১৬ বছরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে বিএনপি-জামায়াত, বাম-ডান সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে মন্তব্য করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, এখন আমাদের মধ্যেও অনেককে লক্ষ করা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের আধিপত্য, তাদের শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিবাদ হটানোর আমাদের যে একটা ঐক্য হয়েছিল, আমরা যেভাবে ইউনাইটেড ছিলাম, এখন আবার কিছুটা তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।’

আজ শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরের শেরেবাংলা পার্কের মুক্তমঞ্চে গণ অধিকার পরিষদ পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে এ কথা বলেন নুরুল হক।

আওয়ামী লীগের আমলের সেই লুটপাট, দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাফিয়াদের রাজনীতি এখনো চলছে মন্তব্য করে নুরুল হক বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে এই গণ-অভ্যুত্থানের পরেও কিন্তু তার পরিবর্তন হয় নাই। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা খোঁজ নেন, ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে, টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে, বাসস্ট্যান্ড থেকে আগে যেভাবে চাঁদা তুলত, এখন চাঁদা তোলা বন্ধ হয়েছে কি না। কাঁচাবাজার, সবজিবাজার, বিভিন্ন সমিতি, গার্মেন্টস, মিল-ফ্যাক্টরি থেকে চাঁদাবাজি যারা করত, চাঁদা যারা তুলত, আওয়ামী লীগ তো পালিয়ে গেছে, এখন এই চাঁদাবাজি-লুটপাট বন্ধ হয়েছে কি না। হয় নাই। সাধারণ মানুষের রক্তচোষাদের এখনো আমরা উপস্থিতি লক্ষ করি। চাঁদাবাজদের তো আমরা বুকের রক্ত দিয়ে হটিয়েছি, দখলদারকে তো আমরা জীবন দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। তাহলে এখন চাঁদাবাজ-দখলদার কারা?’

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শুধু আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়নি এই দেশের জনগণ, এই দেশে ভারতীয় আগ্রাসন এবং আধিপত্যবাদকেও উচ্ছেদ করেছে বলে মন্তব্য ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের। তিনি বলেন, ‘কাজেই এখানে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হবে না। আওয়ামী লীগ এ দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের জঘন্য গণহত্যা এবং বর্বরতা করে কোনো রাজনৈতিক দল সেই দেশে রাজনীতি করতে পারেনি।’

গণ অধিকার পরিষদ পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহফুজার রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নুর, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ মুন্নাফ, গণসংহতি আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান, পঞ্চগড় জেলা জাগপার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বিপ্লব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলার অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ল হক দখলদ র র জন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন