও সাফল্য-ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের ভূমিকাকে আরও গতিশীল করা। অথচ আমরা দেখছি নারীর ক্ষমতায়ন অনিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; তথ্য সেবাদানকারী নারী কর্মকর্তা ও সহকারীদের কর্মসংস্থান অনিশ্চিত করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এমন একটি উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।

২.

সরকারের সব বিভাগের সহযোগিতার তথ্য নিয়ে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় নারী ও শিশুদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান করার চিন্তা থেকেই ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। ২০১১ সালে প্রকল্পটির ১ম পর্যায় শুরু হয় ১৩টি উপজেলায়। পরে ২০১৭ সালে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৯২টি উপজেলায় এটি বিস্তৃত হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকেই প্রতিটি উপজেলা তথ্যকেন্দ্রে একজন তথ্যসেবা অফিসার এবং দুজন তথ্যসেবা সহকারী অফিসার নিয়োগ হয়। এই তথ্যসেবা প্রদানকারী অফিসাররা ‘তথ্য আপা’ বলে পরিচিতি পান।

‘তথ্য আপা’রা তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার-পরিকল্পনাসেবাসহ অনলাইনভিত্তিক সেবা বিনা মূল্যে প্রদান করেন। তা ছাড়া বাড়ির দোরগোড়ায় (ডোর স্টেপ সার্ভিস) উঠান বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে ‘তথ্য আপা’রা বিনা মূল্যে সরকারি সেবা–সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দেন। অনলাইনে আবেদনের জন্য নারীদের সহযোগিতা করে। বিশেষ করে উপজেলাভিত্তিক নারীরা তাঁদের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মা ও শিশুসহায়তা ভাতার জন্য অনলাইন আবেদন, সরকারি খাদ্যসহায়তা, ঘর বরাদ্দের আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদ, পাসপোর্ট এবং ভিসার অনলাইন আবেদন, টিকার রেজিস্ট্রেশন পূরণ ও সনদ সংগ্রহ, টিন সার্টিফিকেটের আবেদনের কাজগুলো ‘তথ্য আপা’র সহায়তায় করে থাকেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হলে নারীরা ‘তথ্য আপাদের’ কাছে যান। অনেক সময় নারীরা পুলিশের কাছে কীভাবে সহায়তা পাবেন, তা জানা না থাকলে ‘তথ্য আপাদের’ ওপর আস্থার কারণে তাঁদের সহায়তা চান। গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি প্রতিটি তথ্যসেবাকেন্দ্র এক একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে থাকে। গ্রামীণ উদ্যোক্তা নারীরা যাতে তাঁদের পণ্য ‘লালসবুজ ই-কমার্স’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারে, সে ক্ষেত্রেও তথ্য আপারা নারীদের সহায়তা করেন।

কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে কীভাবে ভুক্তভোগী নারী সরকারি সহায়তা পেতে পারেন, সেই কাজও ‘তথ্য আপা’রা করেন। প্রকল্পের আওতায় তথ্য আপারা প্রাথমিক কিছু স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। এর ফলে বাড়ির উঠানে গিয়ে তাঁরা নারীদের রক্তচাপ, ওজন পরীক্ষা নিয়মিতভাবে করে থাকেন। এককথায় বলা যায়, দেশব্যাপী প্রায় ১ হাজার ৯৬৮ জন ‘তথ্য আপা’ গ্রামীণ নারীদের তথ্যসেবার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন।

 সেই তথ্য আপারা চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রেসক্লাবে বসে আছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করা তথ্য আপারা নিজেরা কতটুকু ক্ষমতায়িত হলেন? এত দিনে তৈরি হওয়া তাঁদের দক্ষতা, তাঁদের ওপর নারীদের তৈরি হওয়া আস্থা তো তাঁরা অর্জন করেছেন বহুদিনের পরিশ্রম ও বিনিয়োগের মাধ্যমে; তাঁদের এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে কীভাবে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব?

৩.

তথ্য আপা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে সুনির্দিষ্টভাবে লেখা আছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ করার পর তথ্য আপাদের স্থায়ী করা হবে অথবা নতুন পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে। নিয়োগ অস্থায়ী হলেও তথ্য আপারা বারবার তাঁদের পদ স্থায়ীকরণ কিংবা নতুন পদ সৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরকরণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে এসেছেন। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে যা লেখা হয়, তা অনেক সময় লেখা হয়, প্রকল্প ব্যয় বেশি দেখাতে এবং নিয়োগকে আকৃষ্ট করতে। প্রস্তাবে তাঁদের আত্তীকরণের কথা লেখা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ শেষে তথ্য আপাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।

 তথ্য আপা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন তৃতীয় পর্ব শুরু হওয়ার অপেক্ষা। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুনভাবে আউটসোর্সিং করে তথ্য আপাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। সাত বছর ধরে ১ হাজার ৯৬৮ জন তথ্য আপা দক্ষ কর্মী হিসেবে নিয়োজিত আছেন; তাই পুনরায় নতুন করে কর্মী নিয়োগ করা হলে তাঁদের দক্ষ করতে প্রকল্প পরিচালন ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে। তা ছাড়া আউটসোর্সিংয়ে কর্মী সংগ্রহের বিষয়টি দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য একটি নেতিবাচক অভিজ্ঞতা।

চলমান তথ্য আপা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পেও সিকিউরিটি গার্ড পদটি আউটসোর্সিংয়ে রাখার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছিল। অথচ সিকিউরিটি গার্ডের অর্থ উপজেলায় পাঠানো হলেও গত সাত বছরে তথ্যসেবাকেন্দ্রে কোনো সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এই দেশের বাস্তবতায় আউটসোর্সিংয়ে কর্মী নিয়োগ মানেই ঘুষবাণিজ্য ও লুটপাটকে আরও প্রশস্ত করা। সেই বাস্তবতা জানা সত্ত্বেও দক্ষ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় কেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিতে ইচ্ছুক?

৪.

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তথ্য আপা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে তথ্যসেবা অফিসাররা ২৭ হাজার ১০০ টাকা এবং তথ্যসেবা সহকারী অফিসাররা ১৭ হাজার ৪৫ টাকা বেতনে নিয়োগ পান। কিন্তু চার মাস যেতে না যেতেই কোনো লিখিত কারণ ছাড়াই ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে তথ্যসেবা কর্মকর্তারা ২৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং তথ্যসেবা সহকারী অফিসাররা ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা বেতন পেতে শুরু করেন। এভাবে কেন তাঁদের বেতন কর্তন করা হয়েছিল, তার কোনো সুস্পষ্ট উত্তর মন্ত্রণালয় দিতে পারেনি। অথচ এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে অন্য প্রকল্পের সমমান গ্রেডের কর্মীদের কোনো বেতন কাটা হয়নি।

২০২২ সালে ৫৮৩ জন তথ্য আপা বেতন কর্তনের বিরুদ্ধে আদালতে রিট দাখিল করেন। আদালত থেকে তাঁদের এই কর্তিত বেতন ফেরত দেওয়ার রুল জারি করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদকাল এক বছর করে বাড়ানো হয়। আদালতের রায় মেনে কর্তিত বেতনের টাকা দেওয়া দূরে থাক, প্রকল্পের বর্ধিত সময়ে একইভাবে বেতন কাটা হয়।

এভাবে প্রত্যেক তথ্যসেবা অফিসারের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা এবং তথ্যসেবা সহকারীর কাছ থেকে ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ টাকা কাটা হয়। অর্থাৎ ১ হাজার ৯৬৮ জন তথ্য আপার কাছ থেকে ৭ বছরে মোট ২০ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ২০০ টাকা কাটা হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় তো এই টাকা ধার্য করা হয়েছিল। তাহলে এই টাকা কোথায় গেল?

৫.

তথ্য আপারা তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরির স্থায়ীকরণ অথবা নতুন পদ সৃষ্টি করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরকরণ এবং অন্যায়ভাবে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকা পাওনার দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে প্রেসক্লাবে বসে আছেন। এ অবস্থান কর্মসূচির আগে তাঁদের ৬৪ জন জেলা প্রতিনিধি নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

তথ্য আপা প্রকল্পটি যেহেতু আওয়ামী লীগ শাসনামলের এবং সেই আমলেই এই প্রকল্প থেকে লুটপাট শুরু হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্পের কর্মীদের ‘আওয়ামী আবর্জনা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে—এমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। অথচ সিলেটে যিনি তথ্য আপা হিসেবে কাজ করছেন, তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম ফ্রন্টলাইনার। দুঃখজনক হলেও নির্মম বাস্তবতা হলো, যখনই মানুষের অধিকার নিয়ে কেউ ন্যায্য আন্দোলন করছেন, তাঁদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।

এ রকম অবস্থায় গত ২৬ মে নিরুপায় হয়ে অনশন চলাকালে তথ্য আপারা তাঁদের অধিকারের কথা বলতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন বরাবর শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন তথ্য আপা আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন গর্ভবতী ও মাতৃদুগ্ধ পান করানো মা, ক্যানসার রোগী, প্রতিবন্ধী—এমন অনেকে। পুলিশি হামলার শিকার হন জুলাই ফ্রন্টলাইনার তথ্য আপাও।

এ হামলার ঘটনা আমাদের হতবাক করেছে। হাজার হাজার নারী যাঁরা আর কয়েক দিন পর চাকরিচ্যুত হবেন, সরকার তাঁদের জন্য তো বিকল্প কর্মসংস্থান তো করেইনি, উল্টো তাঁরা নির্মমভাবে হামলা ও নিপীড়নের শিকার হলো!

এসডিজি-৫ তথা জেন্ডার সমতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক যুগ ধরে নারী ক্ষমতায়নের প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, যখন দেশের সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের বড় অংশ কর্মমুখী নন, তখন এ ধরনের প্রকল্পের নারীরা চাকরি হারালে তা কতটুকু এসডিজি-৫–এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে?

আমরা দেখছি জনপ্রশাসন খাতে পাগলা ঘোড়ার মতো ব্যয় বাড়তেই থাকে; নতুন নতুন পদ সৃষ্টি হয়। এক একটি বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে, ফিজিবিলিটি স্টাডি করে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়, যার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না। কিন্তু প্রশ্ন যখন মাঠকর্মীদের কর্মসংস্থানের, তখনই নতুন পদ সৃজনে কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। প্রকল্পের পরিচালকেরা ঠিকই নতুন প্রকল্পে স্থানান্তর হয় আর মাঠকর্মীরা তাঁদের মাসিক আয়ের নিশ্চয়তা হারান।

একটি প্রকল্প তার মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ছাড়া মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। তাই তথ্য আপাদের কথা শুনতে হবে; তাঁদের চাকরি অব্যাহত রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কীভাবে রাজস্ব খাতে পদ সৃজন করে তাঁদের স্থানান্তর করা যায়, তা অবিলম্বে তাঁদের জানাতে হবে। অন্যায়ভাবে কর্তন করা তাঁদের বেতন ফিরিয়ে দিতে হবে। চাকরির অনিশ্চয়তায় হাজারো নারী প্রেসক্লাবে বসে থাকবেন, অথচ তাঁদের কথা সরকার শুনবে না, গণ-অভ্যুত্থানের পর এ রকম বন্দোবস্ত আমাদের কাম্য নয়।

ড. মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সীমা দত্ত সভাপতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র

মারজিয়া প্রভা সদস্য, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

মতামত লেখকদের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পে নারী কর্মীদের চাকরি কেন অনিশ্চিত