মেহেরপুর শহরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে হাসি ফুটে উঠল গোলাম মর্তুজা ও নাসরিন আক্তার দম্পতির মুখে। তাদের কোলজুড়ে এলো কন্যাসন্তান। বাংলা নববর্ষে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো এই দম্পতির। 

মর্তুজা ও নাসরিনের বাড়ি একই গ্রামে, মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগরে। সেই কবেকার কথা। পরস্পরের সঙ্গে দেখা, কথা। এরপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে এক যুগ আগে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়েতে রূপ দেন তারা। বিয়ের পর কেটে যায় পাঁচটি বছর। এ সময় তাদের একটি ছেলের জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের প্রত্যাশা ছিল মেয়ের। অবশেষে এবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
 
শিশুটির বাবা মর্তুজা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সবসময়ই আমার মধ্যে আলোড়ন তুলত। মনে মনে বাসনা ছিল যদি বৈশাখের প্রথম দিন আমাদের সন্তান জন্ম হয় তাহলে খুব ভালো হতো। তবে সব কিছু তো পরিকল্পনা করে হয় না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রার্থনা কবুল করায় পহেলা বৈশাখে আমাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এতে আমাদের পরিবারের লোকজন সবাই খুব খুশি। আমরা দু’জনই কৃষক পরিবারের সন্তান। দু’জনই স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় সেই অর্থে লেখাপড়া হয়নি। তবে কৃষক পরিবারে পহেলা বৈশাখের যে আমেজ আনুষ্ঠানিকতা তা সবসময় আমার কাছে প্রিয়।’ সন্তান ও মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তিনি।

শিশুটির মা নাসরিন বলেন, ‘জন্মের পরপরই নার্সরা আমার বোনের কোলে তুলে দেয় আমার নাড়িছেঁড়া মামণিকে। মেয়ের বাবা ও খালা খুশিতে ভরে যায়। তোয়ালে জড়ানো মেয়েকে রাঙাতে দ্রুত বাজার থেকে একটি গোলাপি রংয়ের জামা কিনে এনে গায়ে পরিয়ে দেন মেয়ের বাবা। তখন আমার মেয়েকে দেখে পরীর মতো মনে হচ্ছিল। তখনও আমার শরীর অনেকটাই অবশ। হাসপাতালের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হলো আমাকে। পাশেই দেওয়া হলো আমার রাজকন্যাকে। শরীরে যন্ত্রণা থাকলেও মেয়েকে দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। যন্ত্রণাও যেন কমে গেল অনেকটাই।’

নাসরিন জানান, সন্তান গর্ভে থাকাকালে তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। নিয়মিত চিকিৎসক দেখাতেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন যত এগিয়ে আসছিল ততই তাঁর স্বামী বলতে লাগলেন, তাদের সন্তান ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক না কেন যদি পহেলা বৈশাখে হয় তাহলে সেটি হবে একটি স্মরণীয় ঘটনা। অবশেষে নববর্ষের দিন সকালেই তাঁর ব্যথা ওঠে। তাদের গ্রাম থেকে হাসপাতাল ছয় কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাহন নসিমনে করে তাঁকে হাসাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক বলছিলেন মায়ের স্বাস্থ্য ভালো আছে। নরমাল ডেলিভারি হয় কিনা সেই চেষ্টা করা যাক। তবে প্রথম বাচ্চা সিজারিয়ান হওয়ায় ব্যথা ওঠার ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক ডেলিভারি না হওয়ায় আবার সিজার করে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই হাসপাতালের মাইকে আজান দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন। তিনি পরে জেনেছেন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই বারান্দায় অপেক্ষারত সন্তানের বাবা, চাচা, খালারা পরস্পরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
 
নাসরিন বলেন, ‘আমি যেখানে সন্তান জন্ম দিয়েছি, সেখান থেকে অল্প দূরেই শহরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ওই পার্কে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। সেই অনুষ্ঠান থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। মনে মনে ভাবছিলাম এমন স্মরণীয় দিনে আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খুব ভালো হবে। আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে এলো। হাসপাতাল থেকে আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে এলে মনে হচ্ছিল আমার কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণ হলো। আমাদের দু’জনেরই সিদ্ধান্ত মেয়েকে প্রথমে কোরআনের হাফেজ বানাব। এরপর সে স্কুলে পড়ালেখা করবে। মেয়েকে নিয়ে তেমন বড় কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তার ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে তার পেশা। তবে সে যেন মানুষর মতো মানুষ হয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। পহেলা বৈশাখ সন্তান জন্ম হওয়ায় আমি ও আমার স্বামী দু’জনই খুব খুশি।’

মেহেরপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সার্জন রামানা হেলালী জুসি বলেন, ‘মর্তুজা-নাসরিন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান পহেলা বৈশাখ দুপুর আড়াইটার সময় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এদিন পহেলা বৈশাখ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে সন্তানের মাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। শিশুটির মা ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতেন। শিশুটির বাবা তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা করাতেন। তিনি স্ত্রীর প্রতি খুবই যত্নশীল বলে তাঁর মনে হয়েছে। মায়ের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। কোনো সমস্যা ছিল না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুটির ওজন ছিল তিন কেজি। তার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববর ষ র পর ব র আম দ র হওয় য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে

মাদারীপুরে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের প্রেমের টানে চীনের নাগরিক শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসেছেন। বিয়ে করে বর্তমানে মাদারীপুরে শশুরবাড়িতে আছেন। ভিনদেশি যুবককে দেখার জন্য ওই বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯)। সুমাইয়া মাদারীপুর শহরের সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা তিন বোন। সুমাইয়া বড়। মেঝ সাদিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট বোন আরিফা (৬)। 

চীনের সাংহাই শহরের সি জিং নিং এর ছেলে শি তিয়ান জিং (২৬)। তারা দুই ভাই। বড় শি তিয়ান জিং। তার চীনের সাংহাই শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে। 

আরো পড়ুন:

‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’

এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার

শি তিয়ান জিংকে টিকটকে দেখেন সুমাইয়া। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান হয়। উভয়ই গুগলের মাধ্যমে লেখা অনুবাদ করে মনের ভাব আদান- প্রদান করেন। এক পর্যায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাত্র চার মাসের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশ আসেন শি তিয়ান জিং। এরপর এক দিন ঢাকার একটি হোটেলে থাকেন। ২৬ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেচরের সুমাইয়ার বাড়িতে আসেন। 

সুমাইয়া, সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম ও তার দুইজন আত্মীয় মিলে ঢাকা থেকে শি তিয়ান জিংকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারায় মোবাইলে অনুবাদ করে কথা আদান-প্রদান করেন শি তিয়ান জিং। এরপর ২৭ জুলাই তারা বিয়ে করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সুমাইয়ার বাড়িতে মানুষ ভিড় করতে থাকে।  

সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘টিকটক দেখে আমি ওর ভক্ত হই। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা হয়। পরে দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্র ধরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমার কাছে চলে আসবে, তা কখনো ভাবিনি। ও প্লেনে উঠার সময় বলেছে, আমি বাংলাদেশে আসছি। আমি বিশ্বাস করিনি। যখন ইন্ডিয়া এসে আমাকে জানায়, তখন বিশ্বাস করেছি।’’ 

সুমাইয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘ও ওর মা-বাবাকে আমার কথা বলেছে। তারাও মুসলিম। ওর মা বলেছেন, আমাকে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যেতে। তাই শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করেছেন।’’ 

সুমাইয়া বলেন, ‘‘এরই মধ্যে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। শি তিয়ান জিং এক মাস বাংলাদেশে থাকবে। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র রেডি করা হবে। তারপর ও আমাকে চীনে নিয়ে যাবে। আমিও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ 

শি তিয়ান জিং বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম। আর অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে। তাই আমার ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে চীন থেকে এখানে এসেছি। সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। এখন ওর কাগজপত্র রেডি করে চীনে নিয়ে যাবো। আমার পরিবার সব জানে। তারাই সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।’’ 

সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘শি তিয়ান জিং আমাদের এখানে আছে। ও খুব ভালো ছেলে। খুবই অমায়িক। কোনো অহংকার নেই। এক মাস থাকবে এবং আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব খুশি।’’ 

পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবেল হাওলাদার জানান, প্রথমে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। পরে সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। চীনে ওই ছেলের ব্যবসা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যাবে। 

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা
  • পুতিনকে ট্রাম্পের নতুন সময়সীমার পরপরই রাশিয়ার হামলা, ইউক্রেনে নিহত ২৫
  • প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে