ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 19th, April 2025 GMT
প্রায় পাঁচ মাস হলেও চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। সমাবেশ শেষে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হলে আগামীকাল রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূল কাজের অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কাজ না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরে শ্রমিকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের বিভিন্ন চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকসহ বিভিন্ন চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় রোববার বিকেল পাঁচটার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূলকাজের অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) কাজ না করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিক প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ট্যানারি শ্রমিকদের যে মজুরি ঘোষণা করেছে, সেই পাঁচটা গ্রেডের মজুরি আন্দোলন ছাড়া আদায় করা সম্ভব না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কেউ পিছপা না হয়ে যখনই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে, তখনই সবাইকে আন্দোলনে যোগ দিতে হবে। মালিকদের কাছে ন্যায্য কথা বলতে গেলে চাকরি থাকে না। আমাদের ভয় পেলে চলবে না। অনেক ধৈর্য ধরেছি আর না। এবার আন্দোলন করে দাবি আদায় করব।’
শ্রমিক প্রতিনিধি মো.
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ তোলেন শ্রমিক প্রতিনিধিসহ অনেকেই বলেন, মালিকপক্ষ সরকারকে মানছে না, শ্রমিক ইউনিয়ন রাখবে না। প্রয়োজনে তারা অনেক কিছু করতে পারে; কিন্তু শ্রমিকেরা তো কারও কারখানা দখল করেননি, তাহলে কেন মালিকপক্ষ এতটা বেপরোয়া হয়েছে। এর একটিই কারণ, এখানকার কিছুসংখ্যক মালিক হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে এখন তাঁরা দেখাতে চাচ্ছেন তাঁরা কারখানা চালাতে পারছেন না। কারখানা বন্ধ করতে গেলে ব্যাংক ছাড়বে না। তাই তাঁরা শ্রমিকদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাচ্ছেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের জন্য কাল রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূলকাজের অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কাজ করবেন না শ্রমিকেরা। এর পরও দাবি পূরণ না হলে শ্রমিকদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী চামড়াশিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরিকাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে রয়েছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামতের মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান ও বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা।
বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার চামড়াশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা এবং চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের ন্যূনতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?