প্রথম সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চান মা
Published: 15th, April 2025 GMT
কোলজুড়ে সন্তান আসবে। আলোকিত করবে ঘর। তার কী নাম রাখবেন, তাকে কীভাবে বড় করবেন– এসব নিয়ে ভাবনার শেষ নেই জিহাদ আলী ও সাদিয়া আক্তার নেহা দম্পতির। তাঁদের অপেক্ষা যেন ফুরোচ্ছিল না। অবশেষে অপেক্ষা শেষ হয় সোমবার পহেলা বৈশাখের সকালে। এদিন বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পুত্র সন্তান জন্ম দেন সাদিয়া। প্রথম সন্তানকে নিয়ে স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডাক্তার বানাবো, যাতে সে গরীবদের বিনা পয়সায় সেবা দিতে পারে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বহরল গ্রামের বাসিন্দা জিহাদ আলী। তাঁর স্ত্রী সাদিয়া যখন হাসপাতালে, তখন এই কৃষক নিজ ক্ষেতে কাজ করছেন। সন্তান জন্মের খবর পেয়ে ছুটে যান জেলা শহরের নিমতলার নবাব নার্সিং হোমে। সেখানে গিয়ে সন্তানকে কোলে তুলে নেন। জিহাদ আলী বলেন, ‘বছরে প্রথম দিনে সন্তান হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। কয়েকদিন ধরে আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমরা কৃষক মানুষ। আমাদের অনেক কাজ থাকে। কাজের চাপে স্ত্রীর সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তেও পাশে থাকতে পারিনি। কষ্ট বুকে চেপে রাখি। তবে সন্তানের মুখ দেখে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’
সাদিয়া বলেন, ‘সন্তান জন্মের মুহূর্তে স্বামী পাশে থাকলে ভালো লাগত। কিন্তু আমি জানি, সে কত কষ্ট করে সংসার চালায়। ফসলের উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তেমন একটা পয়সা থাকে না। তাই সন্তানের কথা মাথায় রেখে সে কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিদেশ যাবে। ইচ্ছা আছে, সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার। তার বাবা পরিবারের কথা ভেবে বিদেশে গিয়ে যে অর্থ উপার্জন করবে, তা দিয়েই ছেলেকে ডাক্তার বানাব। আর আমার স্বপ্ন, সে একদিন বড় ডাক্তার হয়ে গরিবদের বিনা পয়সায় সেবা দেবে। আমার মত গরিবরা চিকিৎসা পেয়ে সন্তান ও পরিবারকে ভালো দোয়া দেবে।’
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন সন্তান হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে এই গৃহবধূ বলেন, ‘বিশেষ দিনের বিষয়টি মাথায় ছিল না। তবে জানার পর বেশ ভালো লাগছে।’ সন্তানের নাম কী রাখবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও কোনো নাম নির্বাচন করতে পারিনি। তবে আমি চাই শ্বশুরবাড়ি থেকেই সন্তানের নামকরণ হোক।’
স্বজনরা জানান, সাদিয়া সম্ভাব্য সন্তান প্রসবের দিন ছিল আগামী ২৪ এপ্রিল। তবে হঠাৎ গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁর প্রসব ব্যথা ওঠে। মায়ের বাড়ি থেকে অটোরিকশায় করে তিন কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রাত ৮টায় ভর্তি হন নবাব নার্সিং হোমে। চিকিৎসকরা দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও স্বাভাবিক প্রসব করাতে না পেরে সকাল ৬টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন, ‘আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখি, মায়ের পেটে পানি কমে গেছে এবং বাচ্চা পেটেই মলত্যাগ করেছে। অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে বৈশাখের প্রথম প্রহর সাড়ে ৫টার দিকে সিজার করি। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শিশুর জন্ম হয়। তার ওজন ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম। মা ও ছেলে দু’জনেই সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিন শিশুর জন্ম হওয়ায় ক্লিনিকের পক্ষ থেকে বাচ্চার বাবাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।’
সাদিয়ার মা আসমা বেগম জানান, নির্ধারিত দিনের আগে সিজারের মাধ্যমে মেয়ের সন্তান প্রসব করাতে হবে– এমনটা শুনে একটু ভয়ে ছিলেন তিনি। তবে চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিকতায় কিছুটা সাহস পান।
বছর তিনেক আগে জিহাদ ও সাদিয়ার বিয়ে হয়। সদর উপজেলার নতুন হাট গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সাদিয়া। যে বয়সে সবার স্কুলে যাওয়ার কথা, সে সময়ে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সে পরিবার থেকে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরও স্বামীর উৎসাহে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন সাদিয়া। তবে সে বার একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। গর্ভধারণের পরও তিনি স্বপ্ন দেখেন, আবার পরীক্ষায় বসবেন। সাদিয়ার মতে, শিক্ষিত মা সমাজকে একজন আদর্শ সন্তান উপহার দিতে পারে। তাই স্বামীর আগ্রহে ও সন্তানের মুখ চেয়ে সামনে বছর আবারও এসএসি পরীক্ষায় বসবেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ প ইনব বগঞ জ প রথম প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’