প্রায় পাঁচ মাস হলেও চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। সমাবেশ শেষে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হলে আগামীকাল রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূল কাজের অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কাজ না করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরে শ্রমিকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় অবস্থিত চামড়াশিল্প নগরে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের বিভিন্ন চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ  সমাবেশ করেন। সমাবেশে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকসহ বিভিন্ন চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে চামড়াশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় রোববার বিকেল পাঁচটার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূলকাজের অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) কাজ না করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিক প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ট্যানারি শ্রমিকদের যে মজুরি ঘোষণা করেছে, সেই পাঁচটা গ্রেডের মজুরি আন্দোলন ছাড়া আদায় করা সম্ভব না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কেউ পিছপা না হয়ে যখনই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে, তখনই সবাইকে আন্দোলনে যোগ দিতে হবে। মালিকদের কাছে ন্যায্য কথা বলতে গেলে চাকরি থাকে না। আমাদের ভয় পেলে চলবে না। অনেক ধৈর্য ধরেছি আর না। এবার আন্দোলন করে দাবি আদায় করব।’

শ্রমিক প্রতিনিধি মো.

মামুন বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরির যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, সেটি অনুযায়ী ট্যানারি মালিকেরা বেতন দিয়ে দেবেন, সেটিই স্বাভাবিক; কিন্তু সেটি না করায় গত কয়েক মাসে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কয়েক ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। আমরা কেন আন্দোলন, সংগ্রাম করব? ট্যানারি মালিকদের বলব, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে, সেটির ঘোষণা তাঁরা দেবেন। তা না হলে যদি কঠোর আন্দোলন শুরু করা হয়, তবে সেটির জন্য শ্রমিকদের দায়ী করা যাবে না।’

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ তোলেন শ্রমিক প্রতিনিধিসহ অনেকেই বলেন, মালিকপক্ষ সরকারকে মানছে না, শ্রমিক ইউনিয়ন রাখবে না। প্রয়োজনে তারা অনেক কিছু করতে পারে; কিন্তু শ্রমিকেরা তো কারও কারখানা দখল করেননি, তাহলে কেন মালিকপক্ষ এতটা বেপরোয়া হয়েছে। এর একটিই কারণ, এখানকার কিছুসংখ্যক মালিক হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে এখন তাঁরা দেখাতে চাচ্ছেন তাঁরা কারখানা চালাতে পারছেন না। কারখানা বন্ধ করতে গেলে ব্যাংক ছাড়বে না। তাই তাঁরা শ্রমিকদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের জন্য কাল রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মূলকাজের অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কাজ করবেন না শ্রমিকেরা। এর পরও দাবি পূরণ না হলে শ্রমিকদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে পরে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী চামড়াশিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরিকাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে রয়েছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামতের মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান ও বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা।

বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার চামড়াশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা এবং চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের ন্যূনতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র ত সময়

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ