শেয়ারবাজারে কাঠামোগত সংস্কারে অগ্রগতি নেই
Published: 19th, April 2025 GMT
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জে সুশাসনের অভাব দেশের শেয়ারবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বড় কারণ ছিল। কিন্তু মৌলিক এ জায়গার কাঠামোগত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ এখনও নেই। উল্টো বিএসইসির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে খোদ কমিশনের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় শেয়ারবাজার স্বাভাবিক ধারায় চলা তো দূরের কথা, উল্টো দর পতন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত আট মাসে পরিবর্তনের আশায় প্রায় ২১ হাজার বিনিয়োগকারী নতুন করে বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন। কিন্তু একই সময়ে প্রায় ৪৮ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি শেয়ারশূন্য হয়েছে। সরকার বদলের পর দীর্ঘ সময়েও দেশের শেয়ারবাজার সংস্কারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশা বাড়ছে।
গত অক্টোবরে শেয়ারবাজার সংস্কার প্রস্তাব দিতে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত সাড়ে ছয় মাসে এ টাস্কফোর্স মিউচুয়াল ফান্ড, মার্জিন ঋণ এবং আইপিও ইস্যুতে কিছু বিধিবিধান সংশোধনের খসড়া জমা দিয়েছে। শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিনিয়োগকারী বা বাজার-সংশ্লিষ্টরা আগে যেসব সংস্কার প্রত্যাশা করেন, সেখানে এখনও হাতই দেওয়া হয়নি।
টাস্কফোর্সকে মৌলিক কাঠামোগত সংস্কারে ১৭টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিতে দায়িত্ব দিয়েছিল বিএসইসি। টাস্কফোর্সের একাধিক সদস্য সমকালকে বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের বিশাল যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের নিজের পেশাগত কাজের ফাঁকে পরিপালন করা এক প্রকার অসম্ভব। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী সমকালকে বলেন, শেয়ারবাজারে সুশাসনের অভাবই বড় সমস্যা। সুশাসন না থাকার মূলে ছিল গত কয়েকটি কমিশন। তারা যথেচ্ছভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী আইন করেছে। নিজেদের স্বার্থে মন্দ কোম্পানির আইপিও এনেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং নিজেরা জড়াবেন না– এমন পরিবর্তন মানুষ প্রত্যাশা করে। সে লক্ষ্যে এখনও কোনো সংস্কারের দেখা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাস্কফোর্সের এক সদস্য সমকালকে বলেন, বিগত সময়ে অনিয়ম বা দুর্নীতির নেপথ্যে ছিল কমিশনের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাদের কাজের কোনো জবাবদিহি ছিল না। কমিশনের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা এবং বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং কারসাজি চক্র এর সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব তৈরিতে যে ধরনের লোকের প্রয়োজন ছিল, কমিটিতে সে ধরনের লোকের অভাব আছে। তার পরও তারা আগামী মে মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে কিছু ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতে জনবল কাঠামো এবং তাদের দায়বদ্ধতা ইস্যুতে প্রস্তাব দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত বিষয়েও কিছু সংস্কার প্রস্তাব করা হবে।
টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বিনিয়োগকারীরা হতাশাগ্রস্ত। তারা কোনো দিশা পাচ্ছেন না। বাজারে কী সংস্কার হবে এবং হলে তাদের পক্ষে হবে কিনা, কেউ তা বুঝতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। ফলে তারা বাজার ছাড়ছেন। বিগত সময়ের দুর্নীতিগ্রস্ত কমিশনের পরিবর্তে নতুন কমিশন গঠনের পর সবাই আশা করেছিল, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এবং মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র স স ক র প রস ত ব ক ঠ ম গত স স ক র শ য় রব জ র স ব এসইস সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
পুঁজিবাজার থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারী বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও পরিসংখ্যানে এর বিপরীত চিত্রই উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের তুলনায় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও বড় ও মাঝারি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা নয় বরং তাদের বিনিয়োগক্ষমতার ধরণ ও মান বদলেছে। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কিংবা বিনিয়োগ কমছে এমন তথ্য সম্পূর্ণ সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অথবা বিও হিসাবের সংখ্যা কিংবা বিনিয়োগ কমছে এমন বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি মূলত সম্পূর্ণ সত্য নয়। মূলত বিগত বছরের তুলনায় পুঁজিবাজারে বৃহৎ বিনিয়োগকারীর (৫০ কোটি হতে ৫০০ কোটি টাকা এবং তদুর্ধ্ব পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে টানা ৩ কার্যদিবস সূচকের পতন
বিএসইসি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে: ডিবিএ সভাপতি
পাশাপাশি বিগত বছরের তুলনায় মাঝারি বিনিয়োগকারীর (৫০ লাখের ঊর্ধ্বে ও ৫০ কোটি টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বিগত বছরের তুলনায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর (১ লাখের ঊর্ধ্বে ও ৫০ লাখের টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে বিগত বছরের তুলনায় অতি ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীর (১ লাখ টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। অর্থ্যাৎ অতি ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীর (১ লাখ টাকার নিম্নের পোর্টফোলিও ভ্যালুসম্পন্ন) সংখ্যা ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে।
পোর্টফোলিও ভ্যালু ৫০ কোটি টাকার বেশি এমন বৃহৎ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ জন, যা আগের বছর ছিল ৬৯৬। আর ৫০০ কোটির ঊর্ধ্বে পোর্টফোলিওধারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭০, যা আগের বছর ছিল ৬৮।
মাঝারি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এমন মাঝারি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২২৫ জন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ৩১৮ জন বেশি।
তবে বিপরীত চিত্র রয়েছে ১ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ রয়েছে এমন অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৫৭ থেকে কমে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮ জন। অর্থাৎ প্রায় ৮৫ হাজার বিনিয়োগকারী ১ লাখ টাকার নিচের পোর্টফোলিও থেকে সরে এসেছেন বা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছেন।
ঢাকা/এনটি/বকুল