প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের
Published: 28th, April 2025 GMT
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি’র সুপারিশ এবং আদালতের রায়ের আলোকে এই উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জনবল কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সুপারিশ করা উন্নীত গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বেতনস্কেল উন্নীতকরণের চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রস্তাব দিতে বলেছে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরকে এই চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।
তবে, এ বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ভিন্নমত আছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকেরা বলছেন তাঁরা এই উদ্যোগ মানবেন। তাঁদের মূল দাবি সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড ন্যূনতম ১১ তম করতে হবে। এই দাবিসহ তিন দফা দাবিতে তাঁরা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষকেরা বলছেন, আদালতের রায়ের আলোকে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এটি কেবল রিট আবেদনকারী শিক্ষকদের জন্য নয়, সব শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে চার লাখের মতো শিক্ষক আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১ তম। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩ তম (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা, এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়)।
পরামর্শক কমিটি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শতাধিক সুপারিশ করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটি ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ‘শিক্ষক’ হিসেবে শুরুতে বেতন গ্রেড হবে ১২তম (শুরুর মূল বেতন হবে ১১ হাজার ৩০০ টাকা, এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যোগ হবে)। এরপর দুই বছর পর চাকরি স্থায়ীকরণ ও আরও দুই বছর পর তাঁরা ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হবেন। তখন তাঁদের বেতন গ্রেড হবে ১১ তম। পরামর্শক কমিটি প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১০তম করার সুপারিশ করেছে। এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের রায়ে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম করতে বলা হয়েছে।
এখন পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও আদালতের রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী নেওয়ার জন্য তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধি, বিদ্যালয়কে লাল–হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে ভাগ করার সুপারিশপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কেমনসর্বোচ্চ রায়ের আলোকে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা, মুখপাত্র, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি
সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রশিক্ষণ পাওয়া ও প্রশিক্ষণবিহীন দুই ধরনের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করা হয়। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড করা হয় ১৩তম। তার আগে প্রশিক্ষণ পাওয়া প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পেতেন। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরা ১৪তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকেরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পেতেন।
ভিন্নমত শিক্ষকদের, কর্মবিরতির ঘোষণাসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির দাবিতে জানিয়ে আসছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ অবস্থায় সরকারের নতুন এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১২তম করার উদ্যোগ তাঁরা মানেন না। তাঁরা চান সহকারী শিক্ষকদের শুরুর পদের বেতন গ্রেড ন্যূনতম ১১ তম গ্রেড হতে হবে। এই দাবিতে তাঁরা আন্দোলনে যাবেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সহকারী শিক্ষকেরা দাবি আদায়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। সংগঠনটি তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিন দফা দাবি হলো; পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদে শুরুর পদ ধরে ১১ তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরিতে ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি। এই তিন দফা দাবি পূরণে সরকারকে ৪ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি। যদি এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হয় তাহলে ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে এবং ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরেও দাবি পূরণ না হলে ২৬ মে থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ রায়ের আলোকে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা রাখবে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতকরণের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে এই পদমর্যাদা ও বেতন গ্রেড সব প্রধান শিক্ষকের জন্য কার্যকর করে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সবার জন্য এটি কার্যকর না হলে প্রধান শিক্ষকেরা বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের পরিবর্তে আরও আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর র য় র আল ক পদমর য দ কর মকর ত র জন য সরক র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএস নন-ক্যাডার পদের নিয়োগে কেন সংকট তৈরি হলো
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির ক্যাডার এবং কারিগরি বা পেশাগত পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে বড় নিয়োগ পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই পরীক্ষার চাহিদা ও আকর্ষণ গত দুই-আড়াই দশকে অনেকটা বেড়েছে। বিসিএস দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ আগেও ছিল; কিন্তু এখন রীতিমতো একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়!
বর্তমান প্রক্রিয়ায় আবেদনকারী প্রার্থীকে প্রথমে ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এখান থেকে বিজ্ঞাপিত শূন্য পদের কয়েক গুণ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়। এরপর লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম শতকরা ৫০ ভাগ নম্বরপ্রাপ্তদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তিন ধাপের পরীক্ষা পার হওয়ার পর নির্ধারিত ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি; কিন্তু এর বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত পার হয়েও অসংখ্য প্রার্থী চাকরি পান না। তাঁদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে ২০১০ সালে নন-ক্যাডার বিশেষ বিধিমালা করা হয়।
এই বিধির ফলে এক বিসিএস দিয়েই প্রার্থীরা নবম গ্রেডের ক্যাডার এবং ৯ থেকে ১২তম গ্রেডের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেতে থাকেন। সিদ্ধান্তটি চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে খুবই ইতিবাচক ছিল। কারণ, এতে তাঁদের আবেদনের খরচ এবং বারবার পরীক্ষা দেওয়ার ঝামেলা কমে যায়; কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে বেশিসংখ্যক চাহিদা না দেওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রায় ১৯ হাজার প্রার্থী কোনো চাকরি পাননি। বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হয়েও পদের অভাবে চাকরি না পাওয়াটা প্রার্থীদের জন্য ছিল হতাশার। সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির পদেও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রতিবছরই হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। বিসিএস পরীক্ষা নিয়মিত হলে এবং ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা গেলে প্রার্থীদের অকারণ অপেক্ষা করতে হয় না৩৪তম বিসিএস থেকে প্রার্থীরা উল্লেখযোগ্য হারে নন-ক্যাডার পদ পেতে থাকেন। ৩৪তম থেকে ৪১তম বিসিএস পর্যন্ত দুই হাজারের কাছাকাছি থেকে চার হাজারের বেশি প্রার্থী নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পান। যেমন ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ৩ হাজার ১৬৪ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর আগের ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী ছিলেন ৪ হাজার ৩২২ জন। কিন্তু ৪৩তম বিসিএসে এই সংখ্যা নেমে হয় ৬৪২। মূলত এখান থেকেই সংকটের শুরু।
৪৩তম বিসিএসের আগের পরীক্ষাগুলোতে প্রথমে ক্যাডার পদের ফল প্রকাশ করা হতো। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী নন-ক্যাডারের ফল দেওয়া হতো। এর দরুন বেশি সংখ্যক প্রার্থী চাকরির সুযোগ পেতেন। কিন্তু ২০২৩ সালের নন-ক্যাডার বিধিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের চূড়ান্ত ফল একসঙ্গে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদ উল্লেখের নিয়মও যুক্ত হয়েছে। এর বিরোধিতা করে একদল প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এভাবে পদ উল্লেখের কারণে নির্ধারিত পদের বাইরে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ আগের নিয়মে তালিকায় থাকা বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীরা পরবর্তী বিসিএসের আগপর্যন্ত চাহিদামতো নিয়োগের সুযোগ পেতেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, ২০২৩-এর নন-ক্যাডার বিধি বাতিল করে আগের বিধি পুনর্বহাল করা যেতে পারে। তা ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার শূন্য পদ উল্লেখ না করে পদ তৈরির সুযোগ উন্মুক্ত রাখাই ভালো। স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থে ক্যাডারের ফলের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীদের মেধাভিত্তিক তালিকা আলাদা করে প্রকাশ করা যায়। তাহলে এখান থেকেই নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
একেকটি বিসিএসে লাখ লাখ আবেদনকারীর মধ্য থেকে খুব সীমিতসংখ্যকই চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ পান। সর্বশেষ চূড়ান্ত ফল ঘোষিত ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন। এর মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয় ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থীকে। লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন ৯ হাজার ৮৪১ জন। শেষ পর্যন্ত চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন মাত্র ২ হাজার ৮০৫ জন। এভাবে প্রতিটি বিসিএসেই দেখা যায়, আবেদনকারী মোট প্রার্থীর বিপরীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থী চাকরির সুযোগ পান।
পিএসসি ১২তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগ দিয়ে থাকে। ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। পিএসসির সাবেক কোনো কোনো সদস্য মনে করেন, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরাসরি নিয়োগ কমিয়ে নন-ক্যাডার নিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একটি অংশ ক্যাডার হতে না পারলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে চাকরির সুযোগ পাবেন। বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগের ফলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্য কমে আসবে। এই প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা বেশি হারে সুযোগ পাবেন এবং তাঁদের সময়, অর্থ ও পরিশ্রম কমবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনে ৪ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য আছে। তবে একসঙ্গে এত পদ পূরণ করা সম্ভব নয়, এমনকি তা উচিতও হবে না। কারণ, প্রতিবছরই হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। বিসিএস পরীক্ষা নিয়মিত হলে এবং ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা গেলে প্রার্থীদের অকারণ অপেক্ষা করতে হয় না।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক