কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ
Published: 15th, April 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।
আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”
আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ব ভ গ র দ র রহম ন ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপির তিন সংগঠন
রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরে আবারও তারুণ্যের সমাবেশ করবে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে আগামী ৭ মে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এ সমাবেশ শুরু হতে পারে। কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তিন সংগঠনের নেতারা। এর অংশ হিসেবে আজ তিন সংগঠনের যৌথসভা হবে।
এর আগে ২০২৩ সালের জুনে সারাদেশে বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করে তিন সংগঠন। ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’– এই স্লোগানে ছয় বিভাগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ব্যাপক সাড়া ফেলে তরুণদের মাঝে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক বাধা এড়িয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এসব সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নির্বাচন নিয়ে নানা ধূম্রজালের মধ্যে ছাত্র ও যুবসমাজের সমর্থন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
দলের নেতারা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আট মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সরকারের একেক সময়ে একেক বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার। সরকারকে চাপে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য ঐকমত্য তৈরিতে ১৯ এপ্রিল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোদী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে চলতি মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের শুরুতে সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এতে সরকারকে বার্তা দেওয়া হবে– দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের ওপর পরোক্ষ ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ রাখবে দলটি। বিএনপির এ কৌশলের পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-তরুণ ও যুবক শ্রেণির কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে যেমন দেশের বড় একটি অংশের সমর্থন আদায়ের কৌশল রয়েছে, তেমনি খুব শিগগির নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হবে।
দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে ব্যস্ত রাখা গেলে যেসব অপবাদ আর অপকর্মের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠছে, সেখান থেকে দূরে রাখা যাবে। এতে সংগঠনগুলোতে গতিশীলতাও বাড়বে ।
দলের একজন সিনিয়র নেতা জানান, সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অনেকেই বলেন, বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে ভিন্নমাত্রার কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে তরুণদের নিয়ে বিভাগীয় বা বড় জেলা শহরে সমাবেশ করতে পারে। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা ভোট দিতে পারেননি। তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য হতে পারে এসব সমাবেশ। এতে তরুণরা উৎসাহিত হবে। তারুণ্যের সমাবেশের পাশাপাশি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। স্থায়ী কমিটির এমন সিদ্ধান্তের পর তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ পেয়ে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করেন তারা। কর্মসূচির খসড়া তৈরি করে বিএনপি নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচির দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্রমতে, তিন সংগঠনের সমাবেশগুলোয় ২০২৩ সালের তারুণ্যের সমাবেশের মতো আবহ তৈরি করতে চান নেতাকর্মীরা। তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি বাড়াতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে বিভাগীয় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করা হচ্ছে। সারা দেশের সব ইউনিট নেতাদের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করছেন তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
তিন সংগঠনের নেতাকর্মীর প্রত্যাশা এবারের তারুণ্যের সমাবেশেও তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। কারণ, ১৭ বছর ধরে তরুণরা নানাভাবে অবহেলিত। তারা মনে করেন উচ্চশিক্ষার পরও লাখ লাখ তরুণ বেকার। ভোটার হওয়া সত্ত্বেও তারা ভোট দিতে পারছেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তাদের প্রত্যাশা ছিল অচিরেই দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে, অর্থনীতির চাকা সচল হবে, সর্বক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসবে। কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও ভোটাধিকারসহ কোনো ক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তরুণদের সমস্বরে আগামী নির্বাচনের দাবি তুলে ধরা হবে এসব সমাবেশ থেকে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান সমকালকে বলেন, তরুণ ভোটার, বিশেষ করে গত ১৬ বছরে যারা ভোটার হয়েছেন, অনেকেরই বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু তারা স্বাধীনভাবে একবারও ভোট দিতে পারেননি। তরুণরা ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন; আবার চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছেন। এখন তরুণদের ঐক্যের মাধ্যমে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।