গ্লোবাল সাউথকে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের খেসারত দিতে হবে
Published: 18th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে হঠাৎ করে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। শেয়ার ও বন্ড বাজারে ধস নেমেছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশেষ করে যেসব দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর ফলে এমন একটি বৈশ্বিক মন্দা শুরু হতে পারে, যা পুরোপুরি মানবসৃষ্ট এবং যার সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে।
বেশির ভাগ ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ট্রাম্পের ঘোষণায় বাজার কিছুটা শান্ত হয়েছিল। কিছু শুল্ক স্থগিত রাখলেও যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক এখনো বলবৎ আছে। ট্রাম্প আরও নতুন শুল্ক দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে এসব পদক্ষেপ আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ কমাবে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য দাম বাড়াবে এবং যেসব দেশ পণ্য রপ্তানি করে, তাদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে। ভবিষ্যতের আলোচনাতেও খুব আশার কিছু নেই। ট্রাম্প আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি বিদেশি নেতাদের সম্মান দেখান না।
চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এই শুল্ক ১৪৫ শতাংশে তোলা মূলত প্রতীকী। এটি চীন যেভাবে নিজের শুল্ক বাড়িয়েছে, তার পালটা পদক্ষেপ। কারণ, আগের ১০৪ শতাংশ শুল্কেই চীনা পণ্যের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক হয়ে পড়েছিল।
মূলত ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার সংকেত দিচ্ছে। এর ফলে চীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভর যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও দেশীয় উৎপাদনকারীরা গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে পণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় ইতিমধ্যে বড় ব্যাঘাত ঘটেছে।
বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা অবধারিতভাবে বিনিয়োগ কমিয়ে দেবে। ব্যবসাগুলো নতুন প্রকল্প স্থগিত রাখবে, পরিকল্পিত সম্প্রসারণ পিছিয়ে দেবে, ভবিষ্যতের পরিস্থিতি বোঝার অপেক্ষায় থাকবে। এর ফলে মন্দা দেখা দেবে আর তা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র এই বাণিজ্যযুদ্ধে চীনকে হারাতে পারবে না। চীনা সরকার ধৈর্যের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিচ্ছে। যেকোনো সময় এই দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান অর্থনৈতিক লড়াই বড় ধরনের আর্থিক সংকটে বা এমনকি সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ইতিমধ্যেই বিপদের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। বহুদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমে যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ওপর বিশ্বব্যাপী আস্থা কমছে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার, বন্ড এবং ডলারের দরপতন দেখা যাচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড আর আগের মতো বিশ্বের সম্পদের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারছে না।
আগের অনেক আত্মঘাতী অর্থনৈতিক সংকটের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগবে উন্নয়নশীল বিশ্ব। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া বা বিলম্বিত হওয়ার কারণে অনেক দেশের উৎপাদন কমে গেছে এবং বেকারত্ব বেড়েছে। এর পাশাপাশি আর্থিক অস্থিরতা এমন এক সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এই পরিস্থিতির প্রভাব ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারি ঋণের ওপর পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশ দরিদ্র বা মাঝারি আয়ের, তাদের অবস্থা আরও খারাপ। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত আগের এক মাসে এসব দেশের মার্কিন ডলারে নেওয়া ঋণের মূল্য গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে, আর সেই ঋণের ওপর সুদের হার (ফলন) বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, গ্যাবনের মতো আগেই ঋণের চাপে থাকা দেশগুলোতে সরকারি ঋণের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। অর্থাৎ এসব দেশের জন্য বিদেশ থেকে টাকা ধার নেওয়া এখন আরও কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এ রকম দেশগুলো বহু দশক ধরে অনেক দেশ মুদ্রার মান কমে যাওয়া, ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, বাজেট–ঘাটতি, বাধ্যতামূলক ব্যয়ছাঁটাই এবং দেশীয় বাজারে অস্থিরতার কঠিন চক্রে আটকে আছে। এর ফলে বিনিয়োগ ও ব্যক্তি খাতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।
এই অভিজ্ঞতা থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষাটা খুব পরিষ্কার। এখন শুধু বিশ্বায়িত বাণিজ্যই ধ্বংসের পথে নয়, বরং যারা দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল অর্থায়নের সন্ধানে আছে, তাদের জন্য আর্থিক বিশ্বায়নও দিন দিন আরও অনাকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে চান। কারণ তাঁর মতে, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক উন্নয়নশীল দেশ হয়তো নতুন করে ভাবতে শুরু করবে, যে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা তাদের স্বার্থ রক্ষা করে না, তেমন ব্যবস্থায় তারা থাকবে কি না। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না ওঠে, ততক্ষণ এই যাত্রাপথ খুব সহজ হবে না।
● জ্যোতি ঘোষ ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ সব দ শ র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা
জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।
হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
আবেদনে যোগ্যতার শর্ত
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—
—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।
—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।
—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।
—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।
—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।
—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।
বৃত্তির সুবিধা
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:
১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।
২। মাসিক ভাতা।
—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।
—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।
—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।
—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।
—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।
—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।
হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।