হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে এবার ‘তামাশা’ বললেন ট্রাম্প, সেরার তালিকায় রাখতে নারাজ
Published: 17th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডকে ‘তামাশা’ বলেছেন। তিনি বলেন, বাইরের রাজনৈতিক তদারকি মানতে অস্বীকৃতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সরকারি গবেষণা তহবিল বাতিল করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবাসংস্থাকে (আইআরএস) অনুরোধ করেছে, যাতে তারা এই খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর-ছাড় সুবিধা বাতিল করে। এর মাত্র এক দিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড একটি সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আর বিবেচিত হতে পারে না। একে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর কোনো তালিকায় রাখা উচিত নয়।’
আরও পড়ুনতহবিল স্থগিতের পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দিলেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড তামাশা, এটি ঘৃণা ও মূর্খতা শেখায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আর কোনো কেন্দ্রীয় তহবিল দেওয়া উচিত হবে না।’
ঐতিহাসিক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত ১৬২ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ট্রাম্প এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কারণ, তারা ভর্তি প্রক্রিয়া, নিয়োগ এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সরকারি তদারকি মানতে অস্বীকার করেছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনামূলকভাবে কম বিস্তৃত দাবিগুলোর কাছে নতি স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘অতিমাত্রায় বামপন্থী’ বলে দাবি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এমন চাপ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার এ সপ্তাহে বলেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্বাধীনতা কিংবা সাংবিধানিক অধিকারের বিষয়ে ‘আলোচনা করতে’ রাজি নয়।
আরও পড়ুনদাবি নাকচের পর হার্ভার্ডের ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করলেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫ট্রাম্প এ সপ্তাহে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২২০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গত মঙ্গলবার বলেন, হার্ভার্ড পিছু না হটলে একে ‘অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কর-ছাড় সুবিধা হারাতে হবে।’
সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, ট্রাম্পের অনুরোধের পর আইআরএস এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুনশিক্ষা দপ্তরকে কী লিখেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট, যাতে খেপেছেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।