সুনামগঞ্জের ১৩৭টি হাওরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বৈশাখ শুরুর আগেই জেলার ১০টি হাওরে কৃষকেরা ধান কাটা শুরু করেছেন। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় ১৮ এপ্রিল থেকে ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই হাওরের পাকা ধান কাটতে কৃষককে অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

এ অবস্থায় হাওরের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রতিষ্ঠান এসিআই মটরস। ‘হারভেস্টিং এক্সপ্রেস’ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ১০০টি হারভেস্টার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা হাওরেই ৭০টির বেশি হারভেস্টার কৃষকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বোরো সিজনে কৃষকের মধ্যে নতুন হারভেস্টারের বিশাল চাহিদা থাকে। গত আমন মৌসুম থেকে সরকারি ভর্তুকি না থাকায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। যাঁরা সরকারি ভর্তুকি বন্ধের কারণে নতুন হারভেস্টার কিনতে পারছেন না, তাঁদের জন্যই চালু করা হয়েছে এই সেবা। এতে করে হারভেস্টার না কিনেই স্বল্প সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ ধান কাটতে পারছেন কৃষকেরা।

এসিআই মটরস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত একটি হারভেস্টারের দাম প্রায় ৪০ লাখ টাকা। হারভেস্টার কেনার ক্ষেত্রে এককালীন ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে বাকিটা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু ‘হারভেস্টিং এক্সপ্রেস’ প্রকল্পের আওতায় স্বল্প পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে হারভেস্টার ভাড়া নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন হাওরের কৃষকেরা। সেই হারভেস্টার দিয়ে বর্গা প্রতি হারে ধান কেটে আয় করার পাশাপাশি ভাড়া পরিশোধ করছেন তাঁরা।

এ ছাড়া চলতি মৌসুমে কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হাওর এলাকায় বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার। পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ইয়ানমার সার্ভিস সেন্টার, যার মাধ্যমে কৃষকদের বিনা মূল্যে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ