ষড়ঋতুর এই দেশে ‘গ্রীষ্ম’ শব্দটির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত প্রচণ্ড তাপদাহ, খরা কিংবা কালবৈশাখী। এর বাইরেও রয়েছে এই ঋতুটির এক ভিন্ন রূপ। তা হলো গ্রীষ্মে ফোটা অগণিত অসাধারণ সব ফুল। চোখজুড়ানো সুন্দর সে রূপে আমরা মুগ্ধ হই। বাংলাদেশে ছয় হাজারের বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুলের উদ্ভিদ। গ্রীষ্মের ফুল অন্যতম। গরমের এই সময়ের কিছু ফুলের নান্দনিকতা যেন তাপদাহ কমিয়ে দেয়। জারুল, কৃষ্ণচূড়া, স্বর্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জিনিয়া– এমন ফুলগুলো যে কারও চোখ ও মনের জন্য বয়ে আনে দুর্দান্ত এক প্রশান্তি।
কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মের আইকনিক ফুল। এ সময়ে গাছটি মূলত আগুনরাঙা ফুলে ঢেকে যায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রমনার ফুটপাত, বিজয় সরণি পার হয়ে গণভবনের দিকে যেতে রাস্তার দুই পাশ ধরে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময়ে যে কোনো ক্লান্ত পথিক একবার অন্তত থমকে দাঁড়াবে– এমনই তার রূপ। ফুলগুলো গুচ্ছ আকারে চোখে পড়ে। কৃষ্ণচূড়া গাছ ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। চারটি পাপড়ির সমষ্টি দিয়ে গঠিত এ ফুল বাতাসের দোলায় ঝরে পড়ে। কখনও মনে হবে যেন গাছের নিচে আগুন জ্বলছে।
রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর সংসদ ভবন এলাকা ছাড়াও নানা প্রান্তে বিস্তৃত হয়েছে কনকচূড়া। অনেকেই ফুলটিকে চেনেন রাধাচূড়া নামে। আদতে রাধাচূড়া গুল্ম শ্রেণির দুর্বল কাণ্ডের উদ্ভিদ। তা ছাড়া রাধাচূড়া ফুলের রকমফেরও রয়েছে। কনকচূড়া ফুলের একটিই রং। হলদে রঙের এই ফুল ফোটে নির্দিষ্ট সময়ে, গ্রীষ্মকালে। বেশিদিন থাকে না। কনকচূড়া আমাদের দেশি বৃক্ষ নয়। ভিনদেশি এ ফুলের নাম দিয়েছেন বরেণ্য নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। অনেকের কাছে এ গাছ হলুদ কৃষ্ণচূড়া নামেও পরিচিত। তবে কৃষ্ণচূড়া আর কনকচূড়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কৃষ্ণচূড়ার একটি হলুদ প্রজাতিও রয়েছে। কারণ, গাছের শীর্ষে ফোটা ফুলগুলো উজ্জ্বল সোনালি রঙের। ইদানীং ঢাকার বিভিন্ন পার্ক ও পথের ধারে বেশকিছু কনকচূড়া চোখে পড়ে।
রাধাচূড়া ফুলের গাছ আকারে ছোট হয়, আর রং হয় হলুদ, লাল। অনেক সময় একই গাছে লাল-হলুদ দুই রঙের ফুলই দেখা যায়। অন্যদিকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছ অনেক বড় আকারের হয়। ফুলের রংটাও হয় টকটকে লাল, আর একসঙ্গে সমস্ত গাছে অনেক ফুল আসে। আকারে ছোট হওয়ায় রাধাচূড়া গাছে ফুল আসে অনেক কম।
রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তন প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্থানে এ সময়ে রোদে জ্বলজ্বল করে গুচ্ছ গুচ্ছ সোনালু ফুল। যেন কাঁচা হলুদ রঙের উৎসব চলছে। ফুলভর্তি সোনালু গাছ দেখলে মনে হয়, হলুদ রঙের কৌটা উপুড় করে দিয়েছে কেউ।
গ্রীষ্মের আরেকটি অসাধারণ ফুলের নাম জারুল। বাংলাদেশের গ্রামেই বেশি জারুল গাছ দেখা যায়। মাঝারি সাইজের শাখা-প্রশাখাযুক্ত গাছ। ফুলের রং বেগুনি। গাছজুড়ে থোকায় থোকায় ফোটে থাকে। একেকটি জারুল গাছ ২০ থেকে ৩০ মিটার উঁচু হয়। ফুল হয় ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতিটি ফুলের ছয়টি করে পাপড়ি থাকে। দূর থেকে দেখে মনে হয়, যেন কোনো গাঁয়ের বধূ বেগুনি শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে।
শীত আর গ্রীষ্ম দুই ঋতুতেই দেখা মেলে জিনিয়ার। বর্তমানে গরমকালের ফুল হিসেবে বেশি পরিচিত। উর্বর মাটি আর পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে ছাদবাগান, বারান্দা বা উদ্যানে এ গাছ ফুলে ভরে ওঠে। অনায়াসে সে তার স্নিগ্ধতায় মোহিত করতে সক্ষম।
গ্রীষ্মের মনোমুগ্ধকর এক ফুল হিমচাঁপা। সবুজ লম্বাটে গড়নের বৃক্ষ জাতীয় ফুল গাছ এটি। গাছ ৬ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বসন্তের শেষদিকে গাছে ফুলের কলি আসে। গ্রীষ্মের শুরু থেকে গাছের শাখায় শাখায় ফুলের দেখা মেলে। এর সুবাস বেশ মিষ্টি। ছয় থেকে বারোটি পাপড়ি থাকে হিমচাঁপা ফুলে।
সূর্যমুখী গ্রীষ্মকালীন উদ্ভিদ। উজ্জ্বল হলুদ পাপড়ি এবং সূর্যের মতো চেহারার জন্যই এ নাম; যা সূর্যের উষ্ণতা এবং জীবনীশক্তির প্রতীক। গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় সূর্যমুখীর ফলন ভালো হয়। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।
গ্রীষ্মের আরেকটি জনপ্রিয় ফুল জবা। অনেক বাড়িতে এই ফুলের সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায়। সাজসজ্জা ছাড়াও ভেষজ চা এবং চুলের তেলে এর ব্যবহার রয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও এ ফুলের ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্রই মহুয়ার দেখা পাওয়া যায়। শীতে সব পাতা ঝরে যায়। স্থানভেদে একে মহুলা, মধুকা, মোহা, মোভা, মহুভা, মাদকম ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। মহুয়া ২০ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এর গুঁড়ি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং শীর্ষদেশ গোলাকার ও বিস্তৃত। এই বৃক্ষের শিকড়গুলো ছড়ানো এবং তার বেশি অংশ মাটির উপরিভাগে থাকে। এর ফুলগুলো মাংসল, হালকা ধূসর রঙের এবং গাছে যখন সম্পূর্ণ ফুল ফোটে, তখন ফুল থেকে আকর্ষণীয় মিষ্টি সুগন্ধ বের হয়। মহুয়া গাছ বাড়ে খুব ধীরে। এটি ১০ বছর বয়স থেকে ফুল দিতে শুরু করে।
এ ছাড়াও ভাঁটফুল, মধুমঞ্জুরি, কাঠগোলাপ, কুরচি, করবী, কনকচাঁপা, নাগেশ্বর, আকরকাঁটা, মাধবী, নীলমণি, মণিমালা, রক্ত কাঞ্চন, সাদা কাঞ্চন, দেবদারু, স্বর্ণশিমুল, অশোক, পারিজাত, শিমুল, পলাশসহ নানা ফুলের রং-বৈচিত্র্যে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আমাদের গ্রীষ্মকাল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কনকচ ড়
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।
প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।
অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
যেসব কারণে অনুপস্থিতিযেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।
আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।
নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।