ধারাভাষ্যকার আর ক্যামেরার নড়াচড়া না থাকলে পুরস্কারের মঞ্চকে মনে হতো ভাঙা হাট। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আর জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার ব্লেসিংস মুজারাবানি ছাড়া খেলোয়াড়দের কেউ ছিল না পুরস্কার বিতরণীতে।

দোতলায় বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম থেকে বিমর্ষ ফিল সিমন্স উদাস তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলেন। ছোট দলের কাছে টেস্ট হারলে বড় দলের কোচদের যে অনুভূতি থাকে, সিমন্স কি সেভাবে কল্পনার জগতে ডুবে গিয়েছিলেন? নাকি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মতো তাঁকেও হারের শোক-তাপ স্পর্শ করে না? নাজমুল হোসেন শান্তরাই যেখানে নিজ দেশকে হারিয়ে সেভাবে হতাশা বোধ করেন না, সেখানে বিদেশি কোচের মুখে সন্তাপ দেখতে চাওয়াও ভুল ভাবনা। 

সিলেটে যে দলের কাছে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ হেরেছে, সেই জিম্বাবুয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ না। ক্রিকেটের বাণিজ্যের রমরমা বাজার নেই তাদের দেশে। বেতন-বোনাসের দাবিতে মাঝেমধ্যে বিদ্রোহও তো হতে দেখা গেছে অতীতে। সেই জিম্বাবুয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসে সিলেটে কী দারুণ ক্রিকেটই না খেলেছে! ২০২১ সালের পর আরেকটি জয়ের স্বাদ পাওয়া সত্যিই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদের জন্য বিশাল অর্জন। স্পোর্টিং কন্ডিশন পেয়ে ম্যাচের প্রথম থেকে ভালো ক্রিকেট খেলে তিন উইকেটে ম্যাচ জিতেছে সফরকারীরা। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বাংলাদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করার কথা না। ২০২৩ সালে সিলেটের এই মাঠেই তো নিউজিল্যান্ডকে হারের স্বাদ দিয়েছিলেন শান্তরা। 

গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হারিয়ে দেওয়া দলই দেশের মাটিতে হেরে গেছে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের ১২ নম্বর দলের কাছে। ২০১৮ সালেও এই ভেন্যুতে হ্যামিলটন মাসাকাদজারা হতবিহ্বল করে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানদের। সাত বছর পর সিলেটে আরেকটি জিম্বাবুয়ে শকে শোকাহত ক্রিকেটানুরাগীরা। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটার বা কোচিং স্টাফের পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়াতে পারার কথা না। বিসিবি পরিচালকদেরও মঞ্চে দেখা মেলেনি। পরিচালক নাজমুল  আবেদীন ফাহিমকে যেখানে মেয়ের ক্রিকেট লিগের পুরস্কার বিতরণীতে নিয়মিত দেখা যায়, তাঁকেও গতকাল দেখতে পায়নি কেউ। সিলেট টেস্টের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চকে তাই ভাঙা বিয়েবাড়ির মতোই দেখায়। 

এই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ইতিবাচক একটা চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের সদস্যদের। প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়া সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ইতিবাচক কথা বলার  চেষ্টা করে গেছেন। দ্বিতীয় দিনের সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান মিরাজ স্মরণ করিয়ে দেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে পিছিয়ে থেকেও টেস্ট জেতার ঘটনা। গত পরশু মুমিনুল হক জোর গলায় বলেছিলেন, ২৭০ থেকে ৩০০ রানের টার্গেট দিয়ে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করতে পারবেন তারা।

ব্যাটারদের ব্যর্থতার মিছিলের পরও টেল এন্ডারদের ওপর ভরসা করে স্বপ্ন দেখেছিলেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। এই ‘স্টোরি টেলার’দের ভুল প্রমাণ করে জিম্বাবুয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুজারাবানি বলেছিলেন, ২০০ রানের লক্ষ্য পেলেও ম্যাচ জিতবেন। লক্ষ্য ২০০ পৌঁছানোর আগেই বেঁধে ফেলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে। সফরকারী দলের পেসার আরও বলছিলেন, প্রতিপক্ষ দলের রানের কথা না ভেবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চতুর্থ দিন খেলবেন তারা। নিজেদের কাজটা পরিকল্পনা মতোই করে যেতে পেরেছেন তারা। 

ছয় উইকেট আর ১৯৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। আগের রাতের অপরাজিত থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকের আলী জুটি অক্ষত রেখেছিলেন মাত্র এক বল। দিনের দ্বিতীয় বলেই মুজারাবানির শিকার অধিনায়ক। ৬০ রানে শান্তর আউটে বিশাল লিড নেওয়ার স্বপ্নে ভেস্তে গেছে। গতকাল খেলা দেখে থাকলে পরের গল্প জানা থাকার কথা। উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের একা লড়াই করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তের ব্যাটাররা মিছিল করে আউট হয়েছেন। ১১১ বলে ৫৮ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি।

মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি না পেলে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব হতো না। বৃষ্টিও তো বাংলাদেশকে কম সহযোগিতা করেনি। বৃষ্টি না হলে চতুর্থ দিন সকালের সেশনেই ম্যাচ শেষ হয়ে যেতে পারত।

এই টেস্টে বাংলাদেশকে ১৯১ রানে অলআউট করে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৭৩ রান। ৮২ রানে এগিয়ে থাকাই জিম্বাবুয়েকে জয়ের পথ ঠিক করে দিয়েছে। পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রান করার পরও তাই লো টার্গেট হয়েছে। এই টেস্টে হাতাশার মধ্যেও প্রাপ্তি বলতে মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার। এই  ম্যাচ দিয়েই ৫২ টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক পেলেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের পর তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট প্রাপ্তি ক্লাবের সদস্য হলেন মিরাজ। যদিও ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ব্যক্তিগত অর্জন গুরুত্ব হারিয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ক র দল র ক উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ