বরফের সুউচ্চ আস্তরণে সবুজের বিস্তার, বিপর্যয়ের বার্তা
Published: 25th, April 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন- আগামী এক দশকের মধ্যে উত্তর মেরু বরফশূন্য হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। উত্তর মেরু বা আর্কটিক অঞ্চলে আগামী কয়েক বছরে কার্যত কোনো সামুদ্রিক বরফ গ্রীষ্মের সময় দেখা যাবে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে এ উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যদি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে না পারি, তাহলে বিশ্বে এমন ওলট–পালট শুরু হবে, যা আর সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।
পৃথিবীর শীতলতম আর্কটিক অঞ্চলে এত দ্রুত পরিবর্তন আসবে, এমনটা কয়েক দশক আগেও কেউ কল্পনা করেননি। সবকিছু বদলাচ্ছে। যেখানে বরফের সুউচ্চ আস্তরণ ছিল, সেখানে সবুজ অঞ্চল ভেসে উঠছে। দেখতে মনোরম হলেও এ এক বিশাল বিপর্যয়ের বার্তা, সতর্কতা সংকেত। উত্তর মেরু বা আর্কটিকে শুধু বরফই থাকার কথা, সেখানে গাছগাছালি, ঘাস, সবুজের বিস্তার হওয়াটাই অস্বাভাবিক।
আর্কটিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে এর আশপাশের বরফ আচ্ছাদিত এলাকায়ও। গ্রিনল্যান্ডের মতো অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ডেনমার্কের শাসনে থাকা দ্বীপটির দখল নেওয়ার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাইবেরিয়ার উত্তর তীরে রাশিয়া ও চীনের আগ্রহ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এ অভিলাষ নতুন করে গ্রিনল্যান্ডকে সবার সামনে এনেছে। পুরো বিষয়টিই ভূরাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে ফিনল্যান্ডের একেবারে উত্তরের ল্যাপল্যান্ড– আর্কটিক অঞ্চলের গন্তব্যগুলো দর্শনার্থীদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। পর্যটক এসব এলাকায় ঘুরে বরফ-পাহাড়ের রোমাঞ্চ উপভোগ করেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন কোম্পানি।
ওশানস্কাই ক্রুজ নামে সুইডেনের এক স্টার্টআপ কোম্পানি উত্তর মেরুতে বিলাসবহুল বিমানযাত্রা চালানোর পরিকল্পনা করছে, যদিও এর কার্যক্রম শুরুর দিন-তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের গ্রহের শীর্ষবিন্দু (উত্তর মেরু) বহুকাল ধরে ভ্রমণপিপাসুদের নাগালের বাইরে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি বিমান সংস্থা অবিশ্বাস্যভাবে এর কাছাকাছি ওড়ার চেষ্টা করছে। এখন আসা যাক আলোচ্য বন্দরটি প্রসঙ্গে। নরওয়ের সোয়ালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের বিমানবন্দর, যেখানে নির্ধারিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি বিমান সংস্থা– এসএএস ও নরওয়েজিয়ানের উড়োজাহাজ দ্বীপপুঞ্জের প্রধান বসতি লংইয়ারবাইন বিমানবন্দর ও দক্ষিণে ৮০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সারাবছর চলাচল করে। বিমানবন্দরটি নিয়মিতভাবে চার্টার ফ্লাইট ও ব্যক্তিগত জেট বিমানও স্বাগত জানায়। এটি এর অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের আকর্ষণ। কার্যত আর্কটিক বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এ অঞ্চলে থাকা সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরও এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে শুরু করেছে।
নেচার রিভিউস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলে বলা হয়েছে, উত্তর মেরু বা আর্কটিকের প্রথম বরফশূন্য দিনটি আগের অনুমানের চেয়ে ১০ বছর আগে পৃথিবীবাসী দেখতে পারে। সেই সময় মেরু অঞ্চলটি এক মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য বরফমুক্ত থাকবে। পৃথিবীর কার্বন নির্গমণ পরিস্থিতির কারণে এমনটা দেখা যাবে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ আর্কটিক অঞ্চলে সম্ভবত সেপ্টেম্বরে, মানে গ্রীষ্মের সময় ভাসমান বরফ দেখা যাবে না। বিজ্ঞানীরা বরফশূন্য আর্কটিক, মানে পানিতে কোনো বরফ থাকবে না- এমনটা মনে করেন না। গবেষকেরা সমুদ্রে বরফের আকার এক লাখ বর্গকিলোমিটারের কম থাকলে তখন আর্কটিককে বরফমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্কটিক মহাসাগরে ৩৩ লাখ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র বরফের ছিল। সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন পরিমাণে বরফ দেখা যায়।
সমুদ্রের বরফ হ্রাস পেলে উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের ঢেউ বড় হবে, ফলে উপকূলীয় এলাকার ক্ষয় হবে। কার্বন নির্গমণের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে ভবিষ্যতে আর্কটিক এলাকা কখনো না কখনো বরফশূন্য হবেই। এই শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর মেরু অঞ্চল বছরে ৯ মাস পর্যন্ত বরফশূন্য থাকতে পারে। সাদা আর্কটিক অঞ্চলের বদলে আমরা তখন নীল আর্কটিক অঞ্চল দেখতে পাব। খবর- সিএনএন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ম নবন বরফ র র বরফ
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’