বিসিবিতে যেন কলঙ্কের দাগ লেগেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে। এ নিয়ে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টরা আতঙ্কের চেয়ে বিব্রত বেশি। দেশের মানুষ কী ভাবছে, বিদেশিদের কাছে কী বার্তা গেছে– এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিচালকরা। একাধিক পরিচালক মনে করেন দুদকের অভিযান বিশ্বের কাছে দেশের ক্রিকেটের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে। এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন তারা। 

দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়ে স্বচ্ছতার প্রমাণ দিয়ে ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে চান কর্মকর্তারা। জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে এ ইস্যুতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেন পরিচালকরা। সভাপতিকে জরুরি সভা ডাকারও আহ্বান জানান তারা। গতকাল পর্যন্ত বোর্ড সভা আহ্বানের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবার দুদক হানা দেয় দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। এতে ক্রিকেট এবং ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবার ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন এক পরিচালক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘বিসিবিতে দুদকের প্রতিনিধি আসার মতো পরিস্থিতি কে বা কারা তৈরি করেছে জানি না। তারা তিনটি বিষয়ে অনুসন্ধান করবে ভালো কথা, বিষয়গুলো বুঝে করলে ভালো হতো। তৃতীয় বিভাগ বাছাই টুর্নামেন্টে টাকা লেনদেনে বিসিবির জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পাঁচ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি করার বিষয়টি প্রকাশ্য। ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে সেটা গণহারে একাডেমিগুলোর অংশগ্রহণ ঠেকিয়ে বিত্তবানদের ক্লাবকে তৃতীয় বিভাগে উন্নীত করা। কথা হচ্ছে তৃতীয় বিভাগ বাছাই টুর্নামেন্ট খেলে প্রতিবছর যে দুটি ক্লাব তৃতীয় বিভাগে উন্নীত হয়, তারা কি পেশাদার দল গড়ে বা গড়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা আছে? তারা মোটা টাকা খরচ করে দল বানায় না। তাদের উদ্দেশ্য থাকে ব্যবসায়ীদের কাছে ক্লাব বিক্রি করে টাকা উপার্জন করা।’

বিপিএলের টিকিট বিক্রিতে আর্থিক অনিয়মের বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ওই পরিচালক বলেন, ‘টিকিট কম বিক্রি হয়েছে, না ফ্রি টিকিট বেশি বিতরণ করা হয়েছে, সেটা দেখার বিষয়। অনিয়মটা কোথায় হয়েছে, সেটা বের করতে হবে। এবার টিকিটের দাম বেশি ছিল, কমপ্লিমেন্টরি টিকিট কম দেওয়া হয়েছে। ফলে বোর্ডের ভালো আয় হয়েছে। অতীতে দুর্নীতি হয়ে থাকলে তার বিচার হওয়া উচিত। কনসার্টে যে বিশাল টাকার কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক না। যেখানে যা খরচ হয়েছে, সেগুলোর হিসাব বোর্ডের কাছে আছে। কারণ অডিট ছাড়া এগুলো পাস করা যায় না। বিসিবি থেকে সব ডকুমেন্টস দেওয়া হবে দুদকে। তারা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটি সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই দেবে। আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সবকিছু করতে চাই। আশা করি, বোর্ড সভাপতি উদ্যোগী হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।’ 

বিসিবি সভাপতি ফারুক চান দুদকের মাধ্যমে সত্য ঘটনা উদঘাটন করতে। সব ডকুমেন্ট দুদকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। যদিও বিসিবিরই কেউ কেউ মনে করেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুদকে অভিযোগ করার পেছনে বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থ ও লজিস্টিকস কমিটির চেয়ারম্যান ফাহিম সিনহার নাম অভিযোগের তালিকায় দেওয়াকে ব্যক্তিগত রেষারেষি মনে করা হচ্ছে। কারণ ফাহিম সিনহার পরিবার বিএনপির রাজনীতি করে। বিসিবি ইস্যুতেও বিএনপির সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ