বৈশাখের দুপুর। রোদের তাপে যেন মাটিতে আগুন জ্বলছে, বাতাসে ধুলার নৃত্য। মাঠ-ঘাটের বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম। এর মধ্যে দূর আকাশে ঘনিয়ে আসা মেঘের ছায়া মাঝেমধ্যে আশার মৃদু আভাস ছড়িয়ে দেয়। চারদিকের খাঁ-খাঁ নীরবতার মধ্যে আকস্মিক মেঘের গর্জন যেন প্রকৃতির এক অশ্রুতপূর্ব সুর।
শহরের কোলাহল ফেলে গ্রামীণ পথে চলতে চলতে ক্লান্ত শরীরের ভারী বোঝা নিয়ে হঠাৎ থেমে যাই। পথের ধারে দাঁড়িয়ে, রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ রূপে মুগ্ধ হই। আগুনরাঙা ফুলের সমারোহে সে যেন রুক্ষ বৈশাখের বুকেও প্রেমের এক উজ্জ্বল দীপ্তি বয়ে আনছে। ঝলসে যাওয়া প্রকৃতির মধ্যে তার প্রতিটি ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
চলার পথে হঠাৎ করে আকাশ ভারী হয়ে আসে। ধূসর কালো মেঘের চাদরে ঢাকা পড়ে রোদ। মৃদু বাতাস বয়ে আনে বৃষ্টির গন্ধ। বাজারের এক কোণে ছাউনির নিচে আশ্রয় নিই। সেখানেও প্রকৃতি নিজের শিল্পকর্ম মেলে ধরেছে, চায়ের দোকানের পাশে সোনালি হলুদ কনকচাঁপা মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বাতাসেই নড়ে উঠছে। এ যেন হলুদিয়া পাখির নৃত্যকলা। বৃষ্টির নরম ফোঁটা যখন গায়ে পড়ছে ভিজে সে আরও উজ্জ্বল, আলোকিত হয়ে উঠছে, শত বেদনার মধ্যেও এক টুকরো সৌন্দর্যের আভা ছড়িয়ে ডেকে যাচ্ছে।
বাজারের চারপাশে ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপ। কৃষক ধানকাটা থামিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন, দোকানিরা মালপত্র ঢেকে রাখছেন, পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নীড়ে। অথচ কৃষ্ণচূড়া আর কনকচাঁপা অটল-অবিচল। ঝড়ের হাওয়ায় দুলছে, কিন্তু মাথা নত নয়। তারা যেন বলছে, ঝড় আসবেই, রোদ জ্বলবেই, কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকবে না। বৈশাখ শুরুর কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেলেই জারুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও স্বর্ণচাঁপা, গন্ধরাজ, লাল সোনাইল, উদয়পদ্ম, কুরচি, কনকচূড়া, পালাম, পাদাউকু নানাভাবে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। চারপাশ প্রাণবন্ত করে তোলে সৌন্দর্যের প্রতীক ফুলেরা। প্রকৃতি সবসময় চঞ্চল। আপন গতিতে ছুটতে থাকে। প্রতিটি ঋতুর বিন্যাসকে ভেঙেচুরে আরেকটি নতুন ঋতুর কাছে নিয়ে যায়। সেই পরিক্রমায় প্রাণিকুল আন্দোলিত হয়। জেগে ওঠে নতুন উদ্যমে।
গ্রীষ্মে জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়া জৌলুস হারালেও রেশ থেকে যায় আরও কয়েকটা দিন। সবুজে ঘেরা বাংলার মেঠোপথকে হলুদ রঙে রাঙিয়েছে সোনারঙা সোনালু। সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশ। কবিগুরুর সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে বলতে পারেন– ‘গ্রামের পথে ক্ষণে ক্ষণে ধুলা উড়ায়,/ ডাক দিয়ে যায় পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ায়;/এমনি করে বেলা বহে যায়,/এই হাওয়াতে চুপ করে রই একলা জানালায়।’ বৈশাখের উত্তাপ, ঝড়, বৃষ্টি পেরিয়ে রঙিন ফুলেরা যেন আমার হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে নতুন পথচলার গান– জীবন মানেই রক্তিম জয়গান, সোনালি প্রতিজ্ঞা। v
সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ সমাবেশ, বগুড়া
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ স ন দর য
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?