যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডকে ‘তামাশা’ বলেছেন। তিনি বলেন, বাইরের রাজনৈতিক তদারকি মানতে অস্বীকৃতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সরকারি গবেষণা তহবিল বাতিল করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবাসংস্থাকে (আইআরএস) অনুরোধ করেছে, যাতে তারা এই খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর-ছাড় সুবিধা বাতিল করে। এর মাত্র এক দিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন।

ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড একটি সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আর বিবেচিত হতে পারে না। একে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর কোনো তালিকায় রাখা উচিত নয়।’

আরও পড়ুনতহবিল স্থগিতের পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিলেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড তামাশা, এটি ঘৃণা ও মূর্খতা শেখায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আর কোনো কেন্দ্রীয় তহবিল দেওয়া উচিত হবে না।’

ঐতিহাসিক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত ১৬২ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ট্রাম্প এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কারণ, তারা ভর্তি প্রক্রিয়া, নিয়োগ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সরকারি তদারকি মানতে অস্বীকার করেছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনামূলকভাবে কম বিস্তৃত দাবিগুলোর কাছে নতি স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘অতিমাত্রায় বামপন্থী’ বলে দাবি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এমন চাপ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এ সপ্তাহে বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্বাধীনতা কিংবা সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়ে ‘আলোচনা করতে’ রাজি নয়।

আরও পড়ুনদাবি নাকচের পর হার্ভার্ডের ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করলেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প এ সপ্তাহে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২২০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গত মঙ্গলবার বলেন, হার্ভার্ড পিছু না হটলে একে ‘অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কর-ছাড় সুবিধা হারাতে হবে।’

সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, ট্রাম্পের অনুরোধের পর আইআরএস এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

আরও পড়ুনশিক্ষা দপ্তরকে কী লিখেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, যাতে খেপেছেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর ছ তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ