বন্যা, ঝড় ও তাপপ্রবাহের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। উপকূলীয় এলাকার ১৯ জেলায় মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় ৪৯ শতাংশ বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে দেশে বেড়েছে খরাপ্রবণতাও। খরাপ্রবণ জেলাগুলোর আবাদি জমির ৬৪ শতাংশ এখন ক্ষতিগ্রস্ত। খরায় বছরে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে হওয়া এই ক্ষতির প্রায় পুরোটাই বহন করতে হচ্ছে কৃষককে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের জন্য যে সুরক্ষা বলয় থাকা দরকার, তা নেই। ফলে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষির প্রতি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ব্যাপকভাবে শস্য বা কৃষি বীমা চালু করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে সব ধরনের ফসলের উৎপাদন ছাড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, পোকামাকড়ের আক্রমণে কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির কবলে পড়েন। কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শস্য বীমা বা কৃষি বীমা সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শস্য ও কৃষি বীমা চালু করেছে। এর মধ্যে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার ফাউন্ডেশন, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ব্র্যাকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যদিও ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বিভিন্ন ধরনের শস্য বীমার মাধ্যমে কৃষকদের সুরক্ষা বলয় আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে শস্য বীমা জনপ্রিয় করতে বেশ কিছু বাধা অতিক্রম করতে হবে। এর মধ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমিত বাজার তথ্য, দুর্বল পণ্য উন্নয়ন, স্বল্প প্রযুক্তি, দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা, অ্যাকচুয়ারি-সংক্রান্ত দক্ষতার পাশাপাশি বাণিজ্যিক কার্যকারিতা বিষয়ে নানান উদ্বেগ দূর করা দরকার। সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, শস্য বীমার মাধ্যমে কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন আনা সম্ভব। সরকারের নীতি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।
জাতীয় কৃষি নীতিতে এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া বীমা বিধিমালায় শস্য বীমা বিষয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত ও সময়োপযোগী অধ্যায় সংযোজন করা প্রয়োজন। বীমা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ আর্থিক সুবিধা বিশেষ করে ঋণ, ট্যাক্স ও ভ্যাট সুবিধা প্রদান করতে হবে। কৃষি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগে থাকতে হবে একটি উচ্চতর কমিটি। ডিএইর মাঠ দিবস ছাড়াও ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যমে বীমার বিষয়ে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা দরকার।
কৃষি সচিব ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
লবণশ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে
দেশে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার এবং ৫৫ হাজার দক্ষ শ্রমিক সরাসরি লবণ উৎপাদনে যুক্ত। আরও ৫ লাখের বেশি শ্রমিক এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে লবণ খাত দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক পরামর্শ সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘দেশে লবণ খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পরামর্শ সভা’ শিরোনামে সভাটির আয়োজন করে আইজেক প্রকল্প। আইজেক প্রকল্পের পূর্ণ নাম হচ্ছে ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার। কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ইনোভিশন কনসালটিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৮৫ জন শ্রমিক ও কৃষককে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৪৪৪ জনকে চিকিৎসাসহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে ২টি হাসপাতাল ও ৬টি লবণ কারখানার সঙ্গে আইজেক প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান লবণকে ‘সাদা সোনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ক্ষুদ্রঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে লবণ খাতকে শক্তিশালী করব।’ তিনি লবণশ্রমিকদের শ্রম অধিকার আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সহায়তা দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আরও সচেতনতা এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় লবণচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অনিশ্চিত আয়ে ভুগি। আমাদের নিয়মিত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন।’
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শহীদ হাসান ফেরদৌস। আইএলও কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান রুচিকা বেহল লবণ চাষ ও আইজেক প্রকল্প নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ, বিসিকের লবণ বিভাগের প্রধান সরওয়ার হোসেন, ইনোভিশনের পোর্টফোলিও পরিচালক তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবসায় কৌশল ও ইএসজি প্রধান ফিরোজ আলম তালুকদার, এসিআই লিমিটেডের ব্যবসায় ব্যবস্থাপক জিসান রহমান, প্রিটি কম্পোজিট টেক্সটাইলসের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব কামরান, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবেদ আহসান সাগর, আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞ জনসন, আইএলওর ইআইএস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাদ গিলানি।
বক্তারা বলেন, লবণের বিশুদ্ধতা বাড়ানো এবং লবণভিত্তিক শিল্পের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। কাঁচা লবণের বিশুদ্ধতা ও আর্দ্রতা সমস্যা দূর করতে কাঠামোগত অদক্ষতার সমাধান প্রয়োজন।