Samakal:
2025-09-18@10:17:22 GMT

১৫ লাখ টন আম নিতে চায় চীন

Published: 28th, April 2025 GMT

১৫ লাখ টন আম নিতে চায় চীন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার একটি রপ্তানিযোগ্য আমবাগান পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন চীনে আম রপ্তানি প্রসঙ্গে বলেছেন, ইতোমধ্যে দুদেশের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া চীনে যেকোনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অব কাস্টম অব চায়না (জিএসিসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জিএসিসি গত বছরের জুলাইয়ে আম রপ্তানির নিবন্ধন দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, এখন চীনের আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির বিভিন্ন পর্যায় যাচাই-বাছাই চলছে। হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট কেলিব্রেশন বা সঠিকতা, প্যাকেজিংসহ অনেক কিছুই যাচাই করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চীন মে মাসের মধ্যভাগ থেকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম নেবে।

চীন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য কমপক্ষে ১৫ লাখ টন টন আম নিতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আম রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে তাদের দেশের সফল আলোচনা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলো দেখতে এসেছি। আমগুলো কতটা রপ্তানিযোগ্য তা যাচাই করতে এখানে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা এসেছি। বাংলাদেশের উৎপাদিত সুস্বাদু মিষ্টি ফ্রেশ আম বাংলাদেশের জন্য খোলা চায়নার বাজারে। তাছাড়া অন্যান্য দেশের চাইতে বাংলাদেশের আম চাষীদের চীনে আম রপ্তানিতে খরচও কম। চীনের আগ্রহ থাকায় আম সংরক্ষণ ও সংরক্ষণাগার নির্মাণে চীন সহযোগিতা করবে।

এ সময় তিনি তার সাথে থাকা একজন রপ্তানিকারককে ইঙ্গিত করে বলেন, এ ব্যক্তি চীনে আম রপ্তানিতে আগ্রহী। এর আগে গত সপ্তাহে জেলার কয়েকটি আমবাগান এবং আম গ্রেডিং, শর্টিং ও শোধনকেন্দ্র পরিদর্শন করেন চীনের আমদানিকারকদের প্রতিনিধি। পরিদর্শন শেষে তারাও আম আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে খুশি বাগান মালিক ও উদ্যোক্তারা। আম রপ্তানি দেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেবে। আগামী জুন থেকেই আশা করা যায় চীনে আম রপ্তানি শুরু হতে পারে।

এর আগে সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার কয়েকটি রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান ঘুরে দেখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চায়নার রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি উত্তম কৃষি চর্চার (গ্যাপ) মাধ্যমে চাষ করা আম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের এ উদ্যোগকে তারা প্রশংসা করেছেন। এসব আম তাদের দেশে রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আম্রপালি, বারি-৪, কাটিমনসহ বিভিন্ন জাতের আমগাছগুলো ঘুরে দেখেন। আমের চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকেও খোঁজ খবর নেন তিনি। এসময় রাষ্ট্রদূতের সাথে তার স্ত্রীসহ কয়েকজন আমদানিকারক উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.

ইয়াছিন আলী, নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ্ আকরাম, নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকার, সহকারী কমিশনার ভূমি সুলতানা রাজিয়া, থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হানুল ইসলামসহ কৃষি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

সেখানকার বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম, মানিক, বাবুসহ কয়েকজন কৃষক তাদের বাগানের বিভিন্ন জাতের আম সম্পর্কে ধারণা দেন । সেইসাথে চীনের আমদানি করা ফ্রুট ব্যাগগুলো দিয়ে আমগুলো মুড়িয়ে রাখার কারণ অবহিত করেন রাষ্ট্রদূত ও তার সফরসঙ্গীদের।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্তত ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি হয়ে থাকে। যার বেশিরভাগ আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রপ্তানি হয়। তবে এ বছরই প্রথম চীনের বাজারে দেশের আম রপ্তা‌নির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা দেশে ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে পরিবহন খরচ ৪৮০-৫২০ টাকা হলেও চীনে এ খরচ মাত্র ৮০/৯০ টাকা। এতে করে আমরা আমচাষীরা অনেক লাভবান হবে।

অপর চাষী মানিক বলেন, বাংলাদেশ থেকে আম কিনতে আগ্রহী চীন। এটা উদ্যোক্তাদের জন্য খুশির খবর। কোনো তৃতীয়পক্ষ ছাড়া সরাসরি বাগান থেকে চীনে আম রপ্তানি করতে পারলে আমাদের মতো চাষীদের নিশ্চিত হবে ন্যায্যমূল্য।

এদিকে চীনের রাষ্ট্রদূতের আম কেনার আগ্রহে রপ্তা‌নির পরিমাণ বাড়াতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস কৃষি বিভাগের উপস্থিত কর্মকর্তাদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা সলেহ্ আকরাম বলেন, কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আম রপ্তা‌নিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত চায়না রাষ্ট্রদূত নাচোলের কেন্দুয়াতে রফিকুলের আমবাগানটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি আম বাগানটি পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট হয়েছেন। চায়না রাষ্ট্রদূত নাচোলের আম কিনতে সম্মতির কথা জানিয়েছেন। আম রপ্তানি বাড়াতে নাচোলের রপ্তানিযোগ্য আমবাগান গুলো রাষ্ট্রদূতকে ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ধরনের বাধা-বিঘ্ন রয়েছে, সেগুলো দূর করে রপ্তানি বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুস্বাদু ও সম্ভাবনাময় আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আমের উৎপাদন কার্যক্রম ঢাকায় নিযুক্ত চায়না রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরতে আমবাগান পরিদর্শনের এই আয়োজন। চায়না এবছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম কিনতে আগ্রহী প্রকাশ করেছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আমের বাম্পার উৎপাদন ও রপ্তানিতে এ বছর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে দেশ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ র ন চ ল উপজ ল কর মকর ত আমব গ ন র উৎপ দ ল ইসল ম অফ স র আম ক ন লক ষ য আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ