যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে শিক্ষার্থীরা কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছেন, কারণ কী
Published: 16th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে আরও বেশি করে এখন কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করছেন কিংবা সেখানে পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কেন্দ্রীয় তহবিল স্থগিত এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার পর এমন প্রবণতা বাড়তে দেখা গেছে।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাঙ্কুভার ক্যাম্পাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি-ইচ্ছুক মার্কিন নাগরিকদের আবেদনের হার ১ মার্চ নাগাদ ২০২৪ সালের পুরো বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি-ইচ্ছুক মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাঙ্কুভার ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। মার্কিন শিক্ষার্থীদের যাঁরা সেপ্টেম্বরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার আশা করছেন, তাঁদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে কানাডার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হলো টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষও বলেছে, তাদের ২০২৫ সালের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে আরও অনেক মার্কিন নাগরিক আবেদন করেছেন। অন্যদিকে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্পাসে এবং এর ওয়েবসাইটে মার্কিন নাগরিকদের আনাগোনা বেড়েছে।
টরন্টো ও ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছুদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করেনি। তবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাঙ্কুভার ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ এর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালাকে দায়ী করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লাখ লাখ ডলার কেন্দ্রীয় তহবিল স্থগিত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য চাপ দিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, ক্যাম্পাসগুলো ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আটক হওয়া কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি শত শত শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এসব সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাক্স্বাধীনতা এবং শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
একই সময়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ সীমিত করেছে কানাডা। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এমন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এর মানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জায়গা কম পাবে।
কানাডার অভিবাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, যতজন শিক্ষার্থীকে আবাসনসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে, ঠিক ততজন শিক্ষার্থীকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি করাবে বলে তারা আশা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বাড়ায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাঙ্কুভার ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ট শ কল ম ব
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫