ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 22nd, April 2025 GMT
ট্রাম্প প্রশাসনের দুই শতাধিক কোটি ডলারের বরাদ্দ কাটছাঁট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফেডারেল মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে একটি কমিউনিটি বার্তায় জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সভাপতি অ্যালান গার্বার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, “সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ তহবিল বন্ধ করা হয়েছে, যে তহবিল দিয়ে অমূল্য গবেষণা করা হয়। এই মামলাটি হার্ভার্ডে একাডেমিক সিদ্ধান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের তহবিল আটকানোর বিষয় নিয়ে।”
এদিকে, হার্ভার্ডের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থানকে সমর্থন করি।”
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিজাত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবি সংবলিত একটি তালিকা পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন। গত সপ্তাহে হার্ভার্ড তা প্রত্যাখ্যান করলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির কর-ছাড় সুবিধা বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়।
এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সোমবার মামলা করেছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম গার্বার সোমবার লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, “সরকারের বাড়াবাড়ির পরিণতি হবে মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী।”
সংবাদমাধ্যম এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোস্টনের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হার্ভার্ডের মামলায় বলা হয়েছে, সরকার ইহুদি বিদ্বেষমূলক উদ্বেগের সঙ্গে চিকিৎসা, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত বা অন্যান্য গবেষণার মধ্যে কোনো যুক্তিসঙ্গত সংযোগ শনাক্ত করতে পারেনি এবং পারেও না।
এ বিষয়ে সোমবার রাতে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলেন, “হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ফেডারেল সহায়তার অনুদান, সংগ্রামী আমেরিকান পরিবারগুলোর ট্যাক্সের অর্থ থেকে দেওয়া হয়। তাদের (হার্ভাডের) অতিরিক্ত বেতনভোগী আমলাদের তোষণ করার দিন শেষের পথে। করদাতাদের তহবিল একটি বিশেষ সুবিধা এবং হার্ভার্ড সেই সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।”
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট গার্বার বলেন, “তহবিল স্থগিতের ফলে ক্যান্সার, আলঝেইমার, পারকিনসনস রোগ সম্পর্কিত গবেষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” নতুন বৈজ্ঞানিক সাফল্যের অর্থায়নে ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত প্রখ্যাত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের সমস্যা রয়েছে জানিয়ে গার্বার জানান, এই সমস্যা নিয়ে কাজ করতে তিনি একাধিক টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। ইহুদি বিদ্বেষ ও মুসলিম বিদ্বেষের ওপর নজর রাখা দুটি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়।
হার্ভার্ডের কাছে মার্কিন প্রশাসন যেসব দাবি জানিয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম দেখভালে সরকার অনুমোদিত বহিরাগত নিরীক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া। নিয়োগ ও ভর্তির তথ্যের মতো বিষয়ে হস্তক্ষেপ। এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড একটি চিঠি প্রকাশ করে।
হার্ভার্ডের আইনজীবীরা ১৪ এপ্রিল প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে না বা সাংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না। হার্ভার্ড বা অন্য কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে না। তাই হার্ভার্ড নীতিগতভাবে সরকারের শর্ত মেনে নেবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র স মব র তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’