পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই চার বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

এই লক্ষ্যে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়
পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে অ্যাকশন প্ল্যান দেওয়ার নির্দেশ

ড.

আনিসুজ্জামানের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক বুধবার

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, সহকারী পরিচালক সৌরভ মল্লিক ও মোহাম্মদ রুমন হোসেন।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চার বছরের আর্থিক বিবরণী যাচাই, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চার বছরে হামি ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ, দায়, শেয়ারধারীদের মূলধন (ইকুইটি), মুনাফা ও নগদ প্রবাহের সত্য ও সঠিক চিত্র উপস্থাপন করেছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং আন্তর্জাতিক অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডের (আইএসএ) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল কি না, তা যাচাই করবে।

কোম্পানির বিভিন্ন সম্পদ, যেমন- প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি ও ভবন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন ইত্যাদির মালিকানা, প্রকৃত অস্তিত্ব ও ব্যবহারযোগ্যতা পর্যালোচনা করা।

সম্পদগুলো কোনো ঘোষিত বা অঘোষিত ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা হয়েছে কি না তা যাটাই করা।

ব্যালেন্স শিটে দেখানো অগ্রিম, আমানত ও প্রি-পেমেন্ট যাচাই করা।

বিক্রয়, উৎপাদন খরচ, গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ গ্রহণ, হিসাবযোগ্য প্রাপ্য, নগদ ও নগদ সমমানের সম্পদ, মজুত পণ্য, কাঁচামাল ক্রয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে সত্যতা যাচাই করা।

চলমান মূলধন প্রকল্প (ক্যাপিটাল ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস) পর্যালোচনা করা।

প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ চলমান কার্যক্রমে হুমকি আছে কি না, তা নিরূপণ করা।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ঋণ যাচাই করা।

শেয়ার মূলধন, পুনঃবিনিয়োগ সংরক্ষণ তহবিল, ডেফার্ড ট্যাক্স, পরিশোধযোগ্য কিস্তি, ব্যয়জনিত দায়, প্রদানযোগ্য হিসাব, অগ্রিম ভাড়ার অর্থ, অবিতরণকৃত লভ্যাংশ, করের জন্য সংরক্ষিত অর্থ যাচাই করা।

প্রয়োজনবোধে অন্য যেকোনো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে খতিয়ে দেখা।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৬ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.১৯) টাকা। এদিকে নয় মাসে বা তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) মিলে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.২১ টাকা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৫৬) টাকা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯.১০ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি

হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পূর্ব নাম ছিল ইমাম বাটন লিমিটেড। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ থেকে কোম্পানিটি উভয় পুঁজিবাজারে হামি ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি নামে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭৭ লাখ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩২.৫২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭.৯৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.১৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৮.৩৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ল র ৩০ জ ন র ব যবস থ ব এসইস র য চ ই কর চ র বছর তদন ত ক আর থ ক র জন য বছর র ম লধন

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি

শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।

দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী  আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।

যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করসুবিধা দেবে সরকার
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • কর্মীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানালেন রাশেদ মাকসুদ
  • ২১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিএসইসির আদেশ জারি
  • ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল বিএসইসি
  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে: বিএসইসি
  • বাজেটে লভ্যাংশ আয় ও বিনিয়োগে কর ছাড় থাকবে
  • পুঁজিবাজারে আস্থা বাড়াতে ৬ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ
  • এপ্রিলজুড়ে দর পতন, আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ নেই