বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ দ্রুত বাস্তবায়ন যে কারণে জরুরি
Published: 1st, May 2025 GMT
স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণ সামনে রেখে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামোতে কৌশলগত পুনর্গঠন অত্যাবশ্যক। অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার অবসান, নীতির সীমাবদ্ধতা এবং ক্রমহ্রাসমান উন্নয়ন সহায়তার এই ত্রিমুখী চাপে এখন দীর্ঘমেয়াদি ও পারস্পরিক বাণিজ্য অংশীদারিত্বের দিকে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ার অর্থনৈতিক সংহতকরণের অগ্রনায়ক ও জি-সেভেনভুক্ত জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ। জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সফল বাস্তবায়ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাণিজ্যিক অংশীদারদেরও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী করে তুলবে।
বস্তুত জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ৫০ বছরের পথচলায় ইতোমধ্যে সুদৃঢ় ও প্রসারিত। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশকে ২৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়েছে জাপান। এর মধ্যে প্রায় ২৪ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার এসেছে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় দাতা রাষ্ট্র হিসেবে জাপান বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি), ঢাকা মেট্রোরেল ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। ২০২২ সালে জাপানে আমাদের পোশাক রপ্তানি ৪০ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০-’২১ সালের মধ্যে জাপান থেকে আমদানি বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী ভ্যালু চেইনের অংশ হতে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি খাত বহুমুখীকরণ, সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গঠনে মানবসম্পদ উন্নয়ন– এই তিন দিক হবে আগামী দিনের মূল কৌশল। কারণ, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগের মতো বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা মিলবে না। ফলে রপ্তানি খাতে টিকে থাকাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। এ পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নতুন অর্থনৈতিক সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
সাধারণ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) চেয়ে ইপিএ বিস্তৃত ও উন্নয়নবান্ধব। এতে ধাপে ধাপে শুল্ক কমানোর ব্যবস্থা অংশগ্রহণকারী দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই। বাংলাদেশের জন্য জাপানের সঙ্গে ইপিএ শুধু বাজার ধরে রাখার পথ নয়। বরং বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ। ইপিএ না হলে বাংলাদেশের উন্নয়নের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অগ্রগতি থেমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইপিএ স্বাক্ষরের ফলে প্রচলিত টেক্সটাইল রপ্তানি ছাড়িয়ে খাতভিত্তিক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। গার্মেন্টস ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালাল মাংস, গভীর সমুদ্রের মৎস্য আহরণ, আইসিটি সেবা ও হালকা উৎপাদন এবং প্রকৌশল খাতে জাপানি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে শুল্ক কমানোর মাধ্যমে জাপান থেকে উন্নতমানের মূলধনি যন্ত্রপাতি, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স আমদানি করতে পারবে।
এখন ইপিএর কার্যকর বাস্তবায়নে একাধিক কাঠামোগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিধিনিষেধের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা জরুরি। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে চুক্তিটি উভয় দেশের জন্য লাভজনক ও টেকসই হবে না। একটি সুসংগঠিত দৃষ্টিভঙ্গি, সমন্বিত সংস্কার ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যভিত্তিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
এসব চ্যালেঞ্জের মূল কারণ বাংলাদেশে দীর্ঘ সময়ের সুরক্ষামূলক বাণিজ্যনীতি, যা উচ্চ শুল্ক ও অশুল্ক বাধায় চিহ্নিত। এই সুরক্ষা ব্যবস্থা গার্মেন্টসহ দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করলেও রপ্তানির গতিশীলতা ও বিদেশি বিনিয়োগের পথ রোধ করতে পারে। এই কাঠামো সংস্কারে উদারীকরণ ও সুরক্ষার মধ্যে সূক্ষ্ম সমন্বয় প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ইপিএ শুল্কনীতিকে কৌশলগত ও পর্যায়ক্রমিক পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দিতে পারে।
বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ ২০২৬ সালের পর জাপানে বিশেষ বাজার প্রবেশাধিকারের সুবিধা কমে যেতে পারে। এ জন্য নতুন ইপিএ কাঠামো প্রয়োজন হবে। তবে এমন সুবিধা ব্যবহারের জন্য পাল্টা সুবিধা চাওয়া হবে। বিশেষত গাড়ি ও ইলেকট্রনিক্স খাতে। দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অবস্থান রক্ষায় ধাপে ধাপে ও কৌশলগতভাবে শর্তাবলি তৈরি করতে হবে।
ইপিএ বাস্তবায়নে বড় বাধাগুলোর একটি বাংলাদেশের সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনা ও বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়নে আমাদের দক্ষতা এখনও সীমিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ঐকমত্যও বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশাসনের রক্ষণশীল মনোভাব ও সমন্বয়হীনতা সংস্কার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। দেশীয় শিল্প, বেসরকারি খাত ও নীতিনির্ধারকদের সমর্থন পেতে সুরক্ষাবাদী মনোভাব ত্যাগ করে কৌশলগত উন্মুক্ততায় যেতে হবে, যা পারস্পরিক প্রবৃদ্ধিভিত্তিক অংশীদারিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ ছাড়াও বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিবেশ সংকট আরও তীব্র করছে। নীতি নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, ২০টিরও বেশি সংস্থার জটিল ও দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং অস্পষ্ট আইন প্রয়োগ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে।
জাপানের সঙ্গে ইপিএ আলোচনায় সাফল্য অর্জনের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে তিনটি ক্ষেত্রে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক.
আলোচনা কৌশল ও দিকনির্দেশনা
জাপানের সঙ্গে ইপিএ আলোচনায় বাংলাদেশের বহুমাত্রিক কৌশল গ্রহণ করা উচিত। মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাতভিত্তিক সহযোগিতা ও অফিসিয়াল উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) কৌশলগত ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। জাপান-ফিলিপাইন ও জাপান-থাইল্যান্ড ইপিএ মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের উচিত আর্থিক বাজার ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে কর্মশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন এবং লক্ষ্যভিত্তিক খাত উন্নয়নে সহযোগিতা চাওয়া। এ ছাড়া ওডিএ তহবিল ব্যবহার করে সক্ষমতা বাড়ানোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। শুল্ক পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের মাধ্যমে শিল্প সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। কৃষি, মৎস্য, অটোমোবাইলসহ সংবেদনশীল খাতগুলোকে অধিক উদারীকৃত বাণিজ্য পরিবেশে রূপান্তরে অনুকূল শর্ত নিশ্চিত করতে হবে।
খ. বিনিয়োগ খাতের প্রস্তুতি
বাংলাদেশকে ইপিএর পূর্ণ সুবিধা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগ পরিবেশে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। নীতিমালা সংস্কার, বাণিজ্য উদারীকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডকুমেন্টেশন ও নিয়মকানুন সহজ করার মাধ্যমে রপ্তানি সময় ও ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎপ্রাপ্তি ও বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়ার সরলীকরণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। প্রপার্টি রাইটস সুসংহতকরণ, জমি অধিগ্রহণ সহজীকরণ, আইনের আধুনিকীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন, মেধাস্বত্ব আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও অর্থায়নে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণ করতে হবে।
গ. কাস্টমস সংস্কার
বাণিজ্যিক দক্ষতা বাড়ানো এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে কাস্টমস পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর অধীনে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ পূর্ণ মাত্রায় চালু করে প্রক্রিয়া সহজ ও অপ্রয়োজনীয় জটিলতা দূর করতে হবে। নতুন কাস্টমস আইন ২০২৩-এ উন্নত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পোস্ট-ক্লিয়ারেন্স অডিট ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর বিধান রয়েছে। এই বিলে ১২০ দিনের মধ্যে কাস্টমস সিদ্ধান্ত প্রদান, স্পষ্ট প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও ফি কাঠামোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও ‘ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট’ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিও এতে রয়েছে। দ্রুত এ বিল বাস্তবায়ন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে দেশের অবস্থান শক্তিশালী ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
এই ইপিএ শুধু বাণিজ্য চুক্তি নয়। এটি বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক, বহুমুখী ও সহনশীল অর্থনীতিতে রূপান্তরের কৌশলগত উপকরণ। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে ঝুঁকি যেমন বেশি, সম্ভাবনাও বিপুল। জাপানের প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাগত শক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, অপ্রকাশিত বাণিজ্য সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করতে বাংলাদেশকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইপিএর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে দেশীয় সংস্কার প্রক্রিয়ার সমন্বয়, অংশীজনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পৃক্ততা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই অংশীদারিত্বকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেলে পরিণত করতে পারে।
মাসরুর রিয়াজ: চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ; সাবেক ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক গ্রুপ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শলগত প ক স টমস পদক ষ প সহয গ ত ব যবহ র ব যবস থ পর ব শ র জন য সমন ব এলড স
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান